কারণ কী
আমাদের দাঁতের বিভিন্ন লেয়ার আছে। প্রথম লেয়ার—এনামেল (সাদা অংশ)। দাঁতের শিরশির অনুভূতি বন্ধ রাখে এনামেল। দ্বিতীয় লেয়ার—ডেন্টিন। এ লেয়ারের রং হলুদ হয়। যাদের এনামেল ক্ষয় হয়ে যায় যত্নের অভাবে অথবা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাদের দাঁতের ভেতরের লেয়ার হলুদ কালারের ডেন্টিন বের হয়ে পড়ে। ডেন্টিন যখন অনাবৃত থাকে তখনই আমাদের শিরশির অনুভূতি হয়।
দাঁতের পাথরের চাপে মাড়ি নিচে নেমে গেলে, লুজ হয়ে গেলে শিরশির অনুভূতি হয়।
অনেকে জোরে জোরে ব্রাশ করেন কারণ তারা ভাবেন জোরে ব্রাশ করলে দাঁত পরিষ্কার থাকবে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। জোরে ব্রাশ করলে এনামেল ক্ষয় হয়ে যায়।
হাড্ডি জাতীয় শক্ত খাবার খেলেও এনামেল ক্ষয় হয়।
দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে।
নিয়মিত কোমল পানীয় পান করলেও এনামেল ক্ষয় হয়।
কীভাবে এনামেল রক্ষা করবেন?
n দুই মিনিট সময় নিয়ে আস্তে আস্তে ব্রাশ করতে হবে নিয়মিত দুই বেলা।
n ডায়াবেটিস যাদের আছে তাদের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
n নিয়মিত স্কেলিং না করলে ডেন্টাল ক্যালকুলাস ওরফে দাঁতের পাথর মাড়িকে নিচে নামিয়ে দেয়। যার কারণে দাঁতের গোড়া অনাবৃত হয়ে শিরশিরে অনুভূতি হয়। ছয় মাস পরপর ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী স্কেলিং করা উচিত। কিংবা বছরে ন্যূনতম একবার।
n কোমল পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে স্ট্র দিয়ে খেতে হবে যেন দাঁতের এনামেলে না লাগে।
n ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে।
যে অভ্যাস দাঁত সুস্থ রাখে
n অতিরিক্ত মিষ্টি, আইসক্রিম, কেক, পেস্ট্রি, চকলেট খেয়ে ছোটরা যেমন দাঁত নষ্ট করে তেমনি বড়রাও জাঙ্ক ফুড এবং ধূমপানে নষ্ট করে ফেলে প্রয়োজনীয় দাঁতকে।
n দাঁতের ফাঁকে খাদ্যের কণা ঢুকে থাকাটা স্বাভাবিক। কণাগুলো দাঁতের ফাঁকে একটি আঠালো স্তর তৈরি করে যা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দাঁত। ঠিকঠাক যত্ন না নিলে এই ক্ষতি ক্রমেই বাড়তে থাকে।
n দন্ত বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখে দুর্গন্ধ, দাঁতে ব্যথা, মাড়ি থেকে রক্তপাত, মাঝে মাঝেই দাঁত নড়ে যাওয়া, দাঁতের ফাঁকে পাথর জমে যাওয়া এসব লক্ষণে বোঝা যায় দাঁতের আয়ু কমতে শুরু করেছে। দৈনন্দিন জীবনে কিছু খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আর যত্ন নিলেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
ওটা থেকেও কিন্তু মারাত্মক কিছু হতে পারে।
n নিয়মিত দুবার ব্রাশ করলে একটি ব্রাশ তিন মাসের পর ভালো কাজ দেয় না। তাই তিন মাস পর বদলে ফেলুন টুথব্রাশ।
n খুব বেশি চাপ দিয়ে যেমন ব্রাশ করা ঠিক নয়, তেমনি খুব আলগাভাবেও নয়। নরম অথচ দাঁতের ফাঁকে পৌঁছতে পারে এমন ব্রাশ ব্যবহার করুন।
n খাওয়ার পর অবশ্যই ভালো করে মুখের ভেতর ধুয়ে নিতে হবে। এমনকি মিষ্টি, ঠান্ডা পানীয় ও চকলেট খাওয়ার পরও ভালো করে মুখ ধোয়ার অভ্যাস করান শিশুদের।
n অতিরিক্ত চা-কফি ও ধূমপান বন্ধ করুন। এসবের কারণে দাগ পড়ে দাঁতের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। তামাকের দাগ সহজে ওঠেও না।
n দাঁতের অবস্থা বুঝে টুথপেস্ট ব্যবহার করুন। এর জন্য পরামর্শ নিন চিকিৎসকের।
n দাঁতের গঠনগত ত্রুটি থাকলে সতর্ক হউন। শিশুদের দাঁতে কম বয়সেই সমস্যা ধরা পড়ে। সেটার চিকিৎসাও করান দ্রুত।
n লবঙ্গ দাঁতের জন্য উপকারী। মাঝে মধ্যেই মুখে রাখতে পারেন লবঙ্গ।
লেখক : ওরাল ও ডেন্টাল সার্জন, বিডিএস, পিজিটি (বিএসএমএমইউ)। ফেলো-ইন্টারন্যাশনাল কোর্স, থাইল্যান্ড এবং ডেভেলপমেন্টাল কোর্স, টোকিও মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল ইউনিভার্সিটি ফ্রম জাপান। চিফ কনসালট্যান্ট, স্পার্ক অব টুথ।
মোবাইল : ০১৮৬৬-১৩৬১৫৩