হাসান আজাদ
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:৩৭ এএম
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:১৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র মার্চেই

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র মার্চেই

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে আগামী মাসে। প্রতিযোগিতার মুখে দরে যারা যোগ্য হবে, তাদেরই কাজ দেওয়া হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পিএসসি (উৎপাদন বণ্টন চুক্তি) চূড়ান্ত করতে চায় সরকার। সর্বাধিক কোম্পানি যাতে দরপত্রে অংশ নেয়, সেজন্য বিভিন্ন দেশে রোড শো করা হবে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্রের অনুমোদন দিয়েছেন। পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, আমরা মার্চেই দরপত্র আহ্বান করতে চাই। দরপত্র আহ্বানের পর কোম্পানিগুলোকে বিড ডকুমেন্ট জমা দিতে ছয় মাস সময় দেওয়া হবে। নভেম্বর বা ডিসেম্বরে পিএসসি চূড়ান্ত করতে চাই। তবে এর আগে বিভিন্ন দেশে রোড শো করা হবে। আমরা প্রতিযোগিতামূলক দরের দিকে যাচ্ছি। যে কোম্পানির প্রস্তাব সুবিধাজনক হবে এবং যাদের যোগ্য মনে হবে, তারাই কাজ পাবে। সবার আগে দেশের স্বার্থ।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, আগের পিএসসিতে (পিএসসি-২০১৯) সুযোগ-সুবিধা কম থাকার কারণে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে শুরুতে আগ্রহ দেখালেও পরে তারা আর কাজ করেনি। ২০১১ সালের ১৬ জুন সমুদ্রের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য পেট্রোবাংলা যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে পিএসসি করে। ব্লক দুটিতে দ্বিমাত্রিক জরিপ শেষে ২০১৪ সালে তারা জানায়, গ্যাসের দাম বাড়ানো না হলে কাজ করবে না। শেষ পর্যন্ত তারা কাজ না করেই চলে যায়।

সর্বশেষ ২০২০ সালে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহী কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হয় বলে জানান পেট্রোবাংলার ওই কর্মকর্তা। সভায় কনোকো ফিলিপস, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম, এক্সজোনমোবিল ইন্টারন্যাশনালের মতো কোম্পানি অংশ নিয়েছিল। সে সময়ও তাদের কাছে যে পিএসসি উপস্থাপন করা হয়েছিল, সেটি পিএসসি-২০১৯-এর সংশোধনী। তখন কোম্পানিগুলো এই পিএসসি সংশোধন করে আরও আকর্ষণীয় করার পরামর্শ দিয়েছিল। এমন প্রেক্ষাপটে বর্তমান পিএসসি-২০১৯ সংশোধন করে আরও আর্কষণীয় করা হয়। গত বছরের ২৬ জুলাই ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয় সংশোধিত পিএসসি-২০২৩। এরপর গত বছর দরপত্র ডাকার প্রস্তুতি নিলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তা পিছিয়ে যায়।

জানা গেছে, সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করে তুলতে পিএসপি-২০২৩ বেশ আকর্ষণীয় করা হয়েছে। আগের পিএসসিগুলোতে গ্যাসের দর স্থির করে দেওয়া হলেও এবার তা হয়নি। বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রডের (জ্বালানি তেল) বাজারদরের সঙ্গে ওঠানামা করবে গ্যাসের দর। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রডের ১০ শতাংশ দরের সমান। অর্থাৎ ব্রেন্ট ক্রডের দাম ৮০ ডলার হলে গ্যাসের দাম হবে ৮ ডলার। যা আগের পিএসসিতে যথাক্রমে অগভীর ও গভীর সমুদ্রে ৫.৬ ও ৭.২৫ ডলার স্থির ছিল। পিএসসি-২০০৮ গ্যাসের দাম ছিল ৪ দশমিক ২ ডলার। পরে পিএসসি-২০১২-তে এর মূল্য নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৬ ডলার।

এ ছাড়া নতুন পিএসসিতে উৎপাদিত গ্যাসের ভাগাভাগিতেও ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। চলমান পিএসসিতে গ্যাস উৎপাদনের শুরুতে পেট্রোবাংলা এবং আইওসির গ্যাসের ভাগাভাগির মধ্যে ১০ ভাগ পার্থক্য থাকে। উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পেট্রোবাংলা ৮০ ভাগ এবং আইওসি ২০ ভাগ গ্যাস পেয়ে থাকে। পিএসসির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জির পরামর্শ অনুযায়ী এতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন পিএসসিতে উভয় পক্ষ সমান শতাংশে ভাগ পাবে।

