বছর ঘুরে আবারও এসে গেছে সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসবের সময়, শারদীয় দুর্গাপূজা। পূজার মৌসুম মানেই তো সাজগোজের হিড়িক। নতুন শাড়ি, প্রচুর সাজগোজ আর গয়নাগাটি। উৎসবের আমেজে নিজেকে সুন্দর করে তুলে ধরতে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চাই সুন্দর সুন্দর সাজ। কোন দিন কোন সাজ আপনাকে করে তুলবে সবার চেয়ে আলাদা, তাই জানাচ্ছেন বৃষ্টি শেখ খাদিজা
আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত শহর। পূজায় কেমনভাবে সাজবেন, এটা একটা বড় প্রশ্ন। কোন সাজ এবারে ট্রেন্ডিং, কীভাবে সাজলে হয়ে উঠবেন অনন্য? এ প্রশ্নই ঘুরপাক খায় মাথায়। তবে সাজ যার যার নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখনকার সাজ আর আগের সাজের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তবুও ষষ্ঠী থেকে দশমী—কীভাবে সাজবেন, সে সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা থাকে না। এই প্রতিবেদনে জেনে নিই শারদীয় সাজের খুঁটিনাটি।
ষষ্ঠীর দিন
পূজার শুরুটা হয় মূলত ষষ্ঠীর দিন থেকে। এদিন চাইলে সালোয়ার-কামিজ পরতে পারেন, পরতে পারেন শাড়িও। সেইসঙ্গে সাজটা হালকা হলেই মানাবে বেশ। চুল বাঁধার ধরনে স্বস্তিকে প্রাধান্য দেবেন। এ সময় পনিটেইল বা বেণি করলে বেশি আরাম পাবেন। চাইলে চুলে দুয়েকটি ফুলও গুঁজে নিতে পারেন।
সপ্তমীর সাজ
সপ্তমীর সাজেও নিজেকে রাখুন সজীব ও স্নিগ্ধ। এ সময় সুতির পোশাক বেছে নেওয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। পোশাকের সঙ্গে মানানসই হালকা মেকআপ করুন। ত্বকের সঙ্গে মিলিয়ে ট্যান্সলুসেন্ট পাউডার কিংবা বিবি ক্রিম ব্যবহার করুন। ঠোঁটে থাকুক হালকা রঙের লিপস্টিক। রাতের সাজে চোখে আইশ্যাডো লাগাতে পারেন। চুলে বাঁধতে পারেন খোঁপা।
অষ্টমীর সাজ
অষ্টমীর সাজে নিজেকে একটু জমকালো করে তুলতেই পারেন। এদিন সিল্ক, কাতান কিংবা বেনারসি শাড়ি জড়িয়ে নিতে পারেন অনায়াসে। দিনের সাজ হালকাই থাকুক, রাতে হলে একটু ভারী সাজতে পারেন। পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বা উল্টো রঙের আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন। শাড়ির সঙ্গে চুল খোলা রাখতে পারেন, যদি অস্বস্তি না হয়। কপালে পরতে পারেন টিপ।
নবমীর সাজ
এদিনের সাজ সবচেয়ে বেশি জমকালো হোক। নবমীর দিনও অষ্টমীর মতো সিল্ক, কাতান ইত্যাদি বেছে নিতে পারেন। অথবা জামদানিও পরতে পারেন। শাড়িই হতে হবে কথা নেই, আপনি যে পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য, সেটিই পরুন। আর সাজ না হয় নিজের পছন্দমতোই বেছে নিন। তবে খেয়াল রাখবেন, দেখতে যেন বেমানান না লাগে।
ঐতিহ্যের সাজে দশমী
দশমীর দিন লাল-সাদা রংটাই বেশি প্রাধান্য পায় পোশাকের ক্ষেত্রে। তবে এ রঙের বাইরে পরা যাবে না, এমন নয়। সাজ হালকা হতে পারে কিংবা জমকালো, কোনো বাধা নেই। এদিন চোখের সাজে আরেকটু মনোযোগী হতে পারেন। সবটুকু মায়া যেন ভর করে আপনার চোখেই। মোটা করে কাজল, মাশকারা, আইলাইনার পরতে পারেন। চোখে দিতে পারেন স্মোকি লুক। গালে হালকা ব্লাশন টানুন, ঠোঁটে লাগান লিপস্টিক। চোখের সাজ ভারী হলে ঠোঁটের সাজ হালকা থাকাই ভালো।
