চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

৪১ শতাংশ মাশুল বৃদ্ধি চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধের ষড়যন্ত্রের অংশ

দাবি ব্যবসায়ীদের
৪১ শতাংশ মাশুল বৃদ্ধি চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধের ষড়যন্ত্রের অংশ

৪১ শতাংশ মাশুল (ট্যারিফ) বৃদ্ধি চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করার একটি ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে এই মাশুল স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী নেতারা। অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার পর সবার সম্মতিতে বন্দরের মাশুল নির্ধারণ করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা। গতকাল রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরে অস্বাভাবিক ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রতিবাদে মহানগরীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী নেতাদের সমন্বয় সভায় তারা এসব কথা বলেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ী’ ব্যানারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এসএম আবু তৈয়বের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন এশিয়ান গ্রুপের প্রধান এম এ সালাম। সভায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমীরুল হক বলেন, ‘৪১ শতাংশ হারে ট্যারিফ বাড়িয়ে দেওয়া হলো। হঠাৎ এটা কেন? মোংলা বন্দরে তো বাড়েনি, পায়রায় তো বাড়েনি, তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরে কেন? এই ট্যারিফ বাড়ানো একটা ষড়যন্ত্র। আমাদের বন্দরকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে স্বাধীন পরিচালক আছে, তাহলে বন্দরে নেই কেন? যারা বন্দর ব্যবহার করে, তাদের কথা শুনবে না, ট্যারিফ বাড়াবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদের কেন ট্যারিফ বাড়াতে হবে? এটা তাদের কাজ?’

তিনি বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করছি, কচি খোকা নই। আমরা ব্যবসায়ী, কারও গোলাম নই। আমার টাকায় বন্দর চলবে, আর আমার কথা না শুনে ট্যারিফ বাড়িয়ে দেবে, তা চলবে না। এই যে ট্যারিফ বাড়াল, এটার পেমেন্ট তো ব্যবসায়ীরা করবে না, জনগণকে করতে হবে।’ বন্দরকে কস্ট বেইজড ট্যারিফ করার আহ্বান জানান তিনি।

বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলাপের আগ পর্যন্ত ট্যারিফ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বন্দরকে হঠাৎ করে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়াতে হবে কেন? এটা আমাদের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তো এত জবাবদিহি নেই যে, তাদের বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর জন্য উঠেপড়ে লাগতে হবে! ট্যারিফ বাড়ানোর জন্য কাদের এত বেশি আগ্রহ, তাদের শনাক্ত করতে হবে। বন্দর নিয়ে খেলা শুরু হয়েছে। এ খেলা খেলতে দেওয়া হবে না।’

পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সেলিম রহমান বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি দুটোই করেন। ভিয়েতনাম, ভারত, মালয়েশিয়ার চেয়ে আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যয় বেশি। তারপর আবারও ট্যারিফ বাড়ানো হচ্ছে। সবচেয়ে বড় আঘাতটা আসবে পোশাক শিল্পের ওপর। ২৯ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় চট্টগ্রাম বন্দরকে কখনো লস করতে দেখিনি। তাহলে বন্দরে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ কেন বাড়াতে হবে?’

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহসভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ট্যারিফ বাড়ানোর বিরুদ্ধে। এটা বাড়াতে হলে জাতীয় সংসদ বাড়াবে। ট্যারিফ বাড়ানোর পর আমাদের প্রোডাকশন খরচ বেড়ে যাবে। পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে, দাম বাড়বে। তখন এদেশের গার্মেন্টস থেকে বায়ার আর পোশাক কিনবে না। ভিয়েতনাম, ভারতে চলে যাবে তারা।’

বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এম এ সালাম বলেন, ‘বন্দর ব্যবসা করে না, সেবা দেয়। বন্দর লাভ করে। আমরাও চাই না বন্দর লস করুক। কিন্তু তাদের বুঝতে হবে এটা ট্যারিফ বাড়ানোর সময় নয়। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আমরা ভালো অবস্থানে নেই। আমরা চাই না বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর ফলে আমাদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হয়। এক মাসের জন্য ট্যারিফ আদায় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এক মাস সময় শেষ হচ্ছে। আমরা চাই, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা হোক, আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন বাড়তি ট্যারিফ আদায় করা না হয়।’

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘দেশে প্রধান বন্দর নদীনির্ভর। বন্দরের মাশুল বাড়ানো নিয়ে আমাদের ক্ষোভ আছে। আমরা বলেছি সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়াতে। ১৯৮৬ সালে ডলার ছিল ৩০ টাকা। এখন ডলারের দাম চারগুণ বেড়েছে। শিপিং এজেন্ট ফ্রেইট বাড়িয়েছে। ৪১ শতাংশের মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। ২০ ফুটের কনটেইনারে ১২-১৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হবে। আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ চাই, আমরা স্বনির্ভর দেশ গড়ে দেব।’

বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিপিং এজেন্ট ফি বাড়াবে। ভিয়েতনামের তিনগুণ খরচ হবে চট্টগ্রাম বন্দরে। আজকের দিনে ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলার কোনো সংগঠন নেই। ব্যবসায়ী সমাজ বিচ্ছিন্ন, হতাশাগ্রস্ত। সরকারি আমলারা এখন চট্টগ্রাম চেম্বার চালাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতি, রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ীদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নভেম্বরে গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী

ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন, নতুন ঘর দিচ্ছেন তারেক রহমান

অতিরিক্ত সিম নিয়ে বিটিআরসির জরুরি বার্তা

‘শেখ হাসিনার করুণ পরিণতির বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন সালাউদ্দিন কাদের’

অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা

প্রাথমিকে গানের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যা বললেন ধর্ম উপদেষ্টা

অনলাইন ও এসএমএসে এইচএসসির ফল জানবেন যেভাবে

খেলা চলাকালে মাঠেই প্রাণ হারালেন বাঁহাতি পেসার

গণহত্যায় জড়িতদের বিচার দৃশ্যমান না হলে নির্বাচন পেছাতে পারে : সারজিস

হাদিসের ভাষায় ভালো মৃত্যুর ১৫ আলামত

১০

বিতর্কিতরাই পিআরের নামে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে : আমান

১১

টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, দেখে নিন একাদশ

১২

সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে ‌কারাগার ঘোষণা

১৩

ঢাকা বিভাগে রাখার দাবিতে যমুনা সেতু মহাসড়ক অবরোধ

১৪

খেলাফত মজলিসের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

১৫

মাত্র ১৪ বছরে সহঅধিনায়কের দায়িত্ব পেলেন বৈভব

১৬

যারা শিবিরের বিরোধিতা করেছিল, তারা আজ ইতিহাস : জাহিদুল ইসলাম

১৭

পিআর পদ্ধতিতে ভোটে জনগণের ক্ষমতা খর্ব হবে : ফখরুল

১৮

তিনজনে এক নারী স্বামীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার : বিবিএস

১৯

ভারতের অধিনায়ক শান মাসুদ, হঠাৎ এমনটা কেন বললেন ধারাভাষ্যকার

২০
X