তারিকুল ইসলাম, শেরপুর
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪, ০২:০৮ এএম
আপডেট : ০৫ মে ২০২৪, ০৭:৪৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

শেরপুরে গারো পাহাড়ের সবুজ বনে জ্বলছে আগুন

দুই সপ্তাহে ১৫ অগ্নিকাণ্ড
শেরপুরে গারো পাহাড়ের সবুজ বনে জ্বলছে আগুন

ভারতের সীমান্তঘেঁষা উত্তরের জনপদ শেরপুর জেলার তিনটি উপজেলায় বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে বনভূমি। গারো পাহাড়ের এই বনভূমিতে যখন-তখন আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গারো পাহাড়ে শাল-গজারির বনের অন্তত ১৫টি স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুড়ছে পাহাড়ের পর পাহাড়। তিনটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন পোড়ানোর ঘটনা ঘটছে ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া রেঞ্জ এলাকায়। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত সুফল বাগানের কোনো ছোট গাছ সেখানে আর নেই বললেই চলে।

আগুনে শুধু বিভিন্ন গাছপালা ও প্রাণী ধ্বংস হচ্ছে না। এর সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে মাটির গুণাগুণ, ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতিও। অভিযোগ উঠেছে, আগুন ধরানোর পেছনে বেশ কয়েকটি চক্র রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ে আগুন দিয়ে রাতের অন্ধকারে বনের মূল্যবান গাছ চুরি করছে একটি চক্র। পাশাপাশি অসাধু বালু ও পাথর ব্যবসায়ীরা অসৎ উদ্দেশ্যে বনের ভেতর আগুন দিয়ে ভীতির সৃষ্টি করছে। আবার বনের জমি দখল ও লাকড়ি সংগ্রহ করতে একদল দুর্বৃত্ত আগুন দিচ্ছে। একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নতুন গজিয়ে ওঠা চারাগাছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বনের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকিতে পড়বে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

জেলার সীমান্ত সড়কের রাংটিয়া রেঞ্জের গজনি বিট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের চারটি স্থানে বিশাল এলাকাজুড়ে আগুন জ্বলছে। এ ছাড়া আরও দুটি স্থানেও আগুন জ্বলতে দেখা যায়। স্থানীয়রা বলেন, কে বা কারা ঘণ্টাখানেক আগে সেখানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে এ বনে আগুন দেওয়া হয়। এতে নতুন করে সেখানে আর কোনো গাছ বেড়ে উঠতে পারছে না। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। আগুনে বিনষ্ট হচ্ছে বন্য প্রাণীর আবাসস্থল। বিলুপ্ত হচ্ছে বন্য প্রাণী, কীটপতঙ্গ ও পাখি।

জানা গেছে, ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের আওতায় তিনটি বিট কার্যালয় রয়েছে। এ তিনটি বিট কার্যালয়ের আওতায় বনভূমি রয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৮৮০ একর। এর মধ্যে বেশিরভাগ জমিতে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা রয়েছে। প্রতি বছর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন গাছের পাতা ঝরে পড়ে। বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে চলাচলের জন্যে সড়কপথ থাকায় এ সময় খুব সহজেই দুর্বৃত্তরা বনে আগুন দিয়ে সরে পড়ে। ঝরা পাতাগুলো শুকনা থাকার কারণে আগুন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে।

রাংটিয়া এলাকার বাসিন্দা হামিদ মিয়া জানান, গত সোমবার বিকেলে রাংটিয়া রেঞ্জের ছোট গজনি এলাকায় গিয়ে দেখি পাহাড়ের ভেতর থেকে উঠছে ধোঁয়া। আগুনের পুড়ছে বনের কীটপতঙ্গ, গাছপালা, লতা-গুল্মসহ ছোট ছোট চারা গাছ। কিন্তু বন বিভাগ বা ফায়ার সার্ভিসের কোনো লোককে সেখানে দেখা যায়নি।

ছোট গজনি এলাকার টারু মিয়া নামের এক কৃষক বলেন, আগুন যখন লাগে তখন আর কিছু করার থাকে না। গাছের পাতা প্রায় দুই ফুট পর্যন্ত জমে আছে। এই পাতা অপসারণ করলে আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ত না।

