এ জেড ভূঁইয়া আনাস
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৪, ০২:০২ এএম
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৪, ০১:১৩ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভুল পদক্ষেপের কারণে কমছে না মূল্যস্ফীতি

টাকা ছেড়েও কুলাতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক

টাকা ছেড়েও কুলাতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে অর্থবছরের শুরু থেকেই মুদ্রা বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়া শুরু করে সংস্থাটি। কিন্তু ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাওয়া, মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ও কয়েকটি ব্যাংকের ভয়াবহ তারল্য সংকটসহ নানা কারণে বাজারে আবারও টাকার প্রবাহ বাড়িয়েছে আর্থিক খাতের এই নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। তার পরও ব্যাংকের তারল্য সংকটের সমাধান করা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে দেশের ব্যাংক খাতে ছাপানো টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ৯৪৮ কোটি। এর মধ্যে ছাপানো নোট ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ৯৫৪ কোটি এবং কয়েন ছিল ১ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকার। তবে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সংকোচন করে টাকার প্রবাহ কমিয়ে ২ লাখ ৯২ হাজার ৫৩৪ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়। অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত এই সংকোচন অব্যাহত থাকে। ওই মাসে টাকার প্রবাহ কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৭ কোটি। কিন্তু পরের মাস নভেম্বরে টাকার প্রবাহ ১ হাজার ৪৭৪ কোটি বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫১১ কোটিতে। আর মার্চে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯১ হাজার ১৮৯ কোটি। অর্থাৎ সংকোচন থেকে বেরিয়ে ৫ মাসেই বাজারে ১৮ হাজার ১৫২ কোটি টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও জুন পর্যন্ত তা কয়েকগুণ বেড়েছে বলে জানা গেছে। দেশে বর্তমানে মানি মাল্টিপ্লেয়ার ৫-এর বেশি। সে হিসাবে অর্থনীতিতে ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রভাব তৈরি করতে পারে। এটি দেশের মূল্যস্ফীতি আরও উসকে দেবে।

জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে যে তারল্য সংকট দেখা যাচ্ছে, তার অনেকটাই তৈরি করা। রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে ধার দেওয়ায় তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বেশি সুদে সরকারের বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করছে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিতে রেপোতে ধার দেওয়া সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। এ কারণেই মূল্যস্ফীতিতে কোনো প্রভাব পড়ছে না। এক কথায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া নীতিগুলোর বেশিরভাগই ভুল। এজন্যই আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না।

ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে। গত মার্চ শেষে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে মানুষের হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকায়। ফেব্রুয়ারিতে যার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৩ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। দেশে ছাপানো টাকা ২ লাখ ৯১ হাজার ১৮৯ কোটির মধ্যে মানুষের হাতেই তার ৮৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বৃদ্ধির কারণে মানুষের খরচ বেড়েছে। ফলে ব্যাংক থেকে মানুষ সঞ্চয় ভেঙে নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করছে। স্বল্প সময়ে ও সহজে এই সংকট কাটবে বলে মনে হচ্ছে না। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ ঠিক থাকলে এবং নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক হলে ব্যাংকের আমানত আগের অবস্থানে ফিরবে বলে মন্তব্য করেন এই জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ১০ শতাংশ। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস, সানেম, সিপিডি) বলছে, এই হার ১৫ শতাংশের ওপরে। মূল্যস্ফীতির সরাসরি প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনে।

এদিকে দেশের ব্যাংক খাতে ভয়াবহ তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ধার করেও মানুষের অর্থ দিতে হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চলতি জুনের ১০ কর্মদিবসে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৫২ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা ধার নিয়েছে। এর মধ্যে গত ৯ জুন সর্বোচ্চ ২০ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে ব্যাংকগুলো। এসব ধারে সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন সুদ গুনতে হয়েছে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া আন্তঃব্যাংক রেপো ও কলমানি থেকে ধার তো করছেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তপশিলি ব্যাংকগুলোর নেওয়া ঋণ বা ধারের পরিমাণ গত বছরের

অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৬৪৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে এসে ধারের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৭১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর ধার বেড়েছে ৬ হাজার ১১২ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক কালবেলাকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়েছে। এতে সব ধরনের সুদের হার বেড়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন টুলস (উপায়) ব্যবহার করে বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে, যে কারণে ব্যাংকগুলোতে কিছুটা তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। তবে সংকট যাতে প্রকট আকার ধারণ না করে, সে জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো, অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট ফ্যাসিলিটি (এএলএসএফ), স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) এবং শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য স্পেশাল লিকুইডিটি সাপোর্টসহ (এসএলএস) বিভিন্ন মাধ্যমে সহায়তা দিচ্ছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এলে এবং সংকোচন থেকে বেরিয়ে গেলেই ব্যাংকের তারল্য সংকট কেটে যাবে।’

আর এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘তারল্য সংকট বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ সামনে ঈদ। একই সঙ্গে দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে ব্যাংকে আমানত বাড়ছে না। পাশাপাশি ঋণের রিকভারিও কম। এ জন্য তারল্য সংকট লেগে আছে। এ ছাড়া কয়েকটি ব্যাংক দীর্ঘদিন থেকেই সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে ধার করে চলছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘দুঃখিত, এবার আর তা হবে না’

‘কূটনীতির দরজা কখনো পুরোপুরি বন্ধ হয় না’

তেলের দামে বড় পতনের আভাস

এসএসসি পাসেই ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে চাকরি

৩২৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, বাবা-ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বছরপূর্তি / রাজু ভাস্কর্যে ছাত্রসমাবেশ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা

ইরানের কমান্ডার কানি গুপ্তচর কি না, জানাল মোসাদ

যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি

চাল না কিনলে জাপানে নতুন করে শুল্কের হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

হলি আর্টিসান হামলার আজ ৯ বছর

১০

সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফরের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী আজ

১১

কারাগারে যেমন কাটছে মমতাজের

১২

পাকিস্তানে একযোগে হামলা চালাতে চায় ভারত-ইসরায়েল

১৩

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল জমিয়ত

১৪

মহররমে বিদআত ও ভ্রান্ত রীতি : যা করণীয়

১৫

যশোর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কের পদত্যাগ

১৬

সরকারি চাকরিতে বিপুলসংখ্যক পদ ফাঁকা

১৭

দেশের সব ব্যাংকে লেনদেন বন্ধ থাকবে আজ 

১৮

০১ জুলাই : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৯

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় ঝড়বৃষ্টি হতে পারে

২০
X