বক্স কালভার্ট নির্মাণকাজে শাটারিং হিসেবে স্টিলের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশ ও গাছের খুঁটি। নির্মিত সড়কগুলো যানবাহন চলাচলের জন্য স্মুথ হয়নি, সড়কের পাশে ব্যবহৃত ইট চুরি হয়ে গেছে, ব্রিজগুলোর ঢালাইয়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। এমনকি ব্রিজের সংযোগস্থলও স্মুথ হয়নি। এমন সব ঘটনা ঘটেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ভোলা চরফ্যাসন আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চলতি অর্থবছরের নিবিড় পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে সওজের চলমান এই প্রকল্পে আলোচ্য বিষয়গুলো ছাড়াও বিভিন্ন অসংগতির চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের দুর্বল দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, সড়কের সারফেসগুলো কোথাও কোথাও স্মুথ হয়নি, ব্রিজের সংযোগস্থল মসৃণ হয়নি, নির্মাণকাজে বাঁশ ও কাঠের শাটারিং ব্যবহার, ব্রিজের ড্রেনেজ সিস্টেম অপরিষ্কারসহ বিভিন্ন অসংগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এজন্য মূলত দায়ী প্রকল্প দপ্তরের নির্মাণকাজের তদারকির ঘাটতি।
প্রকল্পের আওতায় চারটি ব্রিজ নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তবে ব্রিজের সংযোগস্থল যথাযথ দেখা যায়নি। এ ছাড়া ব্রিজের ঢালাইয়ের কিছু ক্ষেত্রে যে সিসি ঢালাই করা হয়েছে, তা কিছু ক্ষেত্রে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়গুলো প্রকল্প দপ্তর কর্তৃক তদারকি প্রয়োজন। এ ছাড়া নির্মিত ব্রিজের ড্রেনেজ সিস্টেম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখা যায়নি। ফ্লেক্সিবল পেভমেন্টের জন্য সবসময় রাস্তা শুষ্ক থাকা প্রয়োজন। তা না হলে ড্রেনেজ সিস্টেম অপরিষ্কারের কারণে সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে এবং রাস্তার লাইফ টাইম কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। ব্রিজের ড্রেনেজ সিস্টেম পরিষ্কার রাখতে হবে যেন বৃষ্টির পানি সড়কে না আটকায় এবং সড়কের দুপাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয়।
এতে আরও বলা হয়েছে, কয়েকটি বক্স কালভার্ট নির্মাণকাজে বাঁশ ও গাছের খুঁটি সাটারিং হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্মাণকাজে স্টিল সাটারিং নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া নির্মাণকাজে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী এমএস বার ব্যবহার করলেও ব্যবহৃত এমএস বারগুলো যত্রতত্র ফেলে রাখতে দেখা গিয়েছে।
চলমান কাজ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে আইএমইডি জানিয়েছে, আঞ্চলিক মহাসড়কটির ভোলা সদর সংলগ্ন মইত্তারমার পুকুর এবং জয়নগর টেকনিক্যাল স্কুল সংলগ্ন জায়গায় ঢাল সুরক্ষা কাজ করা হয়নি। এ ছাড়া চলমান কাজে সড়কের পাশে যে ইট ব্যবহার করা হয়েছে, তা চুরি হয়ে যাচ্ছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তদারকি বৃদ্ধি এবং চুরি রোধে যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
মইত্তারমার পুকুর মোড় ও জয়নগর টেকনিক্যাল স্কুল মোড়ে সড়কের বাঁক অনেক বেশি দেখা গিয়েছে। যেখানে সড়কের এক পাশ থেকে অন্য পাশে দৃষ্টিগোচর হবে না। এ সমস্ত বাঁকের জায়গায় মোটরযান দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ভবিষ্যতে মোটরযান দুর্ঘটনা রোধকল্পে সড়কের বাঁকগুলো সরলীকরণ এবং বাঁকের পূর্বে সাইন বা সিগন্যাল স্থাপন করা প্রয়োজন।
প্রকল্পের আওতায় যে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, তার কিছু অংশে সড়কের সারফেস স্মুথ দেখা যায়নি। সারফেস স্মুথ না হলে যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হয়। প্রকল্পের আওতায় সড়ক নির্মাণের অবশিষ্ট কাজের সারফেস যেন স্মুথ হয় সে জন্য তদারকি আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাস্তার ঢালে অন্য প্রতিষ্ঠানের স্থাপিত বৈদ্যুতিক খুঁটি বা ইউটিলিটি স্থানান্তর ও অন্য প্রতিষ্ঠানের পানির লাইন স্থানান্তর বিল পরিশোধ এবং ঢাল সুরক্ষা কাজে অপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের তিনটি অডিট নিয়ে আপত্তি উঠেছে, যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। অডিট আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তির সুপারিশ করেছে আইএমইডি।
জানা গেছে, ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক সড়কটি ভোলা জেলার গণমানুষের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত ও দারিদ্র্য বিমোচন এবং ভোলা সদর থেকে চরফ্যাশন উপজেলার উন্নত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) কর্তৃক ‘ভোলা (পরান তালুকদার হাট)-চরফ্যাশন (চরমানিকা) আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পটি নেয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতীকরণ এবং বিরাজমান সড়ক নেটওয়ার্কের মান উন্নয়ন তথা অত্র এলাকার অবহেলিত বিশাল জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন। প্রকল্পের আওতায় চারটি ব্রিজ এবং ৪১টি বক্স কালভার্টসহ বিভিন্ন সড়কের উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটি ৮৭৮ কোটি ২৫ লাখ টাকায় বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। এখন পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৯১ শতাংশ।