

মা-বাবাকে বলা কথা রাখতে হবে মনে করেই মেডিকেলে ভর্তির জন্য চেষ্টা শুরু করি। যেহেতু ডাক্তার হতে চেয়েছি, এ রকম একটা ফলের অপেক্ষাতেই ছিলাম। ফল জানার পর যে অনুভূতি হয়েছে, তা কয়েক শব্দে বা বলে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এ মুহূর্তটা আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো করার অনুপ্রেরণা জোগাবে। আমি ভবিষ্যতে ভালো অনকোলজি (ক্যানসার বিশেষজ্ঞ) হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে চাই।
কথাগুলো বলছিলেন, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে দেশসেরা হওয়া জাহাঙ্গীর আলম শান্ত।
এমন সফলতার পিছনে কার বেশি অবদান এমন প্রশ্নের জবাবে শান্ত বলেন, ‘আমার সফলতার পিছনে বাবা-মা ও শিক্ষকদের অবদান সবচেয়ে বেশি। উনারা আমাকে অনেক বেশি সহযোগিতা করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বাবা-মা-ই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। সব বিষয়েই আমি তাদের সাপোর্ট পেয়েছি।’
তিনি মহান আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রথমত মহান আল্লাহর রহমত ছিল, তার রহমত ছাড়া এত বড় অর্জন কখনো সম্ভব ছিল না। মা-বাবার পাশাপাশি স্কুল কলেজের শিক্ষক, তারা আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। স্কুলে আমি ভালো রেজাল্ট করতাম, আর শিক্ষকরা বলতেন আমি ভালো কিছুই করব।’
জাহাঙ্গীর আলম শান্ত নরসিংদীর বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের খামারেরচর গ্রামের মুদি দোকানি মিজানুর রহমান ও গৃহিণী ফেরদৌসী বেগমের ছেলে। তিন ভাই-বোনদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম বড়। অন্য দুই বোন স্থানীয় বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারাও লেখাপড়ায় খুব ভালো বলে জানান তাদের মা ফেরদৌসী বেগম।
পরিবারের সদস্য ও শিক্ষকরা জানান, শান্ত ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী। নাম যেমন শান্ত, তার কার্যক্রম ও চালচলনও শান্ত প্রকৃতির। নামের সাথে তার জীবন চলার দিকগুলোর মিল রয়েছে। অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঠিক দিকনির্দেশনা এবং তার নিরলস পরিশ্রমই এই সাফল্যের বড় কারণ। তার এই সাফল্যে এলাকায় বইছে আনন্দের জোয়ার।
শান্ত ২০২৩ সালে স্থানীয় বারৈচা রেসিডেনশিয়াল মডেল স্কুল থেকে এসএসসি এবং চলতি বছর রাজধানীর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি দুই পরীক্ষাতেই জিপিএ-৫ পেয়েছেন। কলেজে ভর্তির শুরু থেকেই তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে মেডিকেলে ভর্তির জন্য অনলাইন-অফলাইনে পড়াশোনা শুরু করেন। এইচএসসি পরীক্ষা শেষে ঢাকার ফার্মগেটের তেজকুনিপাড়ার একটি বাসায় সাবলেট থেকে মেডিকেল ভর্তি কোচিং করেন।
তার বন্ধু ইবনে আদম বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত, আমরা একই ক্লাসের ও ব্যাঞ্চের ছাত্র ছিলাম। আমার বন্ধু দেশসেরা রেজাল্ট করেছে শুনে আমরা খুবই আনন্দিত। এমন সাফল্য আমাদের আর কখনো আসেনি। এমন রেজাল্টে আমরা বন্ধুরা খুবই গর্বিত।’
বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ‘খবরটি শুনে গর্বে বুকটা ভরে উঠেছে। কতটা আমরা আনন্দিত তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। খুশিতে আমার ও তার মায়ের চোখে পানি এসে যায়। বাড়িতে আসার পর থেকে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ তাকে শুভেচ্ছা জানাতে আসছেন। এটাও যেন বাবা হিসেবে আমার কাছে অন্যরকম এক পাওয়া। শান্ত যত বড় ডাক্তারই হোক না কেন সে গ্রামে এসেই মানুষের সেবা করবে এমনটাই আমাদের ও তার ইচ্ছা। যাতে করে গরিব-অসহায় মানুষ ফ্রি চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন।’
বারৈচা রেসিডেনশিয়াল মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে এমন রেজাল্টে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। আমি চাই ভবিষ্যতে একজন সফল ও মানবিক চিকিৎসক হয়ে দেশ ও মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবে। পাশাপাশি মানবিক গুণাবলি দিয়ে সে সমাজ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবে।’
মন্তব্য করুন