বুড়িগঙ্গা লাগোয়া ঢাকার নবাববাড়ি ও ইসলামপুর এলাকার কাপড় ব্যবসার ইতিহাস ৫০০ বছরের পুরোনো। এক সময় ব্যবসায়ীরা মসলিন কাপড় সংগ্রহ করতেন এই এলাকা থেকে। কালের পরিক্রমায় কাপড়ের ধরন ও গুণগতমান পরিবর্তন হলেও ব্যবসা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এখানকার বাহারি কারুকাজের শাড়ি ও অন্যান্য কাপড়ের সুনাম রয়েছে সারা দেশে। ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও ইসলামপুর ও নবাববাড়ির কাপড়ের পাইকারি দোকানগুলোতে শাড়ি ও থ্রিপিসের সমাহার সাজিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের অপেক্ষায় আছেন পাইকারি কাপড় ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা শাড়ি বিতানের স্বত্বাধিকারী মোমেন বলেন, এখানে আটপৌরে থেকে শুরু করে অভিজাত শাড়ি আছে। ক্রেতারা তাদের চাহিদা মতো শাড়ি কিনতে পারেন। দামও কম। প্রতি বছর রোজার শুরুতে এখানে খুচরা ক্রেতার বেশ ভিড় থাকে। কিন্তু এবার ৭-৮ রোজা পার হলেও খুচরা ব্যবসায়ীদের তেমন দেখা মিলছে না। সারা দিনের মধ্যে ২-৪ জন খুচরা ব্যবসায়ী আসেন। কাপড়ের দাম শুনে তারা চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ কম দামি শাড়ির খোঁজ করেন।
ইসলামপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দৃশ্যমান তেমন বিক্রি নেই পাইকারি দোকানগুলোতে। হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে জামদানি, কাতান ও জর্জেটের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের ধারণা, ঈদে হালকা পাড়ের শাড়িগুলোই বেশি বিক্রি হবে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের বাজারমুখী না হওয়াটা পাইকারি ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানকার দোকাগুলোতে যেসব শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোতে আধুনিকতার সঙ্গে মিল রেখে তুলে ধরা হয়েছে দেশীয় সংস্কৃতির ছাপ। এসব শাড়ির মধ্যে রয়েছে স্বর্ণকাতান, বেনারসি, জর্জেট, গাদওয়াল, কাঞ্জিভরম, অপেরা কাতান, তসর কাতান, ধুপিয়ান, বালুচরি তাঁত, মসলিন কাতান, ঢাকাই জামদানি, স্বর্ণ কাতান, চুন্দ্রি কাতান, ফুলকলি কাতান, মসলিন জামদানি, চেন্নাই কাতানসহ বিভিন্ন ধরনের শাড়ি। এ ছাড়া থ্রিপিসসহ নারীদের বাহারি সব পোশাক রয়েছে।
তবে ভারতীয় শাড়ি ও পাকিস্তানি থ্রিপিসের চাহিদা সব সময় বেশি থাকে। ভারতীয় কাতানের মধ্যে আলাপ, কাঁঠাল, পঞ্চম কলি, কাঞ্জিভরম, অপেরা, খাদির চাহিদা বেশি। এ ছাড়া শিফন ও জর্জেটের চাহিদাও বেশ ভালো। যদিও এলসি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এ বছর অনেক ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে শাড়ি ও থ্রিপিস আনতে পারেননি।
নূর টেক্সটাইলের হাবিব জানান, ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছর ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার শাড়ি ও থ্রিপিস আমদানি করা হয়। আমাদের দেশে ভারতীয় শাড়ি ও পাকিস্তানি থ্রিপিসের বিশাল বাজার রয়েছে। কিন্তু এ বছর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, এ বছর বিক্রি নেই। তাই মাল নিতে কবে আসব বলতে পারছি না। অথচ গত বছর এমন সময় ব্যবসায়ীরা বারবার ফোন করে জানতে চেয়েছেনÑনতুন শাড়ি ও থ্রিপিস কবে আসবে। একে তো নিত্যপণ্যের চড়া দাম। তার ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভ্যাট-ট্যাক্স ও এলসি জটিলতা। বলতে গেলে গত বছরও ব্যবসা আশানুরূপ হয়নি। তাই এবার ব্যাংক লোন নিয়ে মাল কিনেছি।
সরেজমিন দেখা যায়, নবাবপুর ও ইসলামপুরে সাধারণত ২০০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় শাড়ি ও থ্রিপিস পাওয়া যায়। তবে জামদানি কিনতে হলে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। এ ছাড়া ২০ হাজারে মিলছে শিফন ও মসলিন। তবে মানভেদে এই দুই ধরনের শাড়ির জন্য কখনো কখনো ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়।
মসলিন ও জামদানি শাড়িতে বির্টস, দপকা, জরি কম্বিনেশনে বাহারি রকমের সব হাতের কাজ রয়েছে। সুতার কাজ, কারচুপি, ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্টসহ বিভিন্ন নকশাও রয়েছে এসব শাড়িতে। রকি প্রিন্ট শাড়ি ঘরের বিক্রেতা আলম বলেন, যে কোনো উৎসবে নকশা করা শাড়ির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ থাকে বেশি। অন্যকে দেখাতেই উৎসবের কাপড় কেনা হয়। তাই শাড়িটা হওয়া চাই গর্জিয়াস। আমাদের এখান থেকে যে শাড়িগুলো বিক্রি হয় তার সবই নকশা করা। দামও অনেক কম। তবে গতবারের তুলনায় এবার খুচরা ব্যবসায়ী খুবই কম।
ফরিদপুর থেকে ইসলামপুরে শাড়ি কিনতে আসা খুচরা শাড়ি বিক্রেতা নারায়ণ বলেন, এ বছর বিক্রি একবারে নেই বললেই চলে। গত বছর রোজার এই সময় ক্রেতার অনেক চাপ ছিল। কিন্তু এবার খুচরা শাড়ির বাজার ফাঁকা বললেই চলে।