আইনবহির্ভূতভাবে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর কাছে পাওনা ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকার দাবিনামা বাতিল করার কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দুই কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যানের নির্দেশে গঠিত এ-সংক্রান্ত্র চার সদস্যের কমিটি বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাটের সাবেক কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী এবং বিভাগীয় প্রতিনিধি উপকমিশনার (বর্তমানে যুগ্ম কমিশনার) মুহাম্মদ ইমতিয়াজ হাসানের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে। তবে এনবিআরের এ পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, সাব-জুডিশ বিষয়ে এনবিআর কীভাবে শোকজ করে, তা তাদের বোধগম্য নয়। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর কাছে ভ্যাটের ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকা পাওনার চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করে এলটিইউ ভ্যাট। পরে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটের একটি কমিটি বাতিল করে দাবিনামা। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ভ্যাট হবে না মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে। এই পাওনা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে এনবিআর। কমিটি সবার সঙ্গে কথা বলে এবং বিচার-বিশ্লেষণ করে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর কাছ থেকে এই টাকা আদায়ের নির্দেশ দেয়। এনবিআর চেয়ারম্যানের নির্দেশে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে কোনো কর্মকর্তার অবহেলা বা দায় আছে কি না, তা নিয়ে আরও দুটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর বিষয়টি আইনবহির্ভূতভাবে এডিআরে নিয়ে আসা হয়েছে বলে মতামত দেয় এই কমিটি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন দপ্তরপ্রধান অর্থাৎ এলটিইউ ভ্যাটের সাবেক কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী এবং বিভাগীয় প্রতিনিধি (বর্তমানে যুগ্ম কমিশনার) মুহাম্মদ ইমতিয়াজ হাসানকে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেয়। ইতোমধ্যে শোকজের এই চিঠি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে এনবিআর সূত্র। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তৎকালীন কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী।
এনবিআর সূত্র জানায়, বিএটির বিষয়ে শুল্ক ক্যাডারের এই দুই কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। ব্যাখ্যা চাওয়া এই চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর রিট পিটিশন ১০৯৬/২০১৭-এর বিষয়ে বলা হয়েছে এবং রিট পিটিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়ে এনবিআরের মতামত চাওয়া হয়েছে। আর বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা মূসক আইন ও বিধির আলোকে পুনর্পর্যালোচনার জন্য চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির পর্যালোচনায় ভ্যাট আইনের ধারা-৪১ গ এর (১) বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা এডিআরের পরিধি সুস্পষ্ট উল্লেখ করে দেওয়া আছে এবং ধারা ৪১ গ(২) এ আইনগত বিষয়ে ব্যাখ্যা সম্পর্কিত বিরোধকে এডিআরের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি সমীচীন নয় বলেও মতামত দেয় এনবিআরের এই পর্যালোচনা কমিটি।
তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, ভ্যাট আইনে তামাক পাতাতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া আছে। আর বিএটিকে যারা তামাক পাতা সরবরাহ করে, তারা প্রতিষ্ঠানটির রেজিস্টার্ড কৃষক। এখানে আলাদা করে কোনো জোগানদাতা নেই। তাই এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট হবে না। এ ছাড়া বিষয়টি সাব-জুডিশ হওয়া সত্ত্বেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আসলে বোধগম্য নয় বলেও মনে করেন তারা।
এলটিইউ ভ্যাটের এডিআর কমিটির সহায়তাকারী উদয়ন বড়ুয়া দৈনিক কালবেলাকে বলেন, এনবিআর একটা সাব-জুডিশ বিষয়ে কীভাবে ব্যবস্থা নেয়, বোধগম্য হয় না। উভয়পক্ষ এডিআরে সম্মত হলে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। উভয়পক্ষ রাজি না হলে আদালতে যাবে। এ ক্ষেত্রে আদালতের সিদ্ধান্তই সর্বশেষ সিদ্ধান্ত বলেও মনে করেন এনবিআরের সাবেক এই কর্মকর্তা।
সূত্র আরও জানায়, এনবিআরের ভ্যাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন সদস্যের নেতেৃত্বে করা এই ৪ সদস্যের কমিটি মনে করে, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো উৎসে কর্তনকারী সত্তা হিসেবে এই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কোনো উৎপাদকের কাছ থেকে বা কোনো ব্যবসায়ীরে কাছ থেকে কোনো পণ্য প্রযোজ্য মূসক চালানসহ ক্রয় করলে উৎসে মূসক হবে না। তবে উৎপাদনকারী বা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে যথাযথ মূসক চালানসহ পণ্য না করলে মূসক কর্তনের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। আর বিধানের লঙ্ঘন হওয়ায় কর্মকর্তাদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে (এলটিউ ভ্যাটের সাবেক উপকমিশনার) ঢাকা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মুহাম্মদ ইমতিয়াজ হাসান বিচারাধীন বিবেচনায় এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।