ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ক্রমাগত মিথ্যাচার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। গতকাল বুধবার নগর ভবন প্রাঙ্গণে মশক নিধন কর্মসূচির উদ্বোধন করে তিনি এ কথা বলেন। পরে মেয়র পরিচয়ে করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন ইশরাক। এদিকে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুনদের শপথ নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
ঈদের ছুটি শেষে টানা চতুর্থ কর্মদিবসে ইশরাক সমর্থকদের বিক্ষোভে নগর ভবনে কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। সমর্থকরা সেখানে আসেন সকাল ১০টার দিকে, ইশরাক হোসেন আসেন দুপুর ১টার দিকে। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেওয়ার পর মশক নিধন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন তিনি। সে সময় ইশরাক একটি ফগার মেশিন নিয়ে নিজেও মশা মারার ওষুধ স্প্রে করেন। এ সময় সমর্থকরা উল্লাস করে স্লোগান দেন। এরপর বিএনপি নেতা যান নগর ভবনের সামনের সড়কে। সেখানেও নালার মধ্যে তিনি কিছুক্ষণ স্প্রে করেন। পরে নগর ভবন মিলনায়তনে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধকল্পে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ইশরাক।
পরিণতি যাই হোক, আন্দোলন চলমান থাকবে বলে ঘোষণা দিয়ে ইশরাক বলেন, নগরবাসীর দুর্ভোগ যেন আর না বাড়ে, সেজন্য পদক্ষেপ নেব। ওয়ার্ড সচিবদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভা করেছি এবং তাদের নির্দেশনা দিয়েছি, যেন প্রতিটি ওয়ার্ডে যাতে তারা জন্ম-মৃত্যু-নাগরিক সনদগুলো জমা দেন। এরপর আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সেটা দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করে যাতে নাগরিকদের হাতে পৌঁছে দেন।
আন্দোলন শুরুর পর থেকে এক সেকেন্ডের জন্যও সিটি করপোরেশনের কোনো একটি জরুরি সেবা বন্ধ করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, উপরন্তু আমরাই নিশ্চিত করেছি, যাতে এ সেবাগুলো চালু থাকে, এ সেবাগুলো নিয়ে যাতে জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি না হয়।
মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোয় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে কটাক্ষও করেন ইশরাক। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বারবার বলেছেন এখানে আইনি জটিলতা আছে, সাব-জুডিস ম্যাটার আছে। অথচ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে বিষয়টি বহু আগেই নিষ্পত্তি হয়েছে। তার পরও যদি তিনি বলেন আইনি ঝামেলা আছে, তাহলে আমি বলব, এ ধরনের মূর্খ উপদেষ্টা বাংলাদেশের ইতিহাসে কেউ কোনোদিন দেখেনি।
ফৌজদারি অপরাধ করেছেন বলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ যে অভিযোগ এনেছেন, তারও জবাব দেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, যদি আমি অপরাধ করে থাকি তাহলে কেন আপনারা আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করছেন না? কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতে? আমরা এখন ভয় পাই না। হাসিনার বিরুদ্ধে ১৭ বছর আমরা লড়াই করেছি, কারাবরণ করেছি, গুম হয়েছি, নির্যাতিত হয়েছি।
তিনি অভিযোগ করেন, মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর বিষয়টি নিয়ে সরকারও স্বৈরাচারী আচরণ করছে। তারা প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে চলেছে কীভাবে আমাদের এ আন্দোলনকে দমানো যায়। কীভাবে আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করা যায়। কীভাবে জনগণের সামনে আমাদের কার্যক্রমকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত করা যায়। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাও বিষয়টি নিয়ে ক্রমাগত মিথ্যাচার করছেন; কিন্তু তাদের এ ষড়যন্ত্র আমরা সফল হতে দিইনি।
ইশরাক হোসেন বলেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা নগর ভবনের কর্মকর্তাদের ফোন করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গাড়িতে জ্বালানি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল, জ্বালানি বন্ধ করে দিলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে। সেই দায়টা আমাদের ওপর চাপাবেন। উপদেষ্টা ও সচিব করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্মনিবন্ধন ও নাগরিকত্ব সনদে স্বাক্ষর না করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
শপথ নেওয়ার সুযোগ নেই, বললেন উপদেষ্টা: সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গতকাল উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, আপনারা জানেন, সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আমাদের আর শপথ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলাম; কিন্তু কমিশন নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বলছে, তারা গেজেট প্রকাশ করেনি—অথচ ১৫ দিন পর এসে জানিয়েছে। তখন গেজেটের কার্যকারিতা শেষ হয়ে গেছে, ২০ দিন পার হয়ে গেছে। একদিকে একটি অকার্যকর গেজেটকে আবার সিদ্ধান্ত হিসেবে ধরা হয়েছে—এটা আমাদের জন্য খুব বিভ্রান্তিকর।
আসিফ বলেন, আপিল বিভাগ যেভাবে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, তাতে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ গেজেটটি কার্যকর থাকলেও ২০ দিন আগেই সেটি অকার্যকর হয়ে গেছে। অন্যদিকে আমাদের যে সিটি করপোরেশন, তার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। আমি নিজে আইনজ্ঞ না, তবে আমাদের মাননীয় আইন উপদেষ্টা বিষয়টি খুব ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি একজন প্রফেসর ও আইন বিশেষজ্ঞ। আইন মন্ত্রণালয় দেখেন, তিনি বিষয়টি যেমন ব্যাখ্যা করেছেন, আমি যতটুকু বুঝেছি, তা-ই বলছি।
তিনি বলেন, পরবর্তী যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে মনে হয়েছে—আমরা আরও পরিপক্বভাবে বিষয়টি সামাল দিতে পারতাম। এখন দেখা যাচ্ছে, এক ধরনের অচলাবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে সিটি করপোরেশন। আগের মাসের তুলনায় গত মাসে নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হয়েছে। এখন পুরোপুরি দখলদারির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। করপোরেশনের অফিসগুলোও এক ধরনের দখলে চলে গেছে, ফলে আমরা সেবা দিতে পারছি না।
বিএনপির সঙ্গে সরকারের সম্পর্কে টানাপোড়েন নেই দাবি করে উপদেষ্টা বলেন, আপনারা জানেন, এখন আর আগের মতো টেনশন নেই। বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। তাতে সম্পর্ক অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। এই সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থা ধরে রাখতে হলে সব পক্ষকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
মন্তব্য করুন