কোন পোশাকের সঙ্গে কেমন নেকলেস
কোন পোশাকের সঙ্গে কেমন নেকলেস মানাবে, তা বোঝাটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। তেমনই শরীরের গঠন অনুযায়ী গয়না বেছে নেওয়াটাও বেশ জরুরি। যদি চেহারার গড়ন ভারী হয়, তাহলে লেয়ার্ড নেকলেস ভালো মানায়। তবে ঝুল ছোট থাকলেই ভালো। আবার উল্টো দিকে হালকা চেহারা হলে ভারী নেকলেসে মানায় ভালো।
গয়না বাছার ক্ষেত্রে পোশাকটাও গুরুত্বপূর্ণ। ওভারসাইজ পোশাক বা জ্যাকেট পরলে সঙ্গে সরু ও পাতলা চেন রাখাই ভালো। ভি-নেকলাইনের ডিপ কাট ব্লাউজ বা পোশাক পরলে সঙ্গে ছোট্ট লকেট দেওয়া হার কিন্তু বেশ মানায়। সাজে আনে আভিজাত্যের ছোঁয়া। গোল নেকলাইন যুক্ত পোশাক পরলে সব ধরনের নেকলেসই এর সঙ্গে পরতে পারেন। আবার গোল গলা কিছু পরলে সবচেয়ে ভালো চোকার। আবার হল্টার নেক কিছু পরলে সঙ্গে থাকুক লম্বা ঝুলের হার।
কোন ধাতুর নেকলেস পরছেন, তাও মাথায় রাখা জরুরি। আপনি যে ধাতুর গয়না বেছে নিচ্ছেন, তার মধ্যে একটা সামঞ্জস্য থাকা উচিত।
মেকআপের আগে আপনার স্কিনকে তৈরি করতে করণীয়
শুধু কি ভালো পণ্য ব্যবহার করলেই হবে? তা কিন্তু না! ভালো পণ্য ব্যবহার করার পাশাপাশি মেকআপ করার আগে ত্বকেরও কিন্তু একটি প্রস্তুতির বিষয় থাকে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমরা এড়িয়ে যাই। যে কোনো ত্বকে সুন্দর মেকআপ লুক তৈরির জন্য ত্বককে তার জন্য প্রস্তুত করে নিতে হবে সবার আগে। কীভাবে? জেনে নিন করণীয়গুলো!
মুখ ভালো করে পরিষ্কার
অপরিষ্কার ত্বকে কখনোই মেকআপ ভালো করে বসবে না, তাই অবশ্যই মেকআপ করার আগে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। যাদের ত্বকে ব্ল্যাকহেডস বা হোয়াইটহেডসের সমস্যা রয়েছে, তারা অবশ্যই চেষ্টা করবেন স্ক্র্যাব বা এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করে সার্কুলার মোশনে আস্তে আস্তে ঘষে ত্বকের ডেডসেলগুলো পরিষ্কার করতে। যাদের তৈলাক্ত ত্বক, তাদের জন্য এ ধাপটি আবশ্যক। যাদের নরমাল ত্বক, তারা ফেসওয়াশ ব্যবহার করে পরিষ্কার করে নিলেই হবে। যারা অভিযোগ করে থাকেন, আমাদের ত্বকে মেকআপ ঠিকমতো বসে না, তারা এ ধাপটি মেনে চললে মুখে সহজেই মেকআপ সমানভাবে বসবে।
টোনার ব্যবহার করুন বা বরফ ম্যাসাজ
দিয়ে নিন
আমাদের অনেকেরই ফেসিয়াল পোরস দূর করা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করে ত্বক পরিষ্কার করার পর আমাদের মুখের পোরস প্রসারিত হয়ে যায়। এ পোরগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে মূলত কাজ করে টোনার। হাতের কাছে যদি টোনার না থাকে, তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। বরফ দিয়েই আপনি টোনারের কাজটি সেরে ফেলতে পারেন সহজেই। মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার আগে, কিছুক্ষণ মুখে বরফ দিয়ে ম্যাসাজ করে নিন।
মুখে হাইড্রেটিং ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ম্যাসাজ করে নিন
