

পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে জলবায়ু-সহনশীল অর্থায়ন জোরদারে নতুন গবেষণার ফলাফল এবং জলবায়ু অর্থায়নের প্রবাহ বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম— গ্রিন অ্যাকাউন্টেবিলিটি মনিটর উদ্বোধন করেছে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট (ডব্লিউআরআই), সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) এবং একমি এআইর সহযোগিতায় রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আজ এই উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব ড. শাহ আব্দুল সাঈদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন— সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ও পলিসি অ্যাডভোকেসি পরিচালক পার্থ হেফাজ সেখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশের ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রামের লিড জাকিয়া নাজনীন।
অনুষ্ঠানে জলবায়ু অর্থায়নের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট এবং নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটির কাঠামো ও কার্যপদ্ধতি তুলে ধরেন সিপিআরডির প্রোগ্রাম ম্যানেজার সুমাইয়া বিনতে আনোয়ার এবং একমি এআইর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সাধলি রুমি।
উদ্বোধনী বক্তব্যে পার্থ হেফাজ সেখ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি সেবা নিশ্চিত করতে হলে জলবায়ু অর্থায়ন বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য ও বিশ্লেষণ অপরিহার্য। তিনি বলেন, ন্যায্য ও প্রয়োজনভিত্তিক সম্পদ বণ্টন নিশ্চিত করতে তথ্যভিত্তিক ও প্রমাণনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিকল্প নেই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শাহ আব্দুল সাঈদ বলেন, বন্যা, খরা ও লবণাক্ততার মতো জলবায়ুচালিত ঝুঁকি সরাসরি ওয়াশ সেবাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তিনি বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান ২০০৯, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা এবং ডেল্টা প্ল্যানসহ জাতীয় নীতিমালায় ওয়াশ খাতকে আরও শক্তভাবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। পাশাপাশি তিনি জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা, মান ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি মোঃ শামসুদ্দোহা বলেন, বাংলাদেশের জলবায়ু অর্থায়ন কাঠামো তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হলেও অভিযোজন অর্থায়নে ওয়াশ খাত এখনও পর্যাপ্ত গুরুত্ব পাচ্ছে না। তিনি স্থানীয় বাস্তবতা, কমিউনিটির অংশগ্রহণ এবং লিঙ্গ সংবেদনশীল সূচককে জলবায়ু অর্থায়নের কেন্দ্রবিন্দুতে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তার মতে, নির্ভরযোগ্য ও সহজপ্রাপ্য তথ্য নিশ্চিত করা গেলে বিনিয়োগ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে কার্যকরভাবে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
আলোচনাপর্বে অংশগ্রহণকারীরা নীতিগত ঘাটতি, আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় জোরদারের সুযোগ এবং নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটি কীভাবে নীতিনির্ধারক, গবেষক ও উন্নয়ন অংশীদারদের জন্য তাৎক্ষণিক ও ব্যবহারযোগ্য বিশ্লেষণ প্রদান করতে পারে— সেসব বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, যেখানে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, চরম বন্যা ও দীর্ঘস্থায়ী খরার প্রভাব দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। এসব পরিবর্তন বিশেষ করে উপকূলীয় ও গ্রামীণ অঞ্চলে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
এই বাস্তবতায় ওয়াটারএইড বাংলাদেশ সিপিআরডি-এর অংশীদারত্বে ও ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের সহায়তায় “বাংলাদেশে ওয়াশের জন্য জলবায়ু অর্থ প্রবাহের চিত্র : কাঠামো, ঘাটতি ও সুযোগ” শীর্ষক একটি গবেষণা পরিচালনা করে। গবেষণাটিতে জলবায়ু অর্থায়নের বিদ্যমান কাঠামো, সীমাবদ্ধতা এবং ওয়াশ খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার তুলে ধরা হয়েছে।
একই সঙ্গে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ ও একমি এআই যৌথভাবে তৈরি করেছে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট গ্রিন অ্যাকাউন্টেবিলিটি মনিটর, যা ওয়াশ খাতে জলবায়ু অর্থায়নের তথ্য মানচিত্রায়ন, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে আরও স্বচ্ছ, সহজপ্রাপ্য ও কার্যকর করবে। এই প্ল্যাটফর্ম নীতিনির্ধারক ও উন্নয়ন অংশীদারদের প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য লক্ষ্যভিত্তিক সম্পদ ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জাতীয় পর্যায়ের এই অনুষ্ঠানে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী, সুশীল সমাজ, একাডেমিয়া ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বক্তারা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মধ্যেও নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিস্থাপক ওয়াশ সেবা নিশ্চিত করতে সমন্বিত উদ্যোগ, শক্তিশালী নীতিমালা এবং উন্নত তথ্যব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মন্তব্য করুন