

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ‘ফ্যাসিস্ট’ দমনে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ আরও জোরদার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও পয়েন্টে পুলিশের তল্লাশি চৌকি (চেকপোস্ট) বাড়ানো হয়েছে। সন্দেহজনক গাড়ি ও ব্যক্তিদের দেখলেই পুলিশ তল্লাশি করছে। এর বাইরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট এলাকা বা বাড়িতেও চালানো হচ্ছে অভিযান। ডেভিল হান্ট অভিযানে গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত ১৩৯৮ জন ‘ডেভিল হান্ট’ হয়েছে। পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য মিলেছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, নিয়মিত চেকপোস্টের বাইরে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই পুলিশের চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। এসব চেকপোস্ট অতিক্রম করা মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ির দিকে কড়া নজর রাখছেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। সন্দেহ হলেও গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের চন্দ্রিমা থানা এলাকা, সাতকানিয়া থানা এলাকা, বগুড়া ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকার চারটি চেকপোস্টে তল্লাশি চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২১ হাজার ৬৩০টি মোটরসাইকেল ও ১৯ হাজার ৯৪টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। সড়কে এ ধরনের অভিযান চলমান রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র এ. এইচ. এম. শাহাদাত হোসাইন কালবেলাকে বলেন, ‘চেকপোস্টে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি কার্যক্রম পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ। তবে বিভিন্ন সময়েই তা কমানো বা বাড়ানো হয়। বর্তমানে দেশজুড়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ চলমান রয়েছে। এজন্য সারা দেশেই চেকপোস্টে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের আরেক কর্মকর্তা বলেন, মূলত তারা চলমান অভিযানে অপরাধীদের একটা বার্তা দিতে চান—অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও আশ্বস্ত করতে চাচ্ছেন, সড়কে দিনে-রাতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। এজন্যই ডেভিল হান্টের মধ্যে সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশি চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। তবে কোনোভাবে সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন, মাঠ পুলিশকে সে বার্তা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগরীর নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঢাকা মহানগর পুলিশ বুধবার থেকে চেকপোস্ট ব্যবস্থা বেগবান করেছে। গতকাল বিকেল থেকেই রাজধানীর বসিলা, বাবুবাজার, পোস্তগোলা ব্রিজ, মাতুয়াইল ইউ-লুপ, স্টাফ কোয়ার্টার, বাসাবো রাস্তায় (কমলাপুর), গাবতলী, ৩০০ ফিট, আব্দুলাহপুর ব্রিজ, কামারপাড়া, ধৌড় ব্রিজসহ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট চালানো হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, গত মঙ্গলবার সকাল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মোট ১ হাজার ৯২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ‘ডেভিল’ ১৩৯৮ জন এবং ৫২৩ জন বিভিন্ন মামলার আসামি ও ওয়ারেন্টের আসামি। ওই সময়ের মধ্যে চলমান অভিযানে একটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, একটি বন্দুক, ৩ রাউন্ড গুলি, ৩ রাউন্ড কার্তুজ, ১১টি দেশীয় অস্ত্র ও ১২টি ককটেল উদ্ধার করা হয়।
গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পল্টনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে আততায়ীরা। ওই ঘটনার পরপরই জাতীয় নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করতে সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কোর কমিটির বৈঠকে ফের যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান চালুর সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ওই দিন রাত থেকেই ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ শুরু হয়।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ শুরুর পর এ পর্যন্ত ৩ হাজার ২৬৪ জন ডেভিল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ অভিযানের প্রথম ৩ দিনে গ্রেপ্তার করা হয় ১৮৬৬ জনকে।
এর আগে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ১৫ থেকে ১৬ জন শিক্ষার্থী হামলার শিকার হন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির বিক্ষোভের মুখে গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে অপারেশন ডেভিল হান্ট অপারেশন শুরু হয়। এই অভিযান এক পর্যায়ে ঝিমিয়ে পড়ে। তবে ওসমান হাদিকে গুলির পর ফের অপারেশন ডেভিল হান্ট জোরদারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন