অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ছেলে হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেছেন শহীদ সরোয়ার জাহান মাসুদের মা বিবি কুলসুম। প্রয়োজনে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। তার আকুতি—জীবদ্দশায় যেন ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেন।
আজও ঘটনার মূল অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার বা বিচার কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শোকাহত এই মা।
বিবি কুলসুম বলেন, ‘ছেলেকে হারিয়ে আমি বেঁচে আছি শুধু ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়। যারা গুলি করে আমার ছেলেকে কেড়ে নিয়েছে, তারা যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়।’
সরোয়ার জাহান মাসুদ ছিলেন পরিবারের বড় ছেলে। অসুস্থ বাবাকে প্রবাস থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু সেই স্বপ্ন থেমে গেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে।
গত ৪ আগস্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকায় আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত হন মাসুদ। তিনি ফেনী সরকারি কলেজের বিএসএস প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
মাসুদের জন্ম ২০০৩ সালের ২৩ নভেম্বর, ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর জয়লস্কর মীরবাড়িতে। ২০২০ সালে সিলোনিয়া হাইস্কুল থেকে এসএসসি ও ২০২২ সালে দাগনভূঞা সরকারি ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। বাবা শাহজাহান টিপু প্রবাসী, মা বিবি কুলসুম একজন গৃহিণী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন মাসুদ ও তার ভাই মাসুম। ঘটনার দিন সকালে মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নেন তারা। দুপুর ২টার দিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায় ও গুলি করে। মাসুদের বুকে দুটি ও হাতে একটি গুলি লাগে।
আহত মাসুদকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করলেও পথে দাগনভূঞার বেকের বাজার এলাকায় বাধা দেয় যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরিবারের সদস্যদেরও মারধর করা হয়। পরে হাসপাতালে পৌঁছলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে যাওয়ার সময়ও বাধা দেওয়া হয়। অবশেষে রাত ১টায় মরদেহ হস্তান্তর করা হয় এবং রাতেই দাফন করতে বলা হয় পরিবারকে।
এ ঘটনায় মাসুদের মা বিবি কুলসুম ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে প্রধান আসামি করে ১৩৪ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ জনের বিরুদ্ধে দাগনভূঞা থানায় হত্যা মামলা করেন।
মাসুদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র বুকে জড়িয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন বিবি কুলসুম। ছেলের মৃত্যুর শোক এখনো সহ্য করতে পারছেন না তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেনী প্রতিনিধি ওমর ফারুক শুভ বলেন, ‘মাসুদ আমার সহযোদ্ধা ছিল। ৩ আগস্ট সে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছে, আর ৪ আগস্ট সে গুলিতে শহীদ হয়েছে। আমি তার মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। মাসুদ হত্যার দ্রুত বিচার চাই।’
ফেনী মডেল থানার ওসি শামসুজ্জামান কালবেলাকে জানান, ‘এ মামলায় এরই মধ্যে কয়েকজন আসামিকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চার্জশিট দাখিল করা হবে।’
মন্তব্য করুন