আজ ২১ জুন, আন্তর্জাতিক যোগ (ইয়োগা) দিবস। ‘যোগব্যায়াম’ নামে পরিচিত এই প্রাচীন অনুশীলন ভারতীয় উপমহাদেশে জন্ম নিয়ে এখন বৈশ্বিক স্বাস্থ্যচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে সিন্ধু সভ্যতার যুগে শুরু হওয়া যোগচর্চা শুধু শারীরিক সুস্থতা নয়, বরং মানসিক ভারসাম্য ও আত্মিক প্রশান্তির ক্ষেত্রেও এক পরীক্ষিত উপায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিনটি পালন করা হচ্ছে যথাযথ মর্যাদায়। এবারের প্রতিপাদ্য—‘এক পৃথিবী, এক স্বাস্থ্যের জন্য যোগ’—এই অনুশীলনের বৈশ্বিক তাৎপর্য ও সর্বজনীনতা তুলে ধরা হয়েছে।
যোগ অনুশীলন শরীর ও মনের একটি সমন্বিত শৃঙ্খলা। হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, স্ট্রোকসহ নানা অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে এটি কার্যকর একটি স্বাস্থ্যচর্চা পদ্ধতি হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। পাশাপাশি মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মতো মানসিক সমস্যার প্রতিকারেও যোগব্যায়াম সমান কার্যকর বলে বহু গবেষণায় প্রমাণিত।
বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, যোগচর্চাকে ধর্মীয় গণ্ডিতে আবদ্ধ না করে এটি একটি জীবনধর্মী, স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস হিসেবে দেখা প্রয়োজন। এ বিষয়ে হারমনি ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক অমিতাভ ভট্টাচার্য বলেন, ‘সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সবারই নিয়মিত যোগচর্চা করা উচিত। কিন্তু দেশে এর প্রচার ও প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। অনেকে এটিকে ধর্মীয় আচার কিংবা শুধু মেডিটেশনের পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যোগ একটি মনো-দৈহিক শরীরচর্চা পদ্ধতি, যা স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর এবং কোনো ধর্মীয় নির্দেশনার সঙ্গে অপরিহার্যভাবে যুক্ত নয়।’
ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে, পতঞ্জলি নামক এক প্রাচীন ভারতীয় ঋষিকে যোগের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি যোগসূত্র (Yoga Sutra) রচনা করে এই অনুশীলনকে একটি পদ্ধতিগত কাঠামো দিয়েছেন। পরে ১৮৯০-এর দশকে স্বামী বিবেকানন্দ পশ্চিমে যোগচর্চা ও তার দার্শনিক তাৎপর্য তুলে ধরেন, যিনি এটিকে ‘মনের বিজ্ঞান’ নামে আখ্যা দিয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি যোগচর্চার গুরুত্বকে আরও সংহত করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তার ভাষণে ২১ জুনকে ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ ঘোষণার প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাবটি মাত্র ৭৫ দিনের মধ্যে, ২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভারতের তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি অশোক মুখার্জি উপস্থাপন করেন এবং ১৭৫টি দেশের সমর্থনে ভোটাভুটি ছাড়াই তা গৃহীত হয়।
এরপর ২০১৫ সালের ২১ জুন থেকে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে—একটি সুস্থ, সচেতন ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে।
আজকের দিনে, যখন বিশ্বজুড়ে মানসিক চাপ, প্রযুক্তি নির্ভরতা এবং জীবনযাত্রার অনিয়ম বেড়েই চলেছে, তখন যোগচর্চা হতে পারে এক মানবিক ও স্বাস্থ্যসম্মত প্রতিক্রিয়া—যেখানে শরীর, মন ও আত্মা একীভূত হয় সুস্থতার পথে।
মন্তব্য করুন