বিশ্ব ফুটবলে হয়তো আর ফিরে আসবে না সেই পুরনো গ্রীষ্মকালীন বিশ্বকাপের দিনগুলো। ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো নতুন করে সাজাচ্ছেন খেলার মৌসুম—যেখানে বিশ্বকাপ হতে পারে ডিসেম্বরের কনকনে ঠান্ডায়, আর ক্লাব ফুটবলের সূচি টেনে নেওয়া হবে প্রায় এগারো মাস পর্যন্ত।
ইনফান্তিনো নিজেই সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ফুটবলকে এখন ‘গ্লোবালাইজড ক্যালেন্ডারে’ নিতে হবে—যেখানে ‘বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে, যেকোনো সময়’ খেলা সম্ভব হবে। এই মন্তব্যের মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়ে গেছে ২০৩৪ সালের সৌদি আরব বিশ্বকাপও শীতকালেই অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা।
২০২২ কাতার বিশ্বকাপে (নভেম্বর–ডিসেম্বর) যে প্রথা শুরু হয়েছিল, সেটিই এখন নতুন বাস্তবতা হয়ে উঠছে। তেলের অর্থে ভরপুর দেশগুলো এখন ফুটবলের কেন্দ্রবিন্দুতে, আর ঐতিহ্যের জায়গায় জায়গা নিচ্ছে বাণিজ্যিক শক্তি।
এই পরিবর্তনের সঙ্গে বাড়ছে ম্যাচের সংখ্যা, বাড়ছে ক্লাব–জাতীয় দলের ব্যস্ততা। নতুন ফরম্যাটে বিশ্বকাপ হবে ৪৮ দলের, ক্লাব বিশ্বকাপেও অংশ নেবে সমানসংখ্যক দল। মৌসুম শেষ হবে জুলাইয়ের মাঝামাঝি, ফলে একজন শীর্ষ খেলোয়াড়কে এখন এক মৌসুমে ৭০টির কাছাকাছি ম্যাচ খেলতে হতে পারে।
ইনফান্তিনোর এই বিপ্লবে ক্লাবগুলোকেও মানিয়ে নিতে হচ্ছে নতুন বাস্তবতায়। ইউরোপের বড় ক্লাবগুলো—রিয়াল মাদ্রিদ, পিএসজি বা চেলসির মতো দল—ইতিমধ্যে প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতি সংক্ষিপ্ত করে ফেলেছে। ট্রান্সফার মার্কেটের সময়সূচি পরিবর্তনের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।
তবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো। উষ্ণ আবহাওয়া ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক সামর্থ্য নিয়ে এই অঞ্চলগুলো এখন বিশ্বকাপ আয়োজনের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে। ঐতিহ্যবাহী ইউরোপ–দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো হারাচ্ছে প্রভাব।
তবে সব পরিবর্তনই যে ইতিবাচক, তা বলা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক উইন্ডো কমে আসায় বাছাইপর্ব ও মহাদেশীয় প্রতিযোগিতার সময় সংকুচিত হচ্ছে। নারী ফুটবলারদের জন্য আলাদা সময় বরাদ্দের পরিকল্পনাও আছে, তবে তা এখনো অনিশ্চিত।
সব মিলিয়ে ইনফান্তিনোর ‘বিপ্লব’ মানে এক নতুন যুগের সূচনা—যেখানে ঐতিহ্য ভাঙছে, ক্যালেন্ডার লম্বা হচ্ছে, রাজস্ব বাড়ছে, আর ফুটবলকে টিকে থাকতে হলে সবাইকে শিখতে হচ্ছে এক নতুন শব্দ: অ্যাডাপ্টেশন।
মন্তব্য করুন