শাহনেওয়াজ খান সুমন
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৩, ১০:৪৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকায় জমজমাট পশুর হাট, দামে অসন্তুষ্ট ক্রেতা

ঈদুল আজহা
রাজধানীতে সড়কের পাশাপাশি নদী পথেও কোরবানির পশু আনা হচ্ছে।
রাজধানীতে সড়কের পাশাপাশি নদী পথেও কোরবানির পশু আনা হচ্ছে।

আফতাবনগর হাটের ফটক থেকে গরু নিয়ে ফিরছিলেন পারভেজ হোসেন। সঙ্গে আরও তিনজন। বিশালাকার গরুটি দেখে হাটের ভেতর প্রবেশ করতে যাওয়া আরও কয়েকজন উচ্চ স্বরে জানতে চাইলেন ভাই কত, কত? হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় পারভেজ বলেন, ১ লাখ ৯৭। এভাবেই হাটে প্রবেশ-বের হওয়ার সময় একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছেন গরুর দাম। অনুমান করছেন হাটের পরিস্থিতি।

গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে হাট শুরুর আগে কিছুটা অলস সময় কাটলেও গতকাল সোমবার পুরোদমে জমেছে রাজধানীর পশুর হাটগুলো। এ অবস্থা থাকবে আগামী বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত। তবে দাম নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না ক্রেতারা। পছন্দের পশু নিয়ে ফিরলেও তা মেলাতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। তাদের মতে, বিক্রেতারা দাম বেশি চাচ্ছেন। বিশেষ করে মাঝারি গরুর দাম অনেকটাই বেশি। ব্যাপারীরা একটা দাম বলে আর কথাই বলতে চান না।

সিরাজগঞ্জ থেকে আফতাবনগর হাটে গরু আনা পাইকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খাবারের দাম ও পরিবহন খরচ বাড়ায় গরুর দাম এবার বেশি। আমার কাছে পাঁচটি গরু আছে। দরদামের মধ্য দিয়ে একটু কম-বেশি করে এগুলো বিক্রি করব। খুলনার দিঘলিয়ার পানিগাতি থেকে আসলাম মোল্লা হাটে এনেছেন ৩৩ মণ ওজনের গরু কালো পাহাড়। হাটে আগতদের বেশিরভাগই দাঁড়িয়ে গরুটির সঙ্গে সেলফি তুলছেন। বিশাল দেহের গরুটির বয়স ৪ বছর ৬ মাস। দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা।

গাবতলী পশুর হাটে ঢুকতেই চোখ পড়ে ‘বাহাদুরে’র দিকে। হাটে আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা এ গরু। বিক্রেতা মোশাররফ হোসেন গরুটির দাম চাইছেন ৮ লাখ টাকা। তিনি বলেন, ক্রেতারা এখন পর্যন্ত ৬ লাখ টাকা দাম বলেছে, তবে ৭ লাখে ছেড়ে দেব।

গাবতলী হাটে বড় গরুর পাশাপাশি বড় আকারের মহিষ ও ছাগলও উঠেছে। ব্যাপারীরা বলছেন, খামারি বা কৃষকের কাছ থেকে বেশি দামে গরু-মহিষ কেনা হয়েছে। খাবারের দামও বেশি। তা ছাড়া গ্রাম থেকে গরু সংগ্রহ করে হাট পর্যন্ত পৌঁছাতে পদে পদে টাকা গুনতে হচ্ছে। তাই গরুর দাম বেশি পড়ছে।

পাবনা থেকে আসা ব্যাপারী আজিজ মিয়া বলেন, হাটে ছোট ও দেশি ছাগলের চাহিদা বেশি। আমার বেশির ভাগ ছাগলই মাঝারি ও ছোট সাইজের। বেচাবিক্রিও তাই বেশি।

দাম নিয়ে পুরান ঢাকা থেকে আসা ক্রেতা সানি বলেন, সকাল থেকে ঘুরছি। দাম শুনে পাগল দশা। ক্রেতা বেশি হওয়ায় বিক্রেতারা অনেক বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন। খাসি কিনে পরে গরুর হাটে ঢুকব ভাবছিলাম। কিন্তু দামে মেলাতে পারছি না।

মোহাম্মদপুর বসিলা ও যাত্রাবাড়ী পশুর হাটে প্রচুর গরু উঠেছে। জমে উঠেছে কমলাপুর ও মেরাদিয়া হাটও। তবে দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে চলে যাচ্ছেন। ধোলাইখাল হাটে আনুমানিক ৪ মণ ওজনের একটি গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

