হুমায়ুন কবির, সাভার (ঢাকা)
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:১৭ এএম
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দিনে জ্বলে না চুলা, চলছে বাসা বদল

সাভার
দিনে জ্বলে না চুলা, চলছে বাসা বদল

রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র গ্যাস সংকট। এতে একদিকে যেমন ভোগান্তিতে পড়ছেন আবাসিক গ্যাস ব্যবহারকারীরা, অন্যদিকে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প কলকারখানার উৎপাদন। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের শিল্প খাত। এর বাইরে পর্যাপ্ত গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতেও গ্যাসের জন্য হাহাকার।

সরেজমিন সাভারের বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, দিনব্যাপী মিলছে না রান্নার জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস। এতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। অনেকেই রাতের নির্দিষ্ট একটি সময়ে সেরে নিচ্ছেন সারা দিনের রান্না, আবার অনেক কর্মজীবীকে দেখা গেছে বাইরে থেকে কিনে খাবার খেতে।

এ ব্যাপারে সাভারের ছায়াবীথি এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা অন্তরা জাহান বলেন, সারাদিন বাসায় গ্যাস থাকে না। রাতের দিকে কিছুটা গ্যাস পাওয়া যায়। তাই বাধ্য হয়ে অফিস শেষে বাসায় এসে রাতেই সারাদিনের রান্না সেরে রাখি।

আশুলিয়ার নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা আকলিমা আক্তার বলেন, বৈধ গ্যাস সংযোগ থাকার পরও ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছি না। তাই বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার গ্যাস এবং রাইস কুকারে রান্নার কাজ চালাচ্ছি। এই গ্যাস সংকটের কারণে আমার বাড়ির ভাড়াটিয়াদের অনেকেই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। আমি দ্রুত তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে এই সংকট সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

আশুলিয়ার ভাদাইল এলাকার বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী শিফাত মাহমুদ ফাহিম বলেন, সারাদিনই গ্যাস অল্প অল্প আসে। ঠিকমতো রান্নাও করা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে সকাল-দুপুরের খাবার বাইরেই সারতে হয়। রাতে কিছুটা গ্যাস থাকায় সামান্য রান্না করে চালানো যায়। অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের কারণে আমরা বৈধ লাইনের গ্রাহকরা গ্যাস পাচ্ছি না।

এদিকে এই শিল্পাঞ্চলের কারখানা মালিকরা বলছেন, সাভার ও আশুলিয়ায় ছোট-বড় মিলিয়ে কারখানা রয়েছে প্রায় দুই হাজার। এসব কারখানার জেনারেটর বা বয়লার চালানোর জন্য ১৫ পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে গ্যাসের চাপের ইউনিট) চাপের গ্যাস প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে তা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। চাপ সংকটের কারণে বিকল্প পদ্ধতিতে চলছে কারখানাগুলোর কার্যক্রম। এতে তাদের পণ্য উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে অনেক।

এ বিষয়ে সাভারের আল মুসলিম গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আবু রায়হান বলেন, শীত এলেই বাড়ে গ্যাস সংকট। আর এই কারণে আমাদের কারখানায় উৎপাদন চালিয়ে যেতে অনেক বেগ পেতে হয়। লাইনে গ্যাস না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় আমরা উৎপাদন চালিয়ে যাই। আর এতে আমাদের প্রতি মাসে প্রায় ৩ কোটি টাকা বেশি উৎপাদন খরচ হয়ে থাকে। আর আমাদের লাভের পরিমাণও কমে আসে অনেকটাই।

কলমা এলাকার উইন্টার ড্রেস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) মো. রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, গ্যাসের চাপ গত কয়েকদিন ধরে অনেক কম। এতে আমাদের পণ্য উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। যেটি আমাদের পোশাক খাতের জন্য হুমকিসরূপ। তাই আমি তিতাস গ্যাসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এই সংকট নিরসনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। এর পাশাপাশি অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের কারণে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে, গ্যাসের বৈধ ব্যবহারকারীরা সময়মতো পাচ্ছে না পর্যাপ্ত গ্যাস।

এদিকে একাধিক সিএনজিচালিত পরিবহনের চালকরা জানান, সম্প্রতি দিনের বেলা তো গ্যাস পাই না, রাতের বেলায় নিতে লাইনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