গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’-এর জুম মিটিংয়ে অংশ নেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫৭৭ জন। মিটিংয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’-কে যুদ্ধের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। তিনি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ডা. রাব্বী আলমের নেতৃত্বে কীভাবে সারা দেশে এ ব্রিগেড গড়ে উঠেছে, কোন জেলার দায়িত্বে কে কীভাবে কাজ করছে—তা নিয়েও মিটিংয়ে বর্ণনা দেওয়া হয়। এ সময় ব্রিগেডের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ ও মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার শপথ নেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত ও গৃহযুদ্ধের ঘোষণা দেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে মামলায় চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন্স) মো. এনামুল হক চার্জশিট দাখিল করেন। আদালত চার্জশিট গ্রহণ করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন এবং গ্রেপ্তারের অগ্রগতি জানাতে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারণ করেন।
চার্জশিটে পেনাল কোডের ১২১, ১২১(ক) ও ১২৪(ক) ধারায় আসামিদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২১ ধারায় শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও জরিমানা; ১২১(ক) ধারায় যাবজ্জীবন বা সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা এবং ১২৪(ক) ধারায় যাবজ্জীবন, যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড বা তিন বছর কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। এসব ধারা জামিনযোগ্য বা আপসযোগ্য নয়। মামলায় ২৮৪ জন সাক্ষী করা হয়েছে, তাদের সবাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. শামসুদ্দোহা সুমন কালবেলাকে বলেন, শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পরও নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন। তিনি নেতাকর্মীদের মাধ্যমে ড. ইউনূস সরকারকে উৎখাত ও দেশে গৃহযুদ্ধ বাধাতে চান এবং অনলাইনে এভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সিআইডি চার্জশিট দিয়েছে, আর রাষ্ট্রপক্ষ সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করবে।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, অনলাইনভিত্তিক সংগঠন ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’-এর এই মিটিং পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. রাব্বী আলম। সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্রামেগঞ্জে সব জায়গায় সে (ড. মো. ইউনূস) এজেন্ট লাগিয়ে দিয়েছে। এদের দিয়ে আওয়ামী লীগের যাকে পাওয়া যাবে, ঘরে ঢুকে হত্যা করবে। মামলা বা গ্রেপ্তার করবে না, এখন হত্যা করবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করতে এলে বসে থাকবে? উপযুক্ত জবাব দিতে হবে।’
মিটিংয়ে ডা. রাব্বী আলম শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে সশস্ত্র যুদ্ধের কথা বলেন। উজিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল জানান, রাব্বী আলমের নেতৃত্বে তারা শপথ নিয়েছেন প্রয়োজনে রক্ত ও জীবন দেবেন, তবুও শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাবেন। বরিশাল উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মধু বলেন, তারা জীবনের বিনিময়ে হলেও শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনবেন ও পুনরায় শাসনভার গ্রহণ করাবেন, রাব্বী আলম তাদের সুসংগঠিত করেছেন। তৃণমূল জাতীয় শ্রমিক লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পারভেজ খান ইমন বলেন, শেখ হাসিনা ও রাব্বী আলমের নেতৃত্বে তারা ঢাকার বিভিন্ন কর্মসূচি সফল করেছেন এবং ভবিষ্যতে জয় বাংলা ব্রিগেডের মাধ্যমে গেরিলা যুদ্ধ করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফেরাবেন।
ভাঙ্গুরা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আজিদা পারভীন বলেন, তিনি জয় বাংলা ব্রিগেডে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে আছেন এবং আওয়ামী লীগ সদস্যদের নিয়ে আলাদা গ্রুপ খুলেছেন। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান রূপক জানান, ৬৪ জেলায় কার্যক্রম চলছে, নির্দেশ পেলেই যুদ্ধে নামবেন। চার্জশিটে উল্লেখ, শেখ হাসিনা অংশগ্রহণকারীদের বর্তমান সরকারকে উৎখাতের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন এবং অংশগ্রহণকারীদের ভয়েস রেকর্ডে দেখা যায়, তারা গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী বানাতে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
এ কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ১২১, ১২১(ক) ও ১২৪(ক) ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারায় সরকার কর্তৃক বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।
২০২৫ সালের ২৭ মার্চ শেখ হাসিনাসহ ৭৩ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. এনামুল হক। তদন্ত শেষে মামলার ৭৩ জনের মধ্যে ৩০ জন এবং তদন্তে শনাক্ত হওয়া আরও ২৫৬ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ৪৩ জনের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন