জাকির হোসেন লিটন
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫৩ এএম
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৯ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নির্বাচনী ব্যয়সীমা লঙ্ঘনে শাস্তির নজির নেই ইসির

তথ্য চেয়ে চিঠি
নির্বাচনী ব্যয়সীমা লঙ্ঘনে শাস্তির নজির নেই ইসির

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়সীমা ২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু সেই সীমা লঙ্ঘন করেছেন অনেক প্রার্থীই। বিজয়ী প্রার্থীদের অনেকেই ইসির নির্ধারিত সীমার বহুগুণ বেশি খরচ করেছেন। অতিরিক্ত খরচ মনিটরিংয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নিলেও প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব চেয়েছে সংস্থাটি। যদিও ব্যয়সীমা লঙ্ঘনের কোনো তথ্য বা শাস্তির নজির নেই।

নিয়ম অনুযায়ী ভোটের ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে হিসাব দাখিল করতে হয়। সে অনুসারে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে অতীতের মতো এবারও দায়সারা হিসাব জমা দিয়ে অতিরিক্ত ব্যয়কারী প্রার্থীরা পার পেয়ে যাবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আসনপ্রতি একজন প্রার্থীর সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা খরচ করার বিধান থাকলেও, অনেকে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় করেছেন। ভোটের মাঠে তারা নানাভাবে কালো টাকা ছড়িয়েছেন। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও ১৪ দলীয় জোটের সমর্থিত অনেক প্রার্থী নির্দিষ্ট তথ্য, প্রমাণসহ কতিপয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন। আবার অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগ করেছিলেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি নির্বাচন কমিশন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগেরও এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য তৎপরতা ছিল না। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানার বিধান থাকলেও, তা প্রয়োগ করা হয়নি। এতে একদিকে যেমন নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে নির্বাচনী ব্যবস্থাও। যদিও ইসির নির্বাচনী ব্যয়সীমাকে প্রার্থীদের কেউ কেউ অবাস্তব বলে আখ্যায়িত করেছেন।

নির্বাচনের আগে গত ১৫ নভেম্বর ভোটারপ্রতি ১০ টাকা খরচের হার নির্ধারণ করে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়সীমা ২৫ লাখ টাকা বেঁধে দেয় ইসি। আরপিও অনুযায়ী, এই ব্যয় একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাব থেকে বহন করতে হয় এবং ভোটের ৩০ দিনের মধ্যে সেই হিসাব সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে কমিশনে দাখিল করতে হয়। কোনো প্রার্থী নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা না দিলে তার বিরুদ্ধে মামলা করারও বিধান রয়েছে। আরপিওর ৭৩ অনুচ্ছেদে আরও বলা আছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর দাখিল করা বিবরণী বা সম্পূরক বিবরণীতে উল্লিখিত উৎস ভিন্ন অন্য কোনো উৎস থেকে কোনো নির্বাচনী ব্যয় বহন করলে বা নির্ধারিত ২৫ লাখের অধিক খরচ করলে তিনি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হবেন। তিনি অনধিক সাত বছর থেকে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

তবে আরপিওর এ ধারার বাস্তবায়ন নেই বলে মনে করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাদের মতে, অনেক প্রার্থীই ব্যয়সীমার অধিক খরচ করে থাকেন। কিন্তু তার হিসাব ইসির কাছে গোপন করা হয়। ইসিকে অন্ধকারে রেখে দুর্নীতিবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, কালো টাকার মালিকরাই মূলত ভোটের মাঠে টাকার ছড়াছড়ি করেন। টাকার সংকটে অসৎ ও সম্পদশালী প্রার্থীদের কাছে যোগ্য ও সৎ প্রার্থীদের পরাজিত হওয়ার অসংখ্য নজির আছে। তাই সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থেই এ বিষয়ে লোক দেখানোর বদলে ইসিকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

অন্যদিকে ইসি বলছে, এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই। ফলে প্রতি নির্বাচনেই অভিযুক্তরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। কমিশনের জনবলের সীমাবদ্ধতার কারণেই আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। মাঠপর্যায়ে কমিশনের জনবল অনেক কম। এক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন, গোয়েন্দা বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, বাস্তবে প্রার্থীদের ব্যয়সীমা মনিটরিং করা একটু কঠিন। তবে কোনো প্রার্থী নির্ধারিত ব্যয়সীমার অতিরিক্ত খরচ করলে, তা দেখভালের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাই মাঠে থাকেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার কালবেলাকে বলেন, অনেক হেভিওয়েট ও দুর্নীতিবাজ প্রার্থী কখনোই ইসির নির্ধারিত ব্যয়সীমা মানেন না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, বিষয়টি নির্বাচন কমিশন মনিটরিং করে না। আজ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দুর্নীতিবাজরা ভোটে কালো টাকার প্রভাব দেখান। এতে যোগ্য প্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ বিষয়ে কমিশনকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিপিএলে দেখা যেতে পারে নোয়াখালী দল

‘শিশুদের নোবেল’ পুরস্কারে জন্য মনোনীত রাজশাহীর মুনাজিয়া

তরুণ প্রজন্মই আগামীর বাংলাদেশ : শরীফ উদ্দিন জুয়েল

ঘর আর নেই, তবু ঘরে ফিরছে গাজাবাসী

বাসায় বানিয়ে ফেলুন চকোলেট-কফির মজাদার মোকা কেক

লালবাগ কেল্লায় গ্রুপ মেডিটেশন ও ইয়োগার আয়োজন

ট্রফি না দেওয়ায় নকভির চাকরি খেতে চায় বিসিসিআই

গুম হওয়ার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন সালাহউদ্দিন আহমদ

আকিজ বেকার্স লিমিটেডের বার্ষিক সেলস কনফারেন্স উদযাপন

তারেক রহমান ক্ষমতায় গেলে ফ্যামিলি কার্ড করবেন : মাহবুবুর রহমান 

১০

আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসে তারেক রহমানের বার্তা

১১

স্মার্টফোনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রক্ষায় মানুন এই ৫ নিরাপত্তা টিপস

১২

নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়নই হবে আগামীর বাংলাদেশের শক্তি : মীর হেলাল

১৩

বাদীর জিম্মায় জামিন পেলেন ছাত্রদল নেতা শাওন

১৪

দেবকে নিয়ে শুভশ্রীকে যা বললেন শান

১৫

স্বাভাবিক এক্সিট নিয়ে এ দেশেই থাকতে চাই : ধর্ম উপদেষ্টা

১৬

ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে বন্দির সময়কার অভিজ্ঞতা জানালেন শহিদুল আলম 

১৭

ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইলেন ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ

১৮

নিজ ঘরে স্বামী-স্ত্রীর রহস্যজনক ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

১৯

রাত ১টার মধ্যে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে যেসব অঞ্চলে

২০
X