বরেন্দ্র অঞ্চলে চৈত্র ও বৈশাখ মাসে যেন প্রকৃতি রুক্ষ হয়ে ওঠে। তাই খরা-তাপ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সড়কে, বাড়ির পাশে, জমির আইলে লাগানো হয় তালগাছ। এ গাছগুলোই বর্তমানে এই অঞ্চলের রুক্ষ প্রকৃতির মধ্যে প্রশান্তি ও শোভাবর্ধনকারী হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে বিশেষ করে নওগাঁর নিয়ামতপুরের একটি সড়ক দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে লাগানো তালগাছের কারণে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। বৃক্ষপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখর থাকে এ ‘তালসড়ক’।
সবুজ মাঠের বুক চিরে নিয়ামতপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে হাজীনগর ইউনিয়নে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম ঘুঘুডাঙ্গা। মজুমদার মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা। দুই ধারে প্রায় ৬০০টি তালগাছ সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে। এসব গাছে ঝুলছে বাবুই পাখির বাসা। এ যেন কবিতার পটে আঁকা ছবি! কোনো আগন্তুক এ সড়কে এলেই বিমোহিত হয়ে যান এক অপার্থিব সৌন্দর্যে।
তালগাছ শুধু যে উচ্চতায় সব গাছকে ছাড়িয়ে যায়, বিষয়টি এমন নয়। এর সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতিরও সংযোগ রয়েছে। আশির দশকে তালপাতার পাখার বাতাস না হলে মন জুড়াত না। বর্তমানে এসবের ব্যবহার কমেছে। তবে আজও তালের পিঠা, গুড়ের পায়েস কিংবা তালের রুটি না খেলে বাঙালির মন জুড়ায় না। এ ছাড়া বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে তালগাছের কোনো বিকল্পই নেই।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সূত্রে জানা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলে তালগাছসহ অন্য বড় বড় গাছ হারিয়ে যাওয়ায় বজ্রপাত বেড়ে গেছে। এতে কৃষকের প্রাণহানি বাড়ছে।
ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামের ফারুক বলেন, গত কয়েক বছর থেকে এ সড়কটি তালতলী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ প্রতিদিনই দেখতে আসছে। তালতলীতে স্থায়ীভাবে কয়েকটি দোকান হওয়ায় বেশ কয়েকজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
বৃক্ষপ্রেমী মোস্তাকিন হোসেন বলেন, ফেসবুক ও ইন্টারনেটে এ জায়গাটির কথা শুনেছি। তবে কখনো আসা হয়নি। সময় করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছুটে এলাম। জায়গাটি অনেক সুন্দর।
হাজীনগরের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তালগাছের ছায়ায় এক অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করি। সড়কের দুই পাশে দেখা মিলবে সবুজ ফসলের ক্ষেত। এটি একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে, অন্যদিকে এ জায়গাটি পর্যটকের কাছে এখন বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ বলেন, গ্রামে এখন তেমন তালগাছ দেখা যায় না। এখানে একসঙ্গে বহু তালগাছ এবং নির্মল পরিবেশ দেখে সত্যি মুগ্ধ হই। তালগাছ শুধু সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নয়, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।