জরায়ুর নিচের অংশ জরায়ুর মুখ যেখানটায় যোনির সঙ্গে মিলিত হয়, সেটাকে সার্ভিক্স বলে। এই সার্ভিক্সের প্রদাহকে বলে সার্ভিসাইটিস। এর অনেক কারণ থাকতে পারে। উপসর্গগুলোও ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে বড় কারণ হলো জীবাণুর সংক্রমণ।
সার্ভিসাইটিস দুই ধরনের। অ্যাকিউট ও ক্রনিক। হঠাৎ তীব্র প্রদাহ হলে তাকে অ্যাকিউট সার্ভিসাইটিস বলে। দীর্ঘদিন ধরে প্রদাহ চলতে থাকলে তাকে ক্রনিক সার্ভিসাইটিস বলে।
উপসর্গ
সবার যে একই রকম উপসর্গ থাকবে তা নয়। তবে কিছু উপসর্গ আছে যা বেশিরভাগ রোগীরই দেখা যায়। এর মধ্যে আছে—রক্তস্রাব, তলপেট ও যোনির ভেতরে ব্যথা, শারীরিক মিলনের সময় ব্যথা, সাদাস্রাব, জ্বর।
অনেকের ক্ষেত্রে মূত্রত্যাগের সময়ও প্রচণ্ড ব্যথা হয়। আবার মাসিকচক্রের মাঝামাঝিতেও রক্তপাত হয়। কারও ক্ষেত্রে আবার যৌনমিলনের পরও রক্তপাত হতে পারে।
কেন হয়
প্রায়ই ক্ল্যামাইডিয়া বা গনোরিয়ার মতো যৌনবাহিত সংক্রমণের ফলে সার্ভিসাইটিস হয়। এর বাইরেও কিছু জীবাণুর সংক্রমণে এটি হয়। এর মধ্যে আছে—হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস। অ্যালার্জির কারণেও সার্ভিসাইটিস হতে পারে। কিংবা যোনিপথে থাকা ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে গেলেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঝুঁকিতে কারা
অনিরাপদ যৌনমিলন এ রোগের অন্যতম একটি কারণ। আবার কোনো একজনের একাধিক সঙ্গী থাকলেও এ রোগ ছড়ায়। আবার আগে থেকে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড রোগের ইতিহাস থাকলেও পরে সেটা দেখা দিতে পারে।
জটিলতা
নারীদের সার্ভিক্স ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে জরায়ুতে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। সার্ভিক্স সংক্রমিত হলে তখন জীবাণুগুলো জরায়ুতে গিয়ে সেখানে সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করে।
গনোরিয়া বা ক্ল্যামাইডিয়া দ্বারা সৃষ্ট জরায়ুর প্রদাহ জরায়ুর দেয়াল ও ফ্যালোপিয়ান টিউবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (পিআইডি) দেখা দিতে পারে। যা নারীদের প্রজনন অঙ্গগুলোর একটি সংক্রমণ। এটির চিকিৎসা করা না হলে হলে প্রজনন সমস্যা হতে পারে।
চিকিৎসা
সাধারণত উপসর্গগুলো স্থায়ী হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয়। রোগীর ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং টেস্ট করে এ রোগ ডায়াগনসিস করা যায়। এর জন্য প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট, যোনি থেকে নিঃসৃত রসের কালচার এবং রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিতভাবে রোগটি ধরা যায়। আবার একজনের এ রোগ হলে তার সঙ্গীর শরীরেও এসটিডির জীবাণু আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে হয়।
সার্ভিসাইটিসের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। ব্যথা থাকলে ব্যথা কমানোর ওষুধ দিতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। তীব্র অবস্থায় ক্রায়োসার্জারি এবং সিলভার নাইট্রেট দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই এমন চিকিৎসা লাগে। যদি অ্যালার্জির কারণে সার্ভিসাইটিস হয়ে থাকে তবে অ্যালার্জির চিকিৎসা করালেও এ রোগ দূর হবে।
সার্ভিসাইটিস পরিচিত সমস্যা। এমন হলে গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নিতেই হবে। এ ছাড়া নিয়মিত শারীরিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও নিরাপদ যৌনমিলনের পদ্ধতি অবলম্বন করলে এ রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
লেখক : রেসিডেন্ট চিকিৎসক, বিএসএমএমইউ
মন্তব্য করুন