বিক্রেতা সুজন বললেন, বাবাসহ তিনি শরীয়তপুর থেকে ৩টি মাঝারির চেয়ে বড় সাইজের গরু নিয়ে এসেছেন। গ্রামে গরু তিনটির দাম যা উঠেছিল, তাতে বিক্রি করলে পুঁজিই উঠত না। হাটে আনার পর দাম আরও কম বলছে।

এদিকে বসিলা হাটে মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। তবে লাখ টাকার নিচে মিলছে না মাঝারি গরু। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে দামের পার্থক্য হচ্ছে ৩০-৫০ হাজার। প্রতিটি গরুর দাম পড়ছে এক থেকে দেড় লাখ।

অনলাইনে পশু কেনাবেচায় প্রতারণা করলে কঠোর ব্যবস্থা: পশুর হাটে দালাল, প্রতারক ও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে আটক করেছে র্যাব। বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন বলেছেন, ইদানীং অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাবেচা হচ্ছে। অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাবেচায় প্রতারণা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম এই বিষয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে।

সোমবার গাবতলী গাবতলী পশুর হাট পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, অনলাইনে পশু কেনার আগে ক্রেতাকে যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। যদি কোনো ক্রেতা অনলাইনে দেখা পশুটি বাস্তবে না পান তাহলে র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। হাসিলের নামে বাড়তি টাকা নেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট হাট ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন কোরবানির পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রমসহ অন্য কার্যক্রম তদারকি করছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। মন্ত্রণালয়ের ৯ জন উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে হাটগুলোতে ভেটেরিনারি মেডিকেল সেবা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ১টি কেন্দ্রীয় সমন্বয় টিম, ৫টি মনিটরিং টিম, ২২টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম ও ২টি বিশেষজ্ঞ ভেটেরিনারি মেডিকেল গঠন করেছে।

২৯ কোটি থেকে বেড়ে রাজস্ব আয় ৪৩ কোটি টাকা: রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে এবার অস্থায়ী ১৮টি পশুর হাট বসেছে। এ ছাড়াও গাবতলী ও ডেমরার সারুলিয়ায় রয়েছে দুটি স্থায়ী হাট। এবার দুই সিটি করপোরেশনের হাটগুলো থেকে আয় হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা।

এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ২৫ কোটি ৭৫ লাখ ও উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ১৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা আয় করেছে। এর আগে ২০২২ সালে এ আয় ছিল ২৯ কোটি, ২০২১ সালে ৩৫ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালে আয় ছিল ৩৬ কোটি টাকা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রায় ৯ ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু

বাংলাদেশে বাস করে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা কাম্য নয় : কাদের সিদ্দিকী

নরসিংদীতে ভূমিকম্প আতঙ্ক / ঘর ছেড়ে রাস্তা-মাঠে নির্ঘুম রাত, শহর ছাড়ার ভাবনা

ঘাস খাওয়ায় গরুর পায়ের রগ কাটল প্রতিবেশী

রেস করতে গিয়ে প্রাণ গেল ২ তরুণের

কবিতা-গানের মনোমুগ্ধময় সন্ধ্যা― ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’

রেফারি বিতর্ক নিয়ে বার্সাকে ফের আক্রমণ রিয়াল সভাপতির

লেবাননে আবারও ইসরায়েলি হামলা

সাতক্ষীরা-৩ / আশ্বাস পেয়ে গণসংযোগে ব্যস্ত ডা. শহিদুল আলম

বিএনপির সাথে বৈঠক / খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

১০

বরিশালের ৬টি আসনে এনসিপির মনোনয়ন চান ১১ জন, তিনটিতে একক প্রার্থী

১১

কতজন প্রবাসী পোস্টাল ব্যালটের নিবন্ধন করেছেন জানাল ইসি

১২

জামায়াত নেতার বিতর্কিত বক্তব্যের নিন্দা এনসিপির

১৩

ভূমিকম্পের সময় কী করা উচিত, জানাল ফায়ার সার্ভিস

১৪

নর্দান ইউনিভার্সিটির নতুন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান

১৫

বিএনপি বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা চালু করবে : আমীর খসরু

১৬

এমপি হলে সৎপথে ব্যবসার লাইন দেখিয়ে দেব : আজহারুল ইসলাম মান্নান

১৭

হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়া

১৮

কমনওয়েলথ মহাসচিবের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের সাক্ষাৎ

১৯

ইসলামবিরোধী আইন মেনে নেওয়া হবে না : মাওলানা রাব্বানী

২০
X