

ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ মামলায় গ্রেপ্তারের পর জামিনে মুক্ত অন্তঃসত্ত্বা নারী সোনালি বিবি ও তার ৮ বছরের শিশু সন্তান মো. সাব্বির শেখকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ আইসিপিতে আনুষ্ঠানিক পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদেরকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া ও দুদেশের বিএসএফ ও বিজিবি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মহানন্দা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, কুড়িগ্রামের একটি সীমান্ত দিয়ে তাদের বাংলাদেশে ‘পুশইন’ করে বিএসএফ। গত ২০ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আলীনগর মহল্লা থেকে ভারতের ওই ৬ নাগরিককে আটক করে পুলিশ। পরে সীমান্ত অনুপ্রবেশ আইনে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। তবে তাদের মধ্যে দুটি শিশু থাকায় মামলায় তাদের আসামি করা হয়নি। গত সোমবার (১ ডিসেম্বর) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান তারা। কিন্তু জামিনে মুক্তির দেড় ঘণ্টা পর আবারও ভারতের ৬ নাগরিককে হেফাজতে নিয়ে যায় পুলিশ।
আসামিপক্ষের আইনজীবী একরামুল হক জানান, সোমবার বিকেলে আদালত ভারতের ৬ নাগরিককে জামিন দেন। দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে রাত ৮টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তারা। নয়াগোলা এলাকার বাসিন্দা ফারুক হোসেনের জিম্মায় তাদের জামিন দেওয়া হয়। তিনি আটক সোনালি বিবির আত্মীয়। পরের দিন ২ ডিসেম্বর তাদেরকে জামিনদারের কাছে আবারও হস্তান্তর করে পুলিশ।
অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবিসহ চার ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে গত ৩ ডিসেম্বর বুধবার আদালতে অভিযোগ গঠনের দিন ছিল। তবে শুনানি হয়নি। আগামী ২৩ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (তৃতীয়) বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম। এ নিয়ে তিনবার অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছানো হয়।
এদিকে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিজিবি জানায়, বিএসএফের অমানবিক পুশইনের শিকার বহুল আলোচিত অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালী খাতুন ও তার পরিবারকে মানবিক দিক বিবেচনায় মহানন্দা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া উপস্থিতিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ আইসিপি দিয়ে বিএসএফের নিকট হস্তান্তর করেছে বিজিবি।
বিজিবি আরও জানায়, গত ২০ আগস্ট ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ছয়জন ভারতীয় নাগরিককে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশইন করে। পুশইনের পর উক্ত ভারতীয় নাগরিকরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করলে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেপ্তার করে। গত ২২ আগস্ট আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে এক ভারতীয় নারী সোনালী খাতুন ছিলেন ৩৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ও তার দুই জন নাবালক শিশু ছিলেন। মানবিক বিবেচনায় আদালত গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) তাদেরকে স্থানীয় জিম্মায় জামিন প্রদান করে এবং কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশনা দেন।
অন্তঃসত্ত্বা নারী ও দুই শিশুকে পুশইন করায় সৃষ্ট মানবিক ঝুঁকি এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নজরে রেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদর দপ্তর কূটনৈতিক পর্যায়ে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করে। উভয় দেশের সম্মতিতে ভারতীয় নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
হস্তান্তর শেষে মহানন্দা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সাংবাদিকদের বলেন, বিএসএফের এই অমানবিক পুশইন কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড এবং দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পুশইনের এই কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় মানবিক সংকটের সৃষ্টি করছে এবং উভয় দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার পথে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিএসএফের অমানবিক পুশইন আচরণের বিপরীতে বাংলাদেশ সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিজিবি মানবিক মূল্যবোধ, আন্তর্জাতিক আইন ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে সম্পন্ন করেছে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা, নারী ও শিশুর প্রতি সুরক্ষা এবং চিকিৎসাগত ঝুঁকি বিবেচনা করে বিজিবির এই কার্যক্রম ন্যায়, মানবতা ও দায়িত্বশীলতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিজিবি আশা করে, পুশইনসহ এ ধরনের অমানবিক ও আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী কার্যক্রম বিএসএফ বন্ধ করবে এবং ভবিষ্যতে সীমান্তে সৌহার্দপূর্ণ, মানবিক ও আইনসম্মত প্রক্রিয়া বজায় রাখবে বলেও জানান তিনি ।
মন্তব্য করুন