সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জেরে ঘুমন্ত অবস্থায় এক নারী ও তার আট বছরের সন্তানকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার পাঁচরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন গৃহবধূ আয়েশা আক্তার নিপা ও তার আট বছরের ছেলে আলী হাসান মুজাহিদ। ঘটনার পর গতকাল বুধবার ভোরে হত্যার দায়ে নিহত নারীর ভাতিজা আবদুল্লাহ আল শাহেদ ও তার ভাই মঈনুল হাসান শুভকে আটক করে পুলিশ। পরে হত্যা মামলা হলে এতে শাহেদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত নিপার স্বামী আনোয়ার হোসেন সংযুক্ত আরব-আমিরাতপ্রবাসী। দীর্ঘদিন ধরে পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে আনোয়ার হোসেন, তার বড় ভাই সিরাজ ও মেজো ভাই মীর হোসেনের মধ্যে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে এলাকায় ও থানায় একাধিকবার সালিশও হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে হত্যাকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিজ ঘরের বিছানায় নিপাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পায় পুলিশ। এ সময় লাশের পাশে রক্তমাখা লাকড়ির তিনটি টুকরা ও ঘরের সিঁড়িতে একটি টুপি পাওয়া যায়। এদিকে শাহেদের বড় ভাই শুভ পুলিশকে জানান, সন্ধ্যা থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে পুলিশের সন্দেহ হলে তারা শাহেদের মাদ্রাসায় খোঁজ নেয়। তবে তখন সেখানে তাকে পাওয়া না গেলেও পরে ভোররাতে মাদ্রাসার শিক্ষকরা পুলিশকে জানান, শাহেদ মাদ্রাসায় এসে ঘুমাচ্ছে। খবর পেয়ে ভোররাতেই মাদ্রাসা থেকে শাহেদকে আটক করে পুলিশ।
শাহেদ ওই এলাকার একটি কওমি মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ঈদের ছুটি থাকায় সে বাড়িতেই ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে শাহেদ পুলিশকে জানায়, সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে চাচা ও জ্যাঠাদের সঙ্গে তার মায়ের ঝগড়া হতো। এতে মা তাদের সামনে কান্নাকাটি করতেন, যা তাদের সহ্য হতো না। তাই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিপার ঘরের ছাদের সিঁড়ির রুম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে শাহেদ। রাতে নিপা ও তার ছেলে পাশের বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়লে ঘরে থাকা শক্ত লাকড়ি দিয়ে প্রথমে চাচির মাথায় আঘাত করে শাহেদ। চাচির চিৎকারে পাশে ঘুমিয়ে থাকা মুজাহিদ জেগে উঠলে তাকেও আঘাত করে হত্যা করে ও কৌশলে পালিয়ে যায় সে।
নিপার বাবা জালাল আহমেদ বলেন, আমার মেয়ের ভাসুরের ছেলে শাহেদ এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এদিকে শাহেদের মা ফাতেমা বেগম বলেন, আমি এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমরা তিন জা একসঙ্গে দাওয়াতে গিয়েছিলাম। রাতে চিৎকার শুনে সবার মতো আমিও ঘর থেকে বের হয়ে দেখি, আমর জা ও তার শিশু সন্তান খুন হয়েছে। এখন পুলিশ বলছে, শাহেদ নাকি এ দুজনকে হত্যা করেছে।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, এরই মধ্যে মা ও ছেলেকে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। নিহত নারীর বাবা জালাল আহেমদ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। এ ঘটনার মূল আসামি কিশোর শাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট সার্কেলের এএসপি জাহিদুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক বিরোধের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন