মহাসমুদ্র কিংবা সমুদ্র—মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঝকঝকে নীলাভ বিপুল জলরাশি। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, দিন দিন সমুদ্রের পানি হয়ে উঠছে সবুজাভ থেকে হালকা বা গাঢ় সবুজ রঙের। গবেষকরা এ জন্য দায়ী মনে করছেন জলবায়ু পরিবর্তনকেই। খবর বিবিসির।
বিষুবরেখার নিম্ন অক্ষাংশের কাছে সমুদ্রের পানি যেখানে গাঢ় সবুজ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে অন্যান্য স্থানে হয়ে যাচ্ছে গাঢ় নীল। আর এসবই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কুফল। যদিও খালি চোখে এ পরিবর্তন খুব একটা ধরা পড়বে না। স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করে করা গবেষণায় সে পরিবর্তনের চিত্র স্পষ্ট।
মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রের ফাইটোপ্লাঙ্কটনের ভারসাম্যের পরিবর্তন হচ্ছে। গভীরভাবে যার প্রভাব পড়ছে সমুদ্রের পানি তথা পানির রঙে। নতুন এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
রং পরিবর্তনের বিষয়টি সহজেই ভাষায় প্রকাশের মতো নয়, কিংবা চোখে পড়ার মতোও নয়। এটা শুধু সামুদ্রিক চিংড়ি বুঝবে আর প্রজাপতিরা দেখতে পাবে। বিবিসিকে এমন মন্তব্য করেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওশিনোগ্রাফি সেন্টারের বি বি কায়েল।
বিশ্বজুড়ে সমুদ্রের পানির রং ঠিক কতখানি বদলেছে, তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে গত মাসে প্রকাশিত ইউরোপিয়ান স্টেট অব দ্য ক্লাইমেট রিপোর্টে। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপানিকাস ক্লাইমেট সার্ভিসের করা গবেষণা। এতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের এপ্রিলে নরওয়েজিয়ান সাগর এবং যুক্তরাজ্যের উত্তরের আটলান্টিক মহাসাগরে ক্লোরোফিলের পরিমাণ স্বাভাবিক গড়ের চেয়ে ২০০ থেকে ৫০০ গুণ বেশি। অন্যদিকে আইবেরিয়ান উপদ্বীপের পশ্চিম দিকে সমুদ্র উপকূলে এর পরিমাণ ৬০ থেকে ৮০ ভাগ কম। আবার ভূমধ্যসাগরে ক্লোরোফিলের হার স্থানভেদে গড়ের চেয়ে ১০০ গুণ পর্যন্ত বেশি। উভয় ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক গড় ১৯৯৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যকার ক্লোরোফিলের পরিমাণ হিসাব করে গড় নির্ধারণ করা হয়েছে।
দিন দিন সমুদ্রের পানির এ পরিবর্তনের কারণ হিসেবে পানির উষ্ণতা বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন গবেষকরা। প্রতি বছরই এ উষ্ণতা আগের বছরের চেয়ে বাড়ছে। বর্তমানে তা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বি বি কায়েল এই প্রতিবেদনের প্রধান গবেষক।
নাসার স্যাটেলাইট ব্যবহার করে দুই দশকের তথ্যের তুলনামূলক বিচারে এ গবেষণা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিশ্বের ৫৬ শতাংশেরও বেশি সমুদ্রের পানির রং গত দুই দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন হয়েছে। যার আয়তন পৃথিবীর স্থলভাগের চেয়ে বেশি। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের এলাকাগুলোয় রং পরিবর্তনের হার বেশি।
গবেষণা বলছে, সমুদ্রের রং পরিবর্তনের অর্থ সেখানকার জীবনচক্র বা বাস্তুসংস্থানের পরিবর্তন। সামুদ্রিক প্রাণীদের খাদ্যচক্রের সর্বনিম্নে অবস্থান করে প্ল্যাঙ্কটন। যদি প্ল্যাঙ্কটন বাড়ার কারণে পানির রং পরিবর্তন ঘটে, তাহলে তার কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে।
সমুদ্রের পানিতে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন উপস্থিত আসে সবুজ ক্লোরোফিল থেকে। বিজ্ঞানীরা তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ভালোভাবে বুঝতে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন পরীক্ষায় আগ্রহী। যদিও এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া বলে জানান তারা।