গবাদি পশুর চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম বলা চলে কোরবানির ঈদকে। এ সময়টায় চামড়া সংরক্ষণের কাঁচামাল হিসেবে লবণের চাহিদাও বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে, সঙ্গে দামও। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি ক্রুড লবণের দাম বেড়েছে ১০০ টাকার বেশি। গত কোরবানির ঈদের চেয়ে বছরের ব্যবধানে সেই লবণের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৫০ টাকা। ঈদ ঘনিয়ে আসায় দাম আরও বাড়ার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা।
এদিকে কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, আড়তদার কমে যাওয়া এবং লবণসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ ঈদে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন লাখ পিস চামড়া কেনার লক্ষ্য ব্যবসায়ীদের। কোরবানিতে মহানগরীর সব চামড়া সংগ্রহ নিয়ে শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা।
বিসিক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের মহাব্যস্থাপক নিজাম উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, দেশে প্রায় ২৩ লাখ টনের মতো রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। কাজেই কোনো সংকট তৈরি হবে না। কোরবানিতে সারা দেশে লবণ লাগবে এক লাখ টনের কাছাকাছি। সরবরাহে কোনো ঘাটতি না থাকার পরও ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করে দাম বাড়িয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছি।
লবণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির ঈদে সারা দেশে যে লবণ লাগে, তার প্রায় ৪০ ভাগ লবণের চাহিদা পূরণ হয় পটিয়া ইন্দ্রপোল শিল্পাঞ্চল থেকে। তাই এবারও ঈদুল আজহা সামনে রেখে শিল্পাঞ্চলের ৪০টি ছোট-বড় লবণ শোধনাগারে লক্ষাধিক টন ক্রুড লবণ মজুত রাখা আছে।
বর্তমানে মাঠপর্যায়ে প্রতি বস্তা লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৭০ টাকায়; কিন্তু প্রধানতম শিল্পাঞ্চল পটিয়ায় ৭৫ কেজির প্রতি বস্তা ক্রুড লবণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৮০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা। অথচ গেল কোরবানির আগে এ লবণের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা।
ইসলামাবাদ সল্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদুচ ছমদ হেলাল বলেন, এখান থেকে এবার এক লাখ টনের বেশি লবণ সারা দেশে সরবরাহের টার্গেট ছিল। সেখানে গত শনিবার পর্যন্ত বিক্রি মাত্র ৩০ হাজার টন।
ইন্দ্রপোল লবণ মিল মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি ও মোহাম্মদীয়া সল্ট ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ঈদুল আজহার বাকি মাত্র কয়েক দিন; কিন্তু এখনো আশানুরূপভাবে মজুত লবণ বিক্রি হচ্ছে না। তবে পর্যাপ্ত মজুতের পরও দাম বাড়ার প্রসঙ্গে কোনো সদুত্তর দেননি তিনি।
চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিটি গরু বা মহিষের চামড়া সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে ৮ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত লবণ প্রয়োজন। এ ছাড়া পরিবহন খরচ ও শ্রমিক মজুরি তো বেড়েছেই।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে কোরবানিতে সাড়ে আট লাখের বেশি পশুর চাহিদা রয়েছে; কিন্তু স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা সাড়ে তিন লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরে প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। তবে বাকি চামড়া কী করবেন, সেগুলো নষ্ট হবে কি না, কিংবা আদৌ ব্যবসায়ীরা কিনবেন কি না, সেটি নিয়ে অন্ধকার কাটছে না। যদিও ব্যবসায়ীদের দাবি, চট্টগ্রামে পশু কোরবানি হবে পাঁচ লাখের মতো। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বাড়ায় এখনো অনেক ব্যবসায়ী লবণ কিনতে পারেননি বলে অভিযোগ তাদের।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দীন কালবেলাকে বলেন, এক দশক আগে শতাধিক আড়তদার থাকলেও অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও মন্দার কারণে এখন আছে ২৫ থেকে ৩০ জন। এ ছাড়া সমিতির বাইরে আরও ১০ থেকে ১৫ ব্যবসায়ী চামড়া কিনবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়ার দাম বাড়িয়েছে ঠিকই; কিন্তু সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লবণ ও শ্রমিকের দাম। এ ছাড়া পরিবহন ও গুদামের খরচ বাড়ায় চাহিদা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ নিয়ে সংশয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, লক্ষ্যমাত্রার বেশি পশু কোরবানি হলে সে চামড়া নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে আরও কিছু অতিরিক্ত চামড়া হয়তো কেনা যেত। তিনি জানান, রিফ লেদার ও মদিনা ট্যানারি চালু থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামের অর্ধেক চামড়া তারা কিনে নিত। তবে ইটিপি জটিলতায় ২০১৬ সালে মদিনা ট্যানারি বন্ধ হওয়ায় কোরবানির চামড়া বিক্রির জন্য ঢাকার ওপরই নির্ভরশীল ব্যবসায়ীরা।
বন্দর নগরীর একমাত্র ট্যানারি রিফ লেদারের পরিচালক মোখলেসুর রহমান কালবেলাকে বলেন, চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের বাইরে থেকে প্রায় এক লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করার পরিকল্পনা আছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী চামড়ার বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলেও আমাদের জন্য সুখবর নেই। কারণ দুটি কারখানায় মাত্র কমপ্লায়েন্স আছে। তবে খুব খারাপ অবস্থায় আছি বলব না।
মন্তব্য করুন