অমর একুশে বইমেলার ১৫তম দিন ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। এ দিনও ছিল ঋতুরাজ বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসের রঙিন ছোঁয়া। রং-বেরঙের পাঞ্জাবি, হলুদ, সাদা আর লাল শাড়ি পরে তরুণ-তরুণীরা এসেছিলেন মেলায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বসন্তের দ্বিতীয় দিনে প্রেমিক-যুগলদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। অনেকের মাথায় ফুলের টায়রা, কেউ আবার চুলে আর কানে ফুল গুঁজে প্রিয়জনের হাত ধরে মেলায় ঘুরছেন। তাদের দুষ্টু-মিষ্টি খুনসুটিতে মেলা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।
চাকরিজীবী অমর চক্রবর্তী ও তার স্ত্রী গৃহিণী শ্যামা চক্রবর্তীকে দেখা গেল মেলায় বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে ঘুরে বই দেখতে। শ্যামা চক্রবর্তী বলেন, ফাল্গুনের প্রথম দিন বের হতে পারিনি। তাই আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) মেলায় এসেছি।
মেলায় আসা ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী ওয়াসিফা নূর জানান, বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। বই দেখছি, প্রিয় লেখকদের অপেক্ষায় আছি। যদি তারা কেউ আসেন, তাহলে তাদের অটোগ্রাফ নেব। ১ ফাল্গুনের আমেজ আজও মেলায় বিরাজ করছে।
বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের আমেজ দ্বিতীয় দিনও ছিল। মেলায় পাঠক-দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এটা আমাদের জন্য বেশ স্বস্তির। যখন মেলায় দর্শনার্থী বেশি হয়, তখন বই বিক্রি বেড়ে যায়। সব দর্শনার্থী বই কেনেন না; কিন্তু বই দেখতে দেখতে ভালো লাগা থেকে অনেকেই কেনেন।
প্রথমা প্রকাশনার বিক্রয়কর্মী রিফাত বলেন, আজ অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি দর্শনার্থী মেলায় এসেছেন। পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে আমাদের অনেক বই বিক্রি হয়েছে।
আদর্শ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী প্রীতি বলেন, বসন্তের প্রথম দিন আমাদের প্রত্যাশা কিছুটা পূরণ হয়েছে। দ্বিতীয় দিনও অনেক দর্শনার্থী ও ক্রেতা রঙিন সাজে মেলায় এসেছে। বসন্তের রঙিন উৎসব যেন আজও কাটেনি।
পাঠক-দর্শনার্থী বই কিনছে এখন পর্যন্ত। মেলায় যত ভিড় হবে, তত বেশি পাঠক বই নেবে।
বাউণ্ডুলে প্রকাশনীর প্রকাশক অনিন্দ্য দীপ বলেন, পহেলা ফাল্গুন চলে গেলেও গতকালের মতো আজও মেলায় ভিড় ছিল। অনেকে প্রিয়জনকে প্রিয় বই উপহার দিচ্ছেন। আশা করছি মেলায় বেশ পাঠক-দর্শনার্থীদের ভিড়ে বই বিক্রি অন্যান্য দিনের তুলনায় ভালো হবে। তবে প্রকাশক হিসেবে আমাদের নজর দিতে হচ্ছে, যে বইগুলো এখনো মেলায় আনতে পারিনি, সেগুলো যেন ২১শে ফেব্রুয়ারির আগে মেলায় আনতে পারি।
গতকাল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন নতুন বই এসেছে ৯৭টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আবদুল হালিম বয়াতি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। আলোচনায় অংশ নেন শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং মো. নিশানে হালিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাইদুর রহমান বয়াতি।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক মাসুদুল হক, কবি ও সম্পাদক এজাজ ইউসুফী এবং গবেষক কাজী সামিও শীশ এবং শিশুসাহিত্যিক রুনা তাসমিনা।