রাজধানীতে ফের অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে মাংসের বাজার। প্রতি কেজি গরুর মাংস (হাড়সহ) বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৮০ টাকা পর্যন্ত। হাড় ছাড়া বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০ হাজার টাকায়। খাসির মাংসের কেজি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায়। মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে গবাদি পশুর সরবরাহ কম। প্রতিদিন তাদের গড়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। ফলে তারা দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। সামনের শুক্রবার আরও এক দফা দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। দাম নির্ধারিত না থাকায় তদারকে ভোক্তা অধিদপ্তরের অনীহা রয়েছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মাংসের দাম নির্ধারণ হলে তা বাস্তবায়নে মাঠে নামবে ভোক্তা অধিদপ্তর।
গরুর মাংসের দামের প্রভাব পড়েছে অন্য মাংসেও। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২৩০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৬২০ থেকে ৬৫০ টাকা। মাসখানেক আগেও ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং দেশি মুরগি কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কমে পাওয়া যেত। মুরগির মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও পরিবহন ও অন্যান্য খরচের কারণে মুরগির মাংসের দাম বাড়ছে।
মাংসের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে শফিকুল ইসলাম নামে একজন ভোক্তা বলেছেন, ‘৬০০ থেকে ৬৫০ টাকার গরুর মাংস মাসের ব্যবধানে কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। এর প্রভাবে বাজারে ব্রয়লারের দামও কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। বাজারে কোনো পণ্যই মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই।’
একজন মুরগির খামারি কালবেলাকে জানিয়েছেন, বাজারে গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধি পেলে অন্য সব মাংসের দাম বাড়ে। এর আগে বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা থাকার সময় ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এখন গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধির কারণে ব্রয়লারসহ অন্যান্য মুরগির দাম বেড়েছে।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, ২০১৮ সালে গরুর মাংসের কেজি ছিল ৩২০ টাকা; ২০১৯-২০২০ সালে ছিল ৫০০ টাকা; ২০২১ সালে ৬৫০ টাকা; ২০২২ সালে ৭০০ টাকা এবং ২০২৩ সালে এসে ৮০০ টাকায় উঠেছে। ২০২৩ সালের শেষ এবং চলতি বছরের শুরুতে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
সমিতির সভাপতি গোলাম মর্তুজা কালবেলাকে বলেন, ‘বাজারে চাহিদার তুলনায় গরু নেই। কোরবানির জন্য ব্যাপারীরা গরু ছাড়ছেন না। এতে সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করে গরুতে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা লস হচ্ছে। এর পরও চেষ্টা করেছি গরুর মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘গরু ও খাসির মাংসের বাজারদর কত, কে বলতে পারবে? আমরা জানি না, বাজারদর কত। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর যদি এটি ঠিক না করে, তাহলে বাজারে নেমে আমরা কী করব। ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছায় দাম ঠিক করে নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করে লাভ করতে পারলে এখন কেন পারবে না। তখনো হাটের ইজারা, পরিবহন ও খাদ্যের খরচ ছিল। এখনো একই আছে। তাহলে দাম কেন ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা হবে? আমাদের পক্ষ থেকে এর আগে ৮-৯টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এখন বলছি, সেগুলি বাস্তবায়ন করা গেলে গরুর মাংসের কেজি ৫০০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘মানুষ মূল্যস্ফীতির কশাঘাতে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এখন সরকার বলছে, তারা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে। সেক্ষেত্রে সরকার চাইলে সব করতে পারে। যখন গরুর মাংসের দাম কম ছিল, তখন মুরগির মাংসের দামও কম ছিল। এখন দেখা যাক সরকার কী করে।’