ফেসওয়াশ বা এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করে মুখ পরিষ্কার করার পর আমাদের ত্বক অনেকটাই শুষ্ক হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সরাসরি কোনো মেকআপ প্রোডাক্টস ব্যবহার করলে তা ঠিকমতো বসবে না, উঠে উঠে আসবে। মেকআপের আগে অবশ্যই একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার বা হাইড্রেটিং ক্রিম দিয়ে মুখে কিছুক্ষণ ভালোভাবে ম্যাসাজ করে নিতে হবে। এতে করে যেমন লোমকূপের ভেতরে মেকআপ জমতে পারবে না, তেমনি আপনার ত্বকও থাকবে মসৃণ। বিশেষ করে যেসব ময়েশ্চারাইজারে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে, চেষ্টা করুন এমন ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ইউজ করতে।
ত্বকের সঙ্গে মানানসই মেকআপ প্রোডাক্টস বাছাই করুন
মার্কেটে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নানা ধরনের মেকআপ প্রোডাক্টস পাওয়া যায়। সব ধরনের প্রোডাক্টস যে সব ধরনের স্কিন টাইপের জন্য মানানসই, তা কিন্তু নয়! প্রোডাক্টস বাছাই করার সময় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে তা আপনার স্কিনের জন্য ভালো হবে কি না। স্কিনটাইপ ও স্কিনটোন সম্পর্কে আগে জেনে নিন। চেষ্টা করুন সে অনুযায়ী প্রোডাক্টস সিলেক্ট করতে। অনেক দিন হয়ে গেছে এমন প্রোডাক্টস ব্যবহার না করাই স্কিনের জন্য ভালো। চেষ্টা করুন ভালো ব্র্যান্ড দেখে এবং একটু দাম দিয়ে মেকআপ প্রোডাক্টস কিনতে। এতে যেমন ত্বক নানাবিধ ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে, তেমনই খুব সহজেই পাবেন পারফেক্ট মেকআপ লুক।
নিখুঁত মেকআপের জন্য প্রাইমার মাস্ট
আমাদের সবারই কমবেশি জানা আছে যে, মেকআপ অনেকক্ষণ ধরে ঠিকঠাক রাখার জন্য প্রাইমারের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। বিশেষ করে যাদের তৈলাক্ত ত্বক তাদের প্রাইমার ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। মুখে সরাসরি ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলে তা সহজেই কিছুক্ষণ পর তৈলাক্ত হয়ে যেতে পারে। প্রাইমার আপনার মুখ থেকে নির্গত এ বাড়তি তেলটুকু শুষে নেয় এবং মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে।
ঐতিহ্যের শিকড়ে ফুল
নারীর সৌন্দর্যে ফুলের ব্যবহার নতুন কিছু নয়। প্রাচীনকাল থেকেই বিয়ের মঞ্চে, পূজার আসরে বা যে কোনো শুভ অনুষ্ঠানে নারীর সাজে ফুলের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে শারদীয় পূজায় রজনীগন্ধা, টগর, শিউলি কিংবা গাঁদার মালা চুলে গুঁজে নেওয়ার রীতি অনেক পুরোনো। শাড়ির সঙ্গে যদি হয় খোঁপা বাঁধা চুল, তবে তাতে রজনীগন্ধার মালা জুড়ে দিলে মিলবে রাজকীয় আভিজাত্য। খোঁপা ছোট হলে গোলাপ বা গাঁদার মতো একক ফুলও মানিয়ে যাবে। মন্দিরে পূজা দিতে যাওয়া হোক বা সন্ধ্যার অঞ্জলি, খোঁপায় ফুল হয়ে উঠতে পারে সৌন্দর্যের প্রতীক। যারা খোলা চুল রাখতে পছন্দ করেন, তাদের জন্যও ফুল হতে পারে সাজের সেরা সঙ্গী। কানে গুঁজে নেওয়া একটি সাদা টগর বা খোলা চুলের পাশে লাল গোলাপ সাজে যোগ করবে ভিন্ন আবহ। আধুনিক ফিউশন পোশাকের সঙ্গেও খোলা চুলের ফুল মানিয়ে যায় দারুণভাবে। ফুল বেছে নেওয়ার সময় পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে নিলে তা আরও নান্দনিক হয়ে ওঠে
মন্তব্য করুন