সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৪, ০২:৪৩ এএম
আপডেট : ২২ মে ২০২৪, ০৯:১৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

তৌহিদের ঠিকাদার স্ত্রী হলফনামায় ‘গৃহিণী’

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচন
তৌহিদের ঠিকাদার স্ত্রী হলফনামায় ‘গৃহিণী’

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা ও উত্তেজনা দিন দিন বাড়ছে। এবার আলোচনা তৈরি হয়েছে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের হলফনামায় তথ্য গোপন করা নিয়ে। টানা দুবারের উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী স্ত্রীকে ঠিকাদার বানিয়ে দেদার ঠিকাদারি ব্যবসা করলেও হলফনামায় দেখিয়েছেন ‘গৃহিণী’। অথচ উপজেলার উন্নয়ন প্রকল্পে তার স্ত্রীর প্রতিষ্ঠান সালমা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদারির বিষয়টি এক রকম ‘ওপেন সিক্রেট’।

নির্বাচন অফিসসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান চেয়ারম্যান তৌহিদুল গত ২৪ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনে হলফনামা দাখিল করেন। সেখানে নিজেকে ব্যবসায়ী এবং স্ত্রী উম্মে সালমাকে গৃহিণী হিসেবে উল্লেখ করেন। হলফনামায় স্ত্রীকে গৃহিণী দেখালেও তার স্ত্রী সালমা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক। প্রতিষ্ঠানের

ঠিকানা—বরুমছড়া, আনোয়ারা, চট্টগ্রাম। এ নামে পূবালী ব্যাংক আনোয়ারা শাখা থেকে টেন্ডার প্রক্রিয়ার জন্য একটি লেটার অব কমিটমেন্ট প্রদান করা হয়। চিঠিটি উপজেলা প্রকৌশলীর বরাবরে ইস্যু করা। যেখানে ৫৯ লাখ টাকার আটটি টেন্ডারের কথা উল্লেখ রয়েছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের উন্নয়ন প্রকল্প, উন্নয়ন তহবিল, বাজার ও রাজস্ব খাতের অধীনে এসব টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

উপজেলা প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এটি শুধু টেন্ডারের একটি প্যাকেজের নমুনা। বাস্তবে গত ১০ বছর ধরে তিনি নিয়মিতই ঠিকাদারি করে গেছেন। উপজেলার বেশিরভাগ কর্মকর্তা তৌহিদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এসব নথিপত্র যাতে কারও হাতে না যায় সেজন্য কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। স্বামী উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরাও যোগসাজশের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সালমা এন্টারপ্রাইজের মালিক উম্মে সালমা উপজেলা পরিষদে না এসেও নিয়মিত সরকারি কাজ পাওয়া নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, সালমা এন্টারপ্রাইজের নামে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হয়। যার নম্বর ৭১৯। বরুমচড়া ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম তাতে স্বাক্ষর করেন। ট্রেড লাইসেন্সে নাম উম্মে সালমা, ঠিকানা—কমিউনিটি সেন্টার বরুমচড়া, ব্যবসার ধরন ঠিকাদার বলে উল্লেখ রয়েছে। উম্মে সালমার যে আয়কর প্রত্যয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে সেটির নম্বর—৫৭১৯১৮৪৯৩৩৭৬। সেখানে বর্তমান ঠিকানা আবদুল বারী মুন্সির বাড়ি, বরুমড়ার ৯নং ওয়ার্ড, আনোয়ারা লেখা রয়েছে।

উম্মে সালমার জাতীয় পরিচয়পত্রে দেখা যায়, স্বামীর নাম তৌহিদুল হক চৌধুরী। বর্তমান ঠিকানাও আবদুল বারী মুন্সি, বরুমচড়া, আনোয়ারা; যা চেয়ারম্যান তৌহিদের স্থায়ী ঠিকানা। স্ত্রীর নাম গোপন করে চেয়ারম্যান তৌহিদের ঠিকাদারি ব্যবসায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। তাদের মতে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নাম ভাঙিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পাশাপাশি স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি করে প্রচুর টাকা কামিয়েছেন তৌহিদুল।

সালমা এন্টারপ্রাইজের মালিক উম্মে সালমা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হকের স্ত্রী—এ তথ্য নিশ্চিত করে উপজেলা প্রকৌশলী তাসলিমা জাহান বলেন, ‘প্রতি বছর ৪০ থেকে ৪৮টি প্যাকেজে কাজ হয়। সেখানে সালমা এন্টারপ্রাইজের নামে কী কী কাজ হয়েছে জানা নেই। তবে এবার এই প্রতিষ্ঠান কোনো কাজ পায়নি। এই মুহূর্তে বিস্তারিত জানাও নেই। সব ফাইল ইউএনও অফিসে চলে গেছে।’

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদুল হক চৌধুরীকে মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, নির্বাচনের ইস্যুতে যাচাই-বাছাই অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। হলফনামায় তথ্যগোপন বা স্ত্রী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে এমন অভিযোগ তখন কেউ করেননি। এখন সব শেষ, আমার কাজ হচ্ছে নির্বাচন পরিচালনা করা। বাকিগুলো অন্যরা দেখভাল করবেন। তবে সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে নির্বাচন করার জন্য সব ধরনের কাজ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, আইন সবার জন্য সমান। তথ্য গোপন করে কোনো প্রার্থী বিজয়ী বা পরাজিত হলেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) অনুযায়ী হলফনামায় কোনো প্রার্থী ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিলে তার প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে। এমনকি নির্বাচিত হওয়ার পরও প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে। দুদক ও রাজস্ব বোর্ডও বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।

তা ছাড়া উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮-এর ৮ বিধির ২(ঝ) উপবিধি অনুযায়ী কারও পরিবারের সদস্য তথা পিতা, মাতা, ভাইবোন, স্ত্রী, কন্যা উপজেলা পরিষদে ঠিকাদারি সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত থাকলে তিনি ওই উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভাঙল শতরানের জুটি, শততম টেস্টে হাসল মুশফিকের ব্যাট

যে কারণে বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ খেলতে পারবেন না রাকিব-তপু

আজ বিশ্ব পুরুষ দিবস

দীনেশ চন্দ্র পালের আত্মার চিরশান্তি কামনায় প্রার্থনা সভা

একটানে জালে উঠল ২০০ মণ ইলিশ

এত বড় তারকা হয়েও হামজার মধ্যে বিন্দুমাত্র অহংকার নেই : পাপ্পু

ঘরে বসেই মেট্রোরেলের কার্ড রিচার্জ করবেন যেভাবে

বিএনপিসহ ৬টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির বৈঠক চলছে

নিউইয়র্কে ফ্ল্যাট, হীরাখচিত মুকুট ও ব্যক্তিগত বিমান, মিথিলা কি পাবেন সেই স্বপ্নের চাবি?

বিজয় দিবস উদযাপনে কোনো ধরনের নাশকতার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১০

গাজীপুরে কারখানায় ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৯ ইউনিট

১১

ডিআরইউ ক্রিকেটে কালবেলার বিশাল জয়, ম্যান অব দ্যা ম্যাচ শেখ হারুন

১২

মেজর জলিল ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দি : রাশেদ প্রধান

১৩

মডেল-অভিনেত্রী জিনা লিমার রহস্যময় মৃত্যু

১৪

খাসোগি হত্যার বিষয়ে কিছুই জানতেন না সৌদি যুবরাজ : ট্রাম্প

১৫

তারেক রহমানকে নিয়ে ‘সংকট সংগ্রামে সাফল্য’ শীর্ষক তথ্যচিত্র মুক্তি পাচ্ছে বৃহস্পতিবার

১৬

তারেক রহমানের জন্মদিনে ছাত্রদলের দোয়া ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণের নির্দেশ

১৭

নির্বাচন উৎসবমুখর করতে সেনাবাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন : প্রধান উপদেষ্টা

১৮

‘আশুলিয়ায় ছয়টি মরদেহ পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেন ওসি সায়েদ ও এএসআই বিশ্বজিৎ’

১৯

স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট আনতে গ্রামীণফোন ও বিএসসিএলের চুক্তি

২০
X