ঈদুল ফিতর সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে রাজধানীর বড় বিপণিবিতানের পাশাপাশি ছোট ছোট মার্কেট ও ফুটপাতে কেনাকাটা জমে উঠেছে। মধ্য ও নিম্ন আয়ের লোকজন অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে সেখান থেকে কিনছেন ঈদের পোশাক। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তান, জিপিও, বায়তুল মোকাররম, মৌচাক, কারওয়ান বাজার ও নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
নিউমার্কেট সায়েন্স ল্যাবের মোড় থেকে নীলক্ষেত মোড়ের রাস্তার দুপাশে চৌকি-টেবিল পাতা দোকানগুলোতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। নূর ম্যানশনের সামনে ফুটপাতের এক দোকানের সামনে কথা হয় কেয়া আরফির সঙ্গে। তিনি একটি ব্র্যান্ডের শোরুমের কর্মী। স্বামী, স্কুল পড়ুয়া ছেলে ও ছোট্ট শিশুকন্যা নিয়ে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় থাকেন। ছেলের জন্য ঈদপোশাক নিতে চাইছেন। বলেন, দাম এত বেশি যে, পছন্দ হওয়ার পরও কেনা সম্ভব হচ্ছে না। দিন যত যাচ্ছে, সবকিছুর দামও তত বাড়ছে। কেয়ার মতো অসংখ্য মানুষ ফুটপাত থেকে সাধ্যের মধ্যে পোশাক, জুতা, কাপড়, চশমা, ঘড়িসহ নানা প্রসাধনী পণ্য কিনছেন।
গুলিস্তানে গোলাপশাহ মাজার থেকে জিপিও এবং বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর দক্ষিণ গেট পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে বসেছে নতুন সব বাহারি পাঞ্জাবির দোকান। কেউ ভ্যানে করে কেউ আবার রাস্তায় চাদর পেতে বিক্রি করছেন এসব পাঞ্জাবি। তোপখানা রোডের ফুটপাতে সারা বছর শার্ট বিক্রি করেন আলম ইসলাম। সপ্তাহখানেক হলো পাঞ্জাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, জনগণের হাতে টাকা কম। তাই হয়তো কম কিনছে মানুষ। ঈদের কারণে পাঞ্জাবি তুলেছেন দোকানে; ২০০-৩০০ টাকা পিস বিক্রি করছেন। এদিকে গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া মার্কেট, ঢাকা ট্রেড সেন্টার ও সুন্দরবন মার্কেটের সামনের ফুটপাতে জুতা বিক্রির হার ছিল চোখে পড়ার মতো। এখানকার জুতা ব্যবসায়ী মোজাম্মেল জানান, আমরা এমন বিক্রির জন্য অপেক্ষা করি সারা বছর। রমজানের বেশ কয়েকদিন পার হওয়ার পরও ক্রেতার দর্শন না পেয়ে বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন ধরে আমরা দম ফেলার সময় পাচ্ছি না। তিনি আরও বলেন, তাদের মূল বিক্রি শুরু হবে আগামীকাল (আজ রোবাবার) থেকে। কারণ, শিল্পকারখানা বন্ধ হলে মানুষ গ্রামের বাড়ি ফিরতে শুরু করবে। তখন বিক্রি ভালো হবে। ক্রেতা মো. জামাল বলেন, গুলিস্তানের ফুটপাতে ৩ হাজার টাকা দাম চাওয়া জুতা আমি দামাদামি করে ৫০০ টাকায় কিনলাম। এখানে যদি ভালোমন্দ চিনে দামাদামি করতে না পারেন, তাহলে ঠকে যাবেন।
অগ্নিকাণ্ডের পর বঙ্গবাজারে এ বছর দ্বিতীয় ঈদবাজার চলছে। এখানে আগের মতো দোকানপাট না থাকলেও অনেক নিম্নবিত্ত মানুষের সাধ্যের মধ্যে সেরা পোশাক বাজার। বঙ্গবাজারে তাঁবুর নিচে প্যান্টের দোকান রয়েছে মো. জালালের। তিনি বলেন, আমরা অনেক কষ্টে ব্যবসা করছি। আগুন লাগার পর আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। তবে এ বছর ঈদ উপলক্ষে বিক্রি ভালো ছিল।
মৌচাক মার্কেটের আশপাশের ফুটপাতগুলোতে নেই তিল পরিমাণ ঠাঁই। চারপাশে মানুষ আর মানুষ। কয়েকজন কলেজ শিক্ষার্থী ফুটপাতের একটি দোকানে টি-শার্ট দরদাম করছিল। তাদের মধ্যে আজম উদ্দীন নামের এক ক্রেতা বলেন, এখানে কম টাকায় ভালোমানের জিনিস পাওয়া যচ্ছে।