চলতি বছর ধর্ম মন্ত্রণালয় ছাড়া অন্য মন্ত্রণালয়-বিভাগ কিংবা দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী দলে নিতে নিষেধ করেছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ফলে ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই নির্দেশ মেনে সহায়তাকারী দলে নিজস্ব মন্ত্রণালয় ছাড়া কাউকে অন্তর্ভুক্ত করেনি। তবে হজ প্রশাসনিক দলে নেওয়া হয়েছে অন্যান্য মন্ত্রণালয়-বিভাগের কর্মকর্তাদের। তদবিরের মধ্য দিয়ে এসব কর্মকর্তা হজ প্রশাসনিক দলে ঢুকেছেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
কর্মকর্তারা জানান, প্রশাসনিক দল গঠনের জন্য অন্য মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তাদের নেওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক। তবে এ দলে ঢুকতে নানা তদবির হয়েছে। এখনো তদবির-সুপারিশ থেমে নেই। ধারণা করা হচ্ছে, আরও কিছু কর্মকর্তাকে হজ প্রশাসনিক দলে অন্তর্ভুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। ইতোমধ্যে ৫৫ জনের প্রশাসনিক দল গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান কালবেলাকে বলেন, হজ প্রশাসনিক দল আর বড় হবে না। তবে প্রধানমন্ত্রী যদি চান, তাহলে হয়তো আরও দু-চারজন যুক্ত হতে পারে।
সূত্র জানায়, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিবদের সুপারিশের কারণে প্রভাবশালী এবং সৌভাগ্যবান কর্মকর্তারা হজ প্রশাসনিক দলে জায়গা পেয়েছেন। অপেক্ষাকৃত ‘নিরীহ’ কর্মকর্তারা আবেদন করেও এ সুযোগ পাননি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে।
বিষয়টি অস্বীকার করে ধর্ম সচিব আ. হামিদ জমাদ্দার বলেন, তদবিরের বিষয়টি একেবারেই ভিত্তিহীন। আমরা কোনো অন্যায় করে কাউকে হজ প্রশাসনিক দলে অন্তর্ভুক্ত করিনি। যেসব মন্ত্রণালয়ের সচিব কিংবা মন্ত্রী যে কর্মকর্তাকে সিলেক্ট করেছেন, আমরা তাদের নিয়েছি। হজ প্রশাসনিক দলে এবার মাত্র ৫৫ জন কর্মকর্তা যাচ্ছেন।
একজন যুগ্ম সচিব কালবেলাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী দলে যেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব জনবল নেওয়া হয়। বিশেষ করে পবিত্র হজের সময় সৌদিতে অবস্থানরত আরবি ভাষাজ্ঞানসম্পন্ন ও মক্কা-মদিনার রাস্তাঘাট সম্পর্কে সম্যক অবগত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, কর্মী ও নাগরিকদের মধ্য থেকে হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী নিয়োগের জন্য নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তবে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সৌদিতে হজ ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হজ মৌসুমে নিজস্ব জনবল থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিয়োগ দিতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, হজ প্রশাসনিক দলটি শুধু ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা দিয়ে গঠন করা সম্ভব নয়। ফলে বাধ্য হয়েই অন্যান্য মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও দপ্তর-সংস্থা থেকে কর্মকর্তাদের নিতে হচ্ছে। তবে যারা বেশি প্রভাবশালী এবং তদবির করতে পেরেছেন, তারাই দলে ঢুকতে পেরেছেন। প্রশাসনিক দলে যুক্ত হয়ে সরকারি খরচে হজে যেতে এখনো অনেকে তদবির করছেন।
সূত্র জানায়, ৪ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী হজ প্রশাসনিক দল এবং হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী দলে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এর মধ্যে যারা নিজেদের জন্য জোরালোভাবে সুপারিশ করতে পেরেছেন তারাই সুযোগ পেয়েছেন।
হজ প্রশাসনিক দলের প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, ধর্ম মন্ত্রণালয় ছাড়াও অন্যান্য দপ্তর-সংস্থার অর্থাৎ পুলিশ, এনএসআই, ডিজিএফআই ও বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা হজ প্রশাসনিক দলে সৌদি যাচ্ছেন। সৌদি আরবে এ বিশাল বহরের হজ প্রশাসনিক দলের মূলত কোনো কাজ নেই। তারা হজ করার উদ্দেশ্যেই যেতে আগ্রহী।
সচিব মো. আ. হামিদ জমাদ্দার বলেন, এবার সৌদিতে অবস্থানরত শিক্ষার্থী ও কর্মীদের মধ্য থেকে হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী দল গঠন করা হবে। সত্যি বলতে এখান থেকে যাদের নেওয়া হয় তারা আসলে কোনো কাজেই লাগে না। বরং তাদের পাহারা দিতে অতিরিক্ত লোকের প্রয়োজন হয়।
হজ প্রশাসনিক দলের একটি প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক-৩ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব ছুমিয়া খানম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) মো. শফিউল আলম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আ ন ম নাজিম উদ্দীন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব (যুগ্ম সচিব) ঈদতাজুল ইসলাম, ডিজিএফআইয়ের একজন লেফট্যান্ট কর্নেল, অর্থ বিভাগের উপসচিব ফিরোজ হাসান, মিরপুর দারুস সালাম থানার ওসি নজরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা পরিবার কল্যাণ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আবদুল কাদের, পরিকল্পনা কমিশনের আত্মসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের উপপ্রধান সৈয়দা নুরমহল আশরাফী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব রাশেদ হোসেন চৌধুরী, সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব আশ্রাফ আহমেদ রাসেল, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আশরাফুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জাবের হায়দার, এনএসআইয়ের যুগ্ম পরিচালক পারভেজ মাহমুদ হোসেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক (অর্থ) মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি-ডিবি ইলিয়াস হোসেন, পুলিশ হেডকোয়ার্টাসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ফরিদা পারভীন, রেলওয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টাসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজওয়ান দীপু, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিলকিস আফরোজা সিদ্দিকা হজ প্রশাসনিক দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
এদিকে গতকাল সোমবার হজ প্রশাসনিক দলের একটি প্রতিনিধিদল সৌদি আরবে রওনা হয়েছে। সর্বশেষ দল আগামী ৪ জুন সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার কথা।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে এবার হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন ৮৩ হাজার ১৮৫ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ২৫০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন যাবেন। সৌদির সঙ্গে হজ চুক্তি অনুযায়ী এবার বাংলাদেশ ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা পেয়েছিল। তবে এ কোটা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। পাঁচ দফা নিবন্ধনের সময় বাড়িয়েও হজে যাওয়ার লোক পায়নি ধর্ম মন্ত্রণালয়।