গ্যাসের ভাগাভাগিতে আগের মডেল পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী আইওসি ৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করলে পেট্রোবাংলার ৫৫ শতাংশ, আইওসির ছিল ৪৫ শতাংশ। এভাবে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনে পেট্রোবাংলা ৬০ শতাংশ ও আইওসি ৪০ শতাংশ, ২৫০ মিলিয়নের ক্ষেত্রে পেট্রোবাংলা ৬৫ শতাংশ আইওসি ৩৫ শতাংশ গ্যাস পেত। ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন হলে পেট্রোবাংলা ৮০ শতাংশ এবং আইওসি ২০ শতাংশ গ্যাস পেত।

তবে ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের দুই বছরের মধ্যে কূপ খনন করে গ্যাস না পেলে কিংবা বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন যোগ্য না হলে শর্তসাপেক্ষে যথাক্রমে ১ ও ২ শতাংশ হিস্যা বাড়ানোর সুযোগ থাকছে। গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে প্রথম প্রস্তাব পেট্রোবাংলাকে দিতে হবে। পেট্রোবাংলা নিতে না চাইলে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির সুযোগ পাবে বিদেশি কোম্পানি।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক আদালতে ২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সাগর সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর সর্বমোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশি সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। এই বিজয়ের ১০ বছর পার হলেও সমুদ্রে খনিজসম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ক্ষেত্রে কার্যত কোনো অগ্রগতিই হয়নি।

পেট্রোবাংলার অন্য এক কর্মকর্তা জানান, সমুদ্রসীমায় একটি পূর্ণাঙ্গ বহুমাত্রিক জরিপ পরিচালনা হয়েছে। মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে নাম দিয়ে ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। নরওয়ের কোম্পানি টিজিএস এবং ফ্রান্সের স্লামবার্জার কনসোর্টিয়াম তাদের রিপোর্ট প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছে। জানা গেছে, আগামী মাসের মধ্যে তা পেট্রোবাংলার কাছে আসবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাংবাদিক হায়াত হত্যা, জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

দুর্গোৎসব পরবর্তী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পারভেজ মল্লিক / বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির অনেকটাই ধরে রেখেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা

বাগেরহাটে সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা

প্রবাসীদের অধিকার নিশ্চিতে প্রবাসী ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান

প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিল ‘শক্তি’, ভারতে রেড অ্যালার্ট জারি

চালক-পাম্পকর্মীর ফাঁদে অভিনেতা ফারহান, উধাও ১৬ লাখ টাকা!

সব ধরনের জাদুর ক্ষতি থেকে বাঁচার আমল

তারেক রহমান শিগগির দেশে ফিরবেন : এমএ মালিক

ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৭৪

‎ম্যাজিস্ট্রেট দেখে ইলিশ রেখে পালালেন জেলেরা

১০

টি-টোয়েন্টিতে মোস্তাফিজের অবিশ্বাস্য রেকর্ড

১১

ইউক্রেনের যাত্রীবাহী ট্রেনে রুশ ড্রোন হামলা, বহু হতাহত

১২

মেহেরপুর উন্নয়নে এনসিপির ১৩ দফা ঘোষণা

১৩

নিজেই হোন নিজের প্রোডাক্টের সবচেয়ে বড় অ্যাম্বাসেডর

১৪

ট্রাম্পের প্রতিকৃতি খচিত মুদ্রা তৈরির পরিকল্পনা

১৫

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় চীন : শি জিনপিং

১৬

চোখের ৫ লক্ষণই বলে দেবে আপনার কিডনি কোন অবস্থায় আছে

১৭

ছাত্রদলে যোগ দিলেন শিবির নেতা

১৮

যৌনকর্মীকে হোটেলে ডেকে ছিনতাই, সিঙ্গাপুরে দুই ভারতীয়র কারাদণ্ড

১৯

মাল্টিমোড গ্রুপের নতুন লোগো ও ওয়েবসাইটের আনুষ্ঠানিক উন্মোচন

২০
X