দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় আবাসন খাতের বিকাশ ঘটছিল তরতর করে। সেই যাত্রায় বড়সড় ধাক্কা আসে করোনা মহামারিতে। এই সময়টা আবাসন খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য হয়ে ওঠে হতাশার। তবে সেই ধাক্কা সামলে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকাংশেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আশার আলো দেখছেন, দেখাচ্ছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা। তাদের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে শুরু করেছেন তৎপরতা। বিনিয়োগও বাড়ছে ক্রমবিকাশমান এ খাতে।
মাথার ওপর এক টুকরো ছাদের স্বপ্ন পূরণে চট্টগ্রামের পাঁচতারকা হোটেলে র্যাডিসন ব্লু ব্লে ভিউতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে ১৬তম রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ার-২০২৫। শেষ হবে ১৬ ফেব্রুয়ারি। এবার মেলায় থাকবে ৪২টি স্টল।
রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ারে গোল্ড স্পন্সর হিসেবে থাকবে পূর্বাচল প্রবাসী পল্লী লিমিটেড ও উইকন প্রপার্টিজ লিমিটেড। এ ছাড়া কো-স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে এরিয়েল প্রপার্টিজ লিমিটেড, আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, সিটি হোম প্রপার্টিজ লিমিটেড, সি এ প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (সিপিডিএল), কনকর্ড রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, এপিক প্রপার্টিজ লিমিটেড, ইক্যুইটি প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, ফিনলে প্রপার্টিজ লিমিটেড, জুমাইরাহ হোল্ডিং লিমিটেড, মুনতাসির লিভিং লিমিটেড, র্যানকন এফসি প্রপার্টিজ লিমিটেড, স্যানমার প্রপার্টিজ লিমিটেড, সিকিউর প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ও শাইন ম্যাট্রিক্স বিল্ডার্স লিমিটেড। এন্ট্রি টিকিট, টিকিট কাউন্টার ও উদ্বোধনী অধিবেশনের স্পন্সর এরিয়েল প্রপার্টিজ লিমিটেড ও মিডিয়া সেন্টার। প্রেস কনফারেন্সের স্পন্সর এমিটি অ্যাপার্টমেন্ট, ডেভেলপারস এরিয়েল প্রপার্টিজ লিমিটেড। র্যাফেল ড্র স্পন্সর পার্ল হোমস লিমিটেড। ইনফরমেশন বুথ ও এন্ট্রি গেট স্পন্সর শাইন ম্যাট্রিক্স বিল্ডার্স লিমিটেড। এ ছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে এপিক হেলথ কেয়ারের একটি বুথ থাকবে।
এ আয়োজন নিয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাওয়া। সময় ও বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের আবাসন খাতের পরিবর্তন হবে। তবে মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে সবাই বসবাস করতে পারেন—এমন আবাসনই বেশি গুরুত্ব পাবে ভবিষ্যতে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যেন তাদের সাধ্যের মধ্যে প্লট বা ফ্ল্যাট কিনতে পারেন— সেই চিন্তা থেকেই এগিয়ে যাচ্ছে আবাসন খাত। এ ভাবনা থেকেই মেলার আয়োজন।
তিনি বলেন, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ আবাসের ব্যবস্থার লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তিন দশকের বেশি সময় ধরে নিরলসভাবে কাজ করছে রিহ্যাব। এখন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পরিবার নিজ ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন।
ভবিষ্যৎ: বর্তমানে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে আবাসন খাতকে। ফলে এই খাতে সবাই বিনিয়োগ করছেন। মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত—সবাই চান নিজের একটা স্থায়ী ঠিকানা। তাদের সেই স্বপ্নপূরণেই কাজ করছে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরে জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। ফলে পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থাই এখন চ্যালেঞ্জ।
আবাসন ব্যবসায়ীরা জানান, নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) কার্যকর হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরে নতুন জমি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নতুন প্রকল্পও নেওয়া যাচ্ছে না। আগে জমা হওয়া প্রকল্পগুলোই পাস হচ্ছে, বিক্রিও হচ্ছে। তবে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফ্ল্যাট বুকিং ও বিক্রি কমে গেছে।
উইকনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখার আলভি বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অস্থিরতার কারণে ফ্ল্যাট বিক্রি ৩০ শতাংশে নেমেছিল। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। বর্তমানে স্বাভাবিকের তুলনায় ৫০ শতাংশ ব্যবসা হচ্ছে। আমরা আশা করছি, ব্যবসা আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
সম্ভাবনা: জনসংখ্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরবর্তী প্রজন্মের আবাসনের ধরনে আসবে পরিবর্তন। নকশা, নির্মাণের উপকরণে পরিবর্তন দেখা যাবে ভবিষ্যতে। এ ছাড়া খরচ কমিয়ে ছোট আবাসনের দিকে ঝুঁকছে বৃহৎ জনগোষ্ঠী। বর্তমানে বাড়ি নির্মাণে সবুজ বনায়নের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বাস্তবায়ন হচ্ছে সবুজে বাঁচুন কথাটি।