ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র এক দিন। শেষ মুহূর্তে রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে বিক্রি বেশ জমে উঠেছে। হাটের নির্ধারিত স্থান পার করে নগরীর মূল সড়কেও বসেছে হাট। গতকাল বুধবার বিকেলের পর থেকে হাটে ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার ও কাল শুক্রবার হবে মূল বেচাকেনা। এবার ঢাকায় গরুর আমদানিও হয়েছে অনেক। এতে দাম কিছুটা কম হওয়ায় ক্রেতারা খুশি হলেও বিক্রেতারা হতাশ। তারা বলছেন, বড় আকৃতির গরু বিক্রি হচ্ছে না। দরকষাকষির যে অবস্থা, গরুর ব্যাপারীদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে ঈদের আগের রাতে। কেউ হাসবেন, কেউ বা ভালো দাম না পেয়ে পশু ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন।
কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, বড় আকৃতির গরু তুলনামূলক কম বিক্রি হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ ক্রেতার চাহিদায় আছে মাঝারি ও ছোট আকৃতির গরু। বলতে গেলে এক লাখ থেকে সোয়া লাখ টাকা দামের গরুই এবার ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে গত রোববার ১৬টি গরু নিয়ে উত্তর শাহজাহানপুর পশুর হাটে এসেছেন আব্দুর রহিম মিয়া। তিনি জানান, তিস্তার চর এলাকায় নিজ খামারের ১০টি গরু, আর বাকি ছয়টি গরু কিনে এনেছেন। এর মধ্যে ১২টি গরু বিক্রি করেছেন। ছোট আড়াই মণ ওজনের গরু বিক্রি করেছেন ৭০ হাজার আর পাঁচ মণ ওজনের গরু বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায়। বাকি চারটি গরুর ২টি ৪-৫ মণ মাংস হবে। দাম হাঁকিয়েছেন ১ লাখ ৮০ হাজার। আর ছোট দুটির মাংস হবে ৩ থেকে সাড়ে তিন মণ।
একই হাটে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে ১০টি গরু এনেছেন মফিদুল ইসলাম। ৪ মাস আগে গরু কিনে মোটাতাজা করেছেন নিজের খামারে। বড় গরু দুটির মাংস হবে ৭-৮ মণ। দাম হাঁকিয়েছেন ৪ লাখ টাকা।
এই হাটে ফরিদপুর থেকে ৪০টি ছাগল এনেছেন রশিদ মিয়া। ৮-১০ কেজি ওজনের ছাগলের দাম চাচ্ছেন ২০ হাজার টাকা। তবে ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি করবেন। বড় ২৫-৩০ কেজি ওজনের ছাগলের দাম হাঁকিয়েছেন ৪০ হাজার টাকা।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে ১০টি খাসি নিয়ে এসেছেন জাহাঙ্গীর আলম। এর মধ্যে দুটি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। সবচেয়ে ছোট খাসির দাম চাচ্ছেন ১৫ হাজার টাকা। বড় ২৫ কেজি ওজনের খাসিটি ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করবেন বলে জানান তিনি।
এই হাটের ইজারাদার আনিসুর রহমান টিপু বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত থেকেই হাট জমে উঠেছে। ছোট-বড়-মাঝারি সব ধরনের গরু ১-২ লাখ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। হাটে ছাগলও এসেছে পর্যাপ্ত।’
পাশের কমলাপুর হাটটি একদিকে সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টার থেকে আশপাশের এলাকা ছাড়িয়ে গেছে। আরেকদিকে মুগদা বিশ্বরোড থেকে গোপীবাগ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে সারি সারি গরু। এই হাটে চুয়াডাঙ্গা থেকে সোমবার আটটি গরু নিয়ে এসেছেন তানভীর হাসান। এর মধ্যে চারটি গরু ছয় লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। বাকি চারটি গরুর দাম হাঁকিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। তবে ৬ লাখ টাকা হলে বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন।
লালবাগের রহমতগঞ্জ ফ্রেন্ডস সোসাইটি হাটের ইজারাদার টিপু সুলতান বলেন, ‘হাটে গরু-ছাগল বিক্রি শুরু হয়েছে। মাঝারি সাইজের গরুর বিক্রি বেশি।’
গাবতলী হাটে দেখা গেছে, সারি সারি দেশি-বিদেশি গরু-ছাগল সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। নিরাপত্তার কাজে তৎপর পুলিশ-র্যাবের সদস্যরা। হাটে ঢুকতেই চোখে পড়ে বিশাল এক তোরণ। কোরবানির পশু আনা-নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ট্রাক-পিকআপ। বুধবার দুপুরের পর থেকেই এই হাটে ক্রেতার উপস্থিতি বাড়ে।
পাবনা থেকে ১০টি গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী নাজমুল হুদা। তিনি বলেন, ‘আমার সব গরুই মাঝারি সাইজের। আজ সকালে একটা বিক্রি হয়েছে। আশা করি, ঈদের আগের দিনের মধ্যে সব বিক্রি করতে পারব। তবে অন্য বছরের তুলনায় ক্রেতারা দাম কমই বলছেন।’
ছয়টি বড় গরু নিয়ে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেন ব্যাপারী ফরিদ। তিনি বলেন, ‘আমার সব গরু বড় সাইজের। তিন দিন ধরে হাটে এসেছি। কিন্তু গরু এখনো বিক্রি হয়নি। সবাই ছবি তুলছে কিন্তু দাম বলছে না।’
মিরপুর-২ থেকে আসা আব্দুল কাদির ৯৮ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় গাবতলীর হাট থেকেই দেখেশুনে গরু কিনে কোরবানি দিই। গত বছর এই হাট থেকে গরু কিনছিলাম ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে। সেই গরু ছিল আজকের গরুর সমানই। এই বছর দামে স্বস্তি পেলাম।’
মন্তব্য করুন