ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সেদিন ছিল এক অদ্ভুত উন্মাদনা। নারী-পুরুষ শিক্ষার্থীরা গলা ফাটিয়ে স্লোগান তুলছিলেন। ঠিক তখনই নেমে আসে নৃশংস তাণ্ডব। ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই বিকেল। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠি, ইটপাটকেল আর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্দোলনকারীদের ওপর। সেই বিভীষিকার কেন্দ্রে ছিলেন এক তরুণী—সানজিদা আহমেদ তন্বি। ইটের আঘাতে চোখের নিচ দিয়ে গড়িয়ে পড়া রক্তে ভিজে গিয়েছিল তার মুখ। ভাঙা চশমার কাচের আড়াল থেকে অস্পষ্ট চোখে তিনি খুঁজছিলেন বাঁচার পথ। মাদারীপুরের কালকিনির মেয়ে তন্বির শৈশব ছিল একেবারেই সাধারণ। রোকেয়া হলের আবাসিক এই ছাত্রী কখনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ১৪ জুলাই, শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে কটূক্তি করার পরই বদলে যায় ক্যাম্পাসের আবহাওয়া। রাত গভীর হতেই রোকেয়া হলের তালাবদ্ধ গেট ভেঙে বেরিয়ে আসেন নারী শিক্ষার্থীরা। সাধারণ পোশাকেই রাজপথে নেমে আসা মেয়েদের হাতে হাঁড়ি-পাতিল, মুখে প্রতিবাদের স্লোগান—‘তুমি কে, আমি কে—রাজাকার, রাজাকার? কে বলেছে, কে বলেছে—স্বৈরাচার, স্বৈরাচার?’ পরদিন দুপুরের পর রাজু ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগান তুলছিলেন তন্বি ও তার সহপাঠীরা। হঠাৎ চারদিক থেকে হামলে পড়ে ছাত্রলীগ। ধাওয়া, লাঠিপেটা, ইটের আঘাত—চোখের পলকে লাল হয়ে ওঠে চারপাশ। তন্বি স্মৃতিচারণ করে বলেন—‘আমি বের হওয়ার চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ কয়েকজন লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারতে শুরু করে। একটি ইট এসে লাগে চোখের নিচে। চশমার কাচ ভেঙে রক্ত ঝরতে থাকে ফিনকি দিয়ে।’ আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে ছয়টি সেলাই করতে হয়। কিন্তু সেখানেও ভর করে আতঙ্ক—খবর আসে, ছাত্রলীগ নাকি হাসপাতালে হামলা চালাতে আসছে। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার জন্য বান্ধবীর বাসায় আশ্রয় নিতে হয় তাকে।
মন্তব্য করুন