জান্নাতুন নুর দিশা
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪, ০২:১৬ এএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রকৃতি

ভাঁটফুল: বেহুলা ও দুর্গার স্মৃতি

ভাঁটফুল: বেহুলা ও দুর্গার স্মৃতি

জীবনানন্দের কবিতায় বাংলার নদী আর মাঠকে সঙ্গে নিয়ে যে ফুল কেঁদেছিল বেহুলার পায়, তার নাম ভাঁটফুল। সাদার মাঝে বেগুনি রঙের হালকা বিস্তারে দেখতে ভারি মিষ্টি লাগে ফুলটিকে। প্রকৃতিতে এখন বসন্ত, চৈতি হাওয়ায় দোল খাচ্ছে নানা রঙের কতশত ফুল। তবু এর মধ্যে আমার হৃদয়মন জুড়ে যে ফুলের রং, রূপ, গন্ধে মাতম লেগেছে, তা আর কিছু নয়, গ্রামবাংলার পথে-প্রান্তরে অনাদরে ফুটে থাকা ভাঁটফুল।

ফুলটির আরও কয়েকটি নাম রয়েছে। কেউ ডাকে ঘেঁটুফুল, কেউবা বলে বনজুঁই। পৌরাণিক নাম ঘণ্টাকর্ণ। নাম যাই হোক, মার্চ-এপ্রিল মাস এলেই আপন রূপে-যৌবনে উদ্ভাসিত হয়ে পল্লীবাংলার কোমল মাটির পরম আদরে সারি সারি বেড়ে ওঠে গুল্মজাতীয় এই ফুল। ঢাকা থেকে পূর্বাঞ্চলীয় লোকাল ট্রেনে নরসিংদী যাওয়ার পথে মিষ্টি সকালগুলোতে আমার নিত্যই দেখা হয়ে যায় তাদের সঙ্গে। টঙ্গী স্টেশন পেরোলেই যেখান থেকে শুরু হয় বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, শীতলক্ষ্যা নদীর জলে ধোয়া মাটিতে আরও অনেক গুল্মলতার সঙ্গে এই সাদা ফুলেরা যেন হাওয়ার তালে তালে নাচে। আমি ট্রেনের জানালায় চোখ রাখি, ট্রেন চলতে থাকে, ধীরে ধীরে পেরোতে থাকে পুবাইল স্টেশন, আড়িখোলা স্টেশন, তারপর ঘোড়াশাল স্টেশন আসতে আসতে আরও বিপুলসংখ্যক ভাঁটফুলের বন দৃশ্যমান হতে থাকে। এই সাদা-শুভ্র ফুলেদের দেখে কখনো আমার মনে পড়ে জীবনানন্দের কবিতায় উঠে আসা বেহুলাকে, কখনো বা মনে পড়ে ভাঁটফুলের রূপমুগ্ধ বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালীর দুর্গা কিংবা অপুর কথা। বিভূতিভূষণের ভাষায়, ‘প্রথম বসন্তের দিনে ঝোপে ঝোপে নতুন কচি পাতা, ঘেঁটুফুলের ঝাড় পোড়ো ভিটাটা আলো কবিয়া ফুটিয়া আছে, বাতাবি লেবু গাছটায় কয়দিনের কুয়াশায় ফুল অনেক ঝরিয়া গেলেও থোপা থোপা সাদা সাদা ফুল ওপরের ডালে চোখে পড়ে।’ কেবল সাহিত্য রসের জোগান নয়, ভাঁটের গুরুত্ব রয়েছে লৌকিক বিশ্বাসে তার ঔষধি গুণের জন্যও। জ্বরে-ঠান্ডায়, উদরাময়ে কিংবা চর্মরোগ সারাতে একসময় হরহামেশাই গ্রামের মানুষ ব্যবহার করত এর পাতার রস।

ভাঁট গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ। বৈজ্ঞানিক নাম Clerondendron viscosum। এ আমাদের বড় নিজস্ব, অতি পরিচিত ফুল। আদিনিবাস এ তল্লাটেই বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারে। ভাঁটফুলে রয়েছে তীব্র সুবাস, তবে রাতেই তা বেশি ছড়ায়। সাদা রঙের ছোট ফুলটিতে থাকে পাঁচটি পাপড়ি, প্রতিটি পাপড়িতে বেগুনি রং ঢেউ খেলে যায়। একসঙ্গে ফুটে থাকে বলে এই ফুল পথিকের মন হরণ করে, পথের ক্লান্তি দূর করে আর মনে করিয়ে দেয় এই তো এসেছে বসন্ত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্বাস্থ্য পরামর্শ / রান্নায় সরিষার তেলে ঝুঁকি ও অসংক্রামক রোগ

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আবারো দুর্ঘটনা, নিহত আরও ৩

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে ৫৮% মার্কিনি : রয়েটার্স

স্পেনের বাইরে লা লিগার ম্যাচ খেলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাল ফুটবলাররা

দুবাইয়ে যাওয়ার ৪ মাস পরই ৩ কোটির লটারি জিতলেন প্রবাসী

এনজো ফার্নান্দেজের মুখে রিয়াল মাদ্রিদের নাম, বাড়ছে গুঞ্জন

কেশবপুরে নারী সমাবেশ/ / ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি

সাভারে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দাওয়াতি মাসের শুভ উদ্বোধন

তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন, নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রীও হবেন : এ্যানি

দলবদলের বাজারে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর রেকর্ড ভাঙা খরচ

১০

ধর্মগড় সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক চার বাংলাদেশি

১১

হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে মোদিকে ওয়েইসির প্রশ্ন

১২

জাকসুতে প্যানেল দ্বন্দ্ব, পদত্যাগ করে বাগছাস নেতার মিষ্টি বিতরণ

১৩

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা আন্তর্জাতিক মানের করতে চাই : বেবিচক চেয়ারম্যান

১৪

‘আ. লীগ বিদ্যুৎ খাতে চুরির লাইসেন্স দিয়েছিল’

১৫

আ.লীগ নেত্রী রুনু গ্রেপ্তার

১৬

ইসির ইউটিউব চ্যানেল চালু, মিলবে যেসব তথ্য

১৭

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তারের দাবি শিক্ষার্থী

১৮

চার বিভাগে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি, পাহাড়ধসের আশঙ্কা

১৯

ভোলায় পাঁচ দিন ২০ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

২০
X