চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার (সিইপিজেড) একটি চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরির কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সিইপিজেডের ১ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কের ‘অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড’ নামের ওই কারখানায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে আগুন লাগে। অ্যাডামস তোয়ালে ও ক্যাপ এবং জিহং মেডিকেল সার্জিক্যাল গাউন তৈরির কারখানা। তবে আগুনের ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর নেই।
আগুন নেভাতে সিইপিজেড, বন্দর, কেইপিজেড, আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি এবং নৌবাহিনীর চারটি ইউনিট কাজ করছে। রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৭ ঘণ্টায়ও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, আগুন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো আটতলা ভবনে। আশপাশের ভবনেও আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আগুনের তীব্রতা এত বেশি যে, আশপাশে লোকজনের অবস্থান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে কারখানা থেকে ২০-২৫ জন শ্রমিককে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সেখানে আর কোনো শ্রমিক-কর্মচারী আটকে আছেন কি না, সেটা খুঁজে দেখা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, শুরু থেকেই সিইপিজেডে সেনাবাহিনীর একটি নিয়মিত টিম ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নৌবাহিনীর ৪টি ইউনিট এবং পরবর্তী সময়ে বিমানবাহিনীর একটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়েছে। কারখানাটিতে প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দিয়েছে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং সিইপিজেডের সেনাবাহিনীর টিমও। আটতলা ভবনটির অষ্টম তলায় প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর সেই আগুন সপ্তম ও ষষ্ঠ তলায় ছড়িয়ে পড়ে।
সিইপিজেড সূত্র জানায়, ভবনটিতে মোট ৭০০ শ্রমিক কাজ করেন। তাদের কেউ আহত হননি। সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সুবাহান বলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কারও হতাহত হওয়ার আশঙ্কা নেই। আগুন নিয়ন্ত্রণে নৌবাহিনীর ফায়ার ফাইটার ইউনিট এখানে কাজ করছে। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের অনেক ইউনিট শুরু থেকেই আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিস ও নৌবাহিনীর সদস্য আগুন নেভাতে কাজ করছেন। চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে ঘন কালো ধোঁয়া। আগুন ধীরে ধীরে ছয় ও পাঁচতলায় ছড়িয়ে পড়ছে। আগুনকবলিত ভবনটির চারপাশ ঘিরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। অহেতুক লোকজন যাতে ভিড় করতে না পারে, সে চেষ্টা করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে প্রচুর পরিমাণে দাহ্য বস্তু থাকতে পারে বলে ধারণা ফায়ার সার্ভিসের।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের উপ-পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আটতলা ভবনটির ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। দ্রুত আগুন নেভানের সব ধরনের সরঞ্জাম নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো কাজ করছে। আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আগুনের যে অবস্থা, ভেতরে ঢোকা আমাদের জন্য কঠিন। তারপরও পাঁচতলা পর্যন্ত আমরা গিয়েছি। ওইখানে আমাদের টিম কাজ করছে। এখন আমরা যেটা চাচ্ছি, আগে আমরা ছয়তলা, সাততলা এটার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনব। এটার চতুর্দিকে ইলেকট্রিকের লাইন আছে, ভেতরে যাওয়ার কোনো স্পেস নেই।
ভবনের চারপাশ ঘিরে পানি ছিটালেও আগুন কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। জসিম উদ্দিন বলেন, বিশেষ করে ভবনের উত্তরদিক থেকে ক্রমেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আগুনের তীব্রতা এত বেশি যে আমাদের কাছে যেতে বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অলরেডি ২০-২৫ জনের মতো আমরা রেস্কিউ করেছি। আর কেউ আছে কি না সেটা আমরা খুঁজে দেখছি। আগুন যতক্ষণ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আসবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না। আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। যেহেতু এটা টেক্সটাইল কারখানা, এখানে প্রচুর পরিমাণে দাহ্য বস্তু আছে।
জি হং মেডিকেল কোম্পানির শ্রমিক মোছা. শিপা জানান, যে জায়গা থেকে আগুনের সূত্রপাত, সেখানে সাধারণত নারীদের যাওয়া নিষেধ। তিনি পাঁচতলায় কাজ করতেন। দুপুরে খাওয়ার পর তিনি ‘আগুন, আগুন’ বলে চিৎকার করে ওপর থেকে অনেককে নামতে দেখেন। এ চিৎকার শুনে তিনিসহ সবাই দৌড়ে নিচে নেমে আসেন।
ইপিজেড থানার ওসি মোহাম্মদ জামির হোসেন জিয়া কালবেলাকে বলেন, আগুন লাগার খবরে সিঁড়ি দিয়ে হুড়োহুড়ি করে নারীদের নামতে দেখা গেছে। গুরুতর তেমন কেউ আহত হননি।
মন্তব্য করুন