মাহমুদুল হাসান মুনজু, সারিয়াকান্দি
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ী ইউনিয়নের হরিণা গ্রাম। এ গ্রামেই রয়েছে দুইশ বছরের পুরোনো একটি ধ্বংসপ্রায় জমিদারবাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দারা এটিকে কাশি রায়ের জমিদারবাড়ি হিসেবে চেনেন। এক সময় বাড়িটি ছিল প্রাচীরঘেরা। চারপাশে ছিল বিশাল আকৃতির চারটি লোহার দরজা। বাড়ির ভেতরের দক্ষিণাংশে ছিল একটি প্রাচীন দুর্গামন্দির। এর দেয়ালে ছিল নানা ধরনের কারুকাজ। দুর্গামন্দির হলেও সেখানে সব ধরনের পূজারই আয়োজন হতো।
এই মন্দিরে সে সময় সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হতো বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা মজিবর রহমান। সে উপলক্ষে পাশের হরিণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বসত শ্রী পঞ্চমীর মেলা। জমিদাররা না থাকলেও এখনো প্রতিবছর তাদের প্রচলিত শ্রী পঞ্চমীর মেলা বসে ওই গ্রামে।
জানা যায়, জমিদার কাশি প্রসাদ রায়ের জমি ছিল প্রায় আড়াই হাজার বিঘা। এরপর উত্তরাধিকার সূত্রে এ অঞ্চলে জমিদারি করেন তারই দুই ছেলে এবং দুই ভাতিজা। তারা হলেন উপন্দ্রে লাল রায় ও রাজেন্দ্র লাল রায় এবং যোগেন রায় ও দেবেন রায়। তবে এ অঞ্চলের মূল জোতের মালিক ছিলেন নাটোরের জমিদার। ভারত বিভক্তির আগে খাজনা বাকি পড়ায় নিলামের মাধ্যমে কাশি রায়ের কাছ থেকে জমিদারি প্রত্যাহার করে নেন নাটোরের জমিদার। এরপর তারা ভারতে চলে যান। মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত বাড়িটিতে কেউ থাকতেন না। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এই বাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়।
তবে দীর্ঘসময় পরিত্যক্ত থাকা ও সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে চলছে ঐতিহ্যবাহী ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসংবলিত জমিদারবাড়িটি। দখলের উদ্দেশ্যে দফায় দফায় বাড়িটি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছিল স্বার্থান্বেষী মহল। পরে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে পিছু হটেন তারা।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, মুক্তিযুদ্ধের পর ওই বাড়ির এক সময়ের কর্মচারী সিফাত প্রামাণিকের ছেলেরা সেটি কিনে নিয়েছেন বলে এলাকায় প্রচার করেন। তখন তারাই সেখানে বসবাস শুরু করেন। একপর্যায়ে (১৫ বছর আগে) তারা বাড়ির ভেতরের প্রাচীন মন্দির, জমিদারের বৈঠকখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে ফেলেন। তবে মন্দিরের উত্তর পাশের দেওয়াল ও গভীর পানির কুয়াটি অক্ষত আছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এটি এলাকার বিশাল ঐতিহ্য। যেহেতু এতদিন বিষয়টি আলোচনায় আসেনি, তাই এ ব্যাপারে কেউ মাথাও ঘামায়নি। এখন সরকারের উচিত বাড়িটি সংস্কার করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
এ ব্যাপারে সারিয়াকান্দি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক জানান, তিনি কিছুদিন হলো উপজেলায় ভারপ্রাপ্ত ইউএনও হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। এ বিষয়ে তেমন কিছু জানা নেই। যদি বেদখল হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেইসঙ্গে এটিকে সংরক্ষণের জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে চিঠি দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন