বার্মায় (মিয়ানমার) ১৯৪৬ সালে আশেকে রাসুল (সা.) হজরত সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রহ.)-এর সঙ্গে চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের সাক্ষাৎ হয়। তখন সিরিকোটি হুজুর (রহ.) একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। ১৯৪৭ সালে হালিশহরের বাসিন্দা বস্ত্র ব্যবসায়ী আবুল বশর ও ‘চিটাগাং আরবান কো-অপারেটিভ’-এর সেক্রেটারি আবদুল জলিলসহ কয়েকজন মিলে হুজুরকে চট্টগ্রামে আনেন। তখন তিনি কোহিনূর মঞ্জিলে অবস্থান করেছিলেন। পরে ১৯৭৪ সালের ১২ রবিউল আউয়াল (১৩৯৪ হিজরি) দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোটি শরিফের সাজ্জানশিন আল্লামা হাফেজ সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহ.)-এর নির্দেশনা ও রূপরেখায় আনজুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নূর মুহাম্মদ আলকাদেরী (রহ.)-এর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম নগরের কোরবানীগঞ্জের বলুয়ারদীঘির পাড় খানকাহে কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে শুরু হয় প্রথম জুলুস। এই জুলুস নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে এসে শেষ হয়। ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালে দুই বছর হুজুরের নির্দেশনায় এবং আনজুমানের নেতৃত্বে জুলুস বের হয়। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত এই জুলুসের সরাসরি নেতৃত্ব দেন জুলুসেরই প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা হাফেজ সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহ.)। ১৯৮৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জুলুসের নেতৃত্ব দেন তার ছেলে সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহির শাহ। তবে তিন বছর ধরে বয়সজনিত অসুস্থতার কারণে সৈয়দ মুহাম্মদ তাহির শাহ চট্টগ্রামে আসতে পারছেন না। এ কারণে তার ছোট ভাই সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ জুলুসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশে: জশনে জুলুস ক্ষুদ্র পরিসরে চট্টগ্রামের বলুয়ারদীঘি খানকাহ থেকে যাত্রা শুরু করলেও কালের পরিক্রমায় এটি আজ বিস্তৃত হতে হতে সারা দেশেই পালিত হচ্ছে। তিন যুগ ধরে এই জশনে জুলুসের পরিধি অনেকটাই বেড়েছে।
জানা যায়, ১২ রবিউল আউয়ালের দিন বাদ ফজর চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় স্থানীয় উদ্যোগে জশনে জুলুস বের হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, কাচালং থেকে জৈয়ন্তিয়া সর্বত্রই নগর-শহর-বন্দরে জশনে জুলুস বের করা হয়। আনজুমানের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম ছাড়াও প্রতি বছর ৯ রবিউল আউয়াল রাজধানী ঢাকায়ও জুলুস বের করা হয়। এ ছাড়া ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আন্তর্জাতিকভাবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন করে আসছেন আল্লামা শাহ সুফি সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী। তা ছাড়া আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদির নেতৃত্বে এবার জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত হয় ৮ রবিউল আউয়াল চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ইমামে রাব্বানী দরবার শরিফ, ৯ রবিউল আউয়াল নারায়ণগঞ্জ বন্দর থেকে, ১০ রবিউল আউয়াল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে এবং ১২ রবিউল আউয়াল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ভবন সংলগ্ন থেকে। গত ২৯ আগস্ট পার্বত্য অঞ্চলের সর্ববৃহৎ জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) রাঙামাটি রিজার্ভ বাজার জামে মসজিদ থেকে বাদ জুমা শুরু হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে জুলুস বের করে বিভিন্ন সংগঠন ও সুন্নি রাজনৈতিক দল।
অপর্ণাচরণ সিটি করপোরেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল বলেন, মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে জশনে জুলুস এখন আর চট্টগ্রামে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন দেশজুড়ে বিস্তৃত। দিন দিন এর পরিধি বাড়ছে।
মন্তব্য করুন