শিক্ষক রহমত আলী বলেন, শুস্ক মৌসুমে বনের ঝরা পাতায় প্রতি বছরই আগুনের ঘটনা ঘটে। মাঝেমধ্যে বিট কার্যালয়ের আশপাশের বনেও আগুন জ্বলতে দেখি। কিন্তু এসব বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এভাবে চলতে থাকলে শিগগির বন ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই অতিসত্বর কঠোর নজরদারি বাড়িয়ে দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনা হোক।

পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিন বলেন, গারো পাহাড়ে আগুন দিয়ে গাছপালা ধ্বংস এবং প্রাণী ও কীটপতঙ্গ হত্যা করছে একদল দুর্বৃত্ত। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আমাদের অনুরোধ, বন বাঁচাতে দ্রুত এসব দুর্বৃত্তকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

পরিবাশবাদী যুব সংগঠনের সভাপতি কবি ও সাংবাদিক রফিক মজিদ বলেন, এই বন ও বনের প্রাণী রক্ষায় আমরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছি। সামাজিকভাবে মানুষকে সচেতন করার কাজ করে যাচ্ছি। এ ছাড়া আমরা মানববন্ধন, প্রতীকী অনশনসহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একাধিকবার স্মারকলিপিও দিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। এই গারো পাহাড় রক্ষায় আমরা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন, বছরের এ সময়টায় গাছের পাতা ঝরে পড়ে। কোথাও কোথাও সেগুলো দুই-তিন ইঞ্চি উঁচু স্তরে জমা হয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দিলে তা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। আমরা এক জায়গা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না আনতেই শুনি আরেক জায়গায় আগুন জ্বলছে। আমরা আছি মহাবিপদে। কারণ, আমাদের জনবল খুবই কম। কম জনবল দিয়ে এত বড় পাহাড়ের আগুন নিয়ন্ত্রণ বেশ কঠিন। তার পরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

ক্যাপশন

১: রাতের আঁধারে আগুনে জ্বলছে গারো পাহাড়

২: দিনের বেলায় আগুনে জ্বলছে গারো পাহাড়

৩: আগুনে অন্যান্য গাছের পাশাপাশি জ্বলে গেছে বেতগাছ

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শ্রীলঙ্কায় ভারি বৃষ্টিতে ভূমিধস-বন্যা, নিহত ৪০

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মাউশির কঠোর নির্দেশনা

স্ত্রী ও দুই সন্তান হত্যায় মামলা, প্রধান আসামি কারাগারে

‎২২ ডিসেম্বরেই জকসু নির্বাচন চান জবি ছাত্র অধিকার পরিষদ

পাওয়ারপ্লেতেই ৪ উইকেট গেল বাংলাদেশের

সুদের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব, ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা

শুক্রবার থেকে টঙ্গীতে ৫ দিনের জোড় শুরু

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ফের পরিবর্তন, বাড়ল না কমলো?

দেশের নারী সমাজ বিএনপির প্রতি আস্থাশীল : সেলিমা রহমান

ক্রিকেটে ‘গ্রোভেল’ কী — এবং কেন এটি এত কুখ্যাত?

১০

জরাজীর্ণ ভোটকেন্দ্র ও সিসি ক্যামেরার তথ্য গেল ইসিতে

১১

আমার শরীর, আমার সম্পদ : ঐশ্বরিয়া রাই

১২

হোয়াটসঅ্যাপের ভয়েস মেসেজ টেক্সটে রূপান্তর করবেন যেভাবে

১৩

আমরা ৫৩ বছর ধোঁকা খেয়েছি আর নয় : চরমোনাই পীর

১৪

আফগানিস্তানের নাগরিকদের সব ইমিগ্রেশন আবেদন স্থগিত যুক্তরাষ্ট্রের

১৫

শরীয়তপুরকে জাতীয় প্ল্যানের মধ্যে আনা উচিত : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

১৬

নগর পরিচালন ও স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন শীর্ষক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত

১৭

আপ বাংলাদেশের এক নেতাকে অব্যাহতি

১৮

টেক্টর ঝড়ে বাংলাদেশের সামনে কঠিন লক্ষ্য

১৯

আইপিএলে দল পেলেন না অজি অধিনায়ক

২০
X