তিন বছর আগে রাজধানীর কলাবাগানে চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। নিজ শয়নকক্ষে তাকে ছুরিকাঘাত ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ হত্যার পর থেকে সন্দেহভাজন, প্রত্যক্ষদর্শী, সহকর্মী, স্বজনসহ অর্ধশতাধিক লোককে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেও মেলেনি কোনো রহস্য। এমনকি একমাত্র সন্দিগ্ধ আসামি সাবিরার দ্বিতীয় স্বামী সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা এ কে সামছুদ্দিন আজাদকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদেও কোনো কিনারা মেলেনি। তবে তাকে ঘিরেই মামলার তদন্ত কার্যক্রম ঘুরপাক খাচ্ছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক জুয়েল মিঞা কালবেলাকে বলেন, এ মামলায় একমাত্র সন্দিগ্ধ আসামি সাবিরার স্বামী সামছুদ্দিন আজাদকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যেসব তথ্য পেয়েছি, সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। শিগগিরই তদন্ত কাজ শেষ করতে পারব।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩০ মে রাজধানীর কলাবাগানের ফার্স্ট লেনের ৫০/১ হোল্ডিংয়ের বাড়ির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় ১ জুন কলাবাগান থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে হত্যা মামলা করেন সাবিরার ফুপাতো ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার। একই বছরের ২২ আগস্ট তদন্তভার পায় পিবিআই। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে পিবিআইর ঢাকা মেট্রো উত্তর বিভাগ।
২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল সন্দেহভাজন হিসেবে সাবিরার স্বামী সামছুদ্দিন আজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনি অসুস্থ হওয়ায় আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে একজন চিকিৎসকের উপস্থিতিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার কাছ থেকে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়নি। সামছুদ্দিন আজাদ বর্তমানে জামিনে আছেন। গত ১৬ মে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ায় আগামী ১ জুলাই পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।
মামলার বাদী রেজাউল হাসান বলেন, আমার বোনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তদন্তে কোনো গাফিলতি দেখছি না, পিবিআই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। দুর্ভাগ্য, তিনটি বছর চলে গেলেও
আমরা কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। আমাদের চাওয়া, তদন্ত শেষ করে মূল আসামিদের আইনের আওতায় আনা হোক। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
আসামিপক্ষের আইনজীবী জামাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, তদন্তে অগ্রগতি নেই। ঘটনার ১১ মাস পর স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলায় সামছুদ্দিন আজাদের বিন্দুমাত্র জড়িত থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। অথচ তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। এখনো তাকে মামলার চাপ নিয়ে চলতে হচ্ছে। আমরাও চাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মূল ঘটনা উদ্ঘাটন করা হোক, যাতে নিরপরাধ কেউ ভুক্তভোগী না হয়।
২০০৬ সালে সামছুদ্দিন আজাদের সঙ্গে সাবিরার বিয়ে হয়। পরের বছর এক মেয়ে হয় তাদের। এর আগে চট্টগ্রামের একটি মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ১৯৯৮ সালে উবাইদ উল্লাহ নামে এক চিকিৎসকের সঙ্গে সাবিরার বিয়ে হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে সেই ঘরে এক ছেলের জন্ম হয়। ২০০৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান উবাইদ উল্লাহ।