সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত এক সপ্তাহে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে সরকার। ২৮ ডিসিকে মাঠ প্রশাসন থেকে তুলে এনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগে পদায়ন করা হয়েছে। তাদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫ ও ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তাদের। এ ছাড়া কয়েকজনকে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার পদে বসানো হয়েছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া ডিসিরা মাঠ প্রশাসনে কীভাবে দায়িত্ব সামলাবেন, সেসব বিষয়ে তাদের দিকনির্দেশনা দেবেন সরকারের ১৪ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব/সিনিয়র সচিবরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে নতুন ডিসিদের ব্রিফিং সেশন অনুষ্ঠিত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এ ব্রিফিং সেশনে বক্তব্য দেবেন।
সূত্র জানায়, প্রশাসন ক্যাডারের অভিভাবক মন্ত্রণালয় হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী মাঠ প্রশাসনে শৃঙ্খলা রক্ষা করে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের ওপর জোর দিয়ে বক্তব্য দেবেন।
নির্বাচনকালীন প্রশাসনের ভূমিকা কেমন হবে, সে বিষয়েও তার দিকনির্দেশনা থাকবে বলে জানা গেছে।
নতুন ডিসিদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন। বিশেষ করে জেলার পুলিশের সঙ্গে ডিসিদের মিলেমিশে একসঙ্গে কাজ করার ওপর জোর দেবেন তিনি। ক্ষমতা প্রয়োগকে কেন্দ্র করে জেলার পুলিশ সুপারের (এসপি) সঙ্গে ডিসিদের একটা দূরত্ব দেখা যায়। এ দূরত্ব ঘুচিয়ে আগামী নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা থাকবে জননিরাপত্তা সচিবের বক্তব্যে।
দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য বাজার মনিটরিংয়ের ওপর জোর দিয়ে ডিসিদের দিকনির্দেশনা দেবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। ভূমি ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব প্রশাসন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেবেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খলিলুর রহমান। কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে ডিসিদের ব্রিফ করবেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার। কৃষি উৎপাদন, কৃষকের কাছে সঠিক সময়ে সার ও বীজ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন ডিসিরা। নতুন ডিসিদের এ দায়িত্ব সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেবেন কৃষি সচিব।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ডিসিদের সরাসরি যোগাযোগ। বিশেষ করে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সঙ্গে ডিসিদের স্থানীয় প্রশাসন নিয়ে কাজ করতে হয়। এ বিষয়ে তাদের করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম।
বন্যাসহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে জেলা প্রশাসনকেই মূল দায়িত্ব পালন করতে হয়। বন্যা মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি ও বন্যান-পরবর্তী উদ্ধার অভিযান এবং ত্রাণ কার্যক্রমে ডিসিরা সরাসরি জড়িত থাকেন। এ বিষয়ে কাজের ধরন কেমন হবে, তা ডিসিদের বিস্তারিত জানাবেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা-সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে ব্রিফ করবেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান। বক্তব্য দেবেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন। জেলার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে ডিসিরা সরাসরি যুক্ত থাকেন। নিয়োগ কার্যক্রমের একটা অংশও তাদের হাতে থাকে। এজন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ে ডিসিদের দিকনির্দেশনা দেবেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরীকে ব্রিফ করবেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের সেবা-সম্পর্কিত বিষয়ে। স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ডিসিদের ব্রিফ করবেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। মাঠ প্রশাসনের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার বিষয়ে বক্তব্য দেবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন।
ব্রিফিং সেশনে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন। তিনি মাঠ প্রশাসনে ই-উদ্যোগ, উদ্ভাবন, এনআইএস, জিআরএস, এপিএ বিষয়ে ডিসিদের নির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে।
মন্তব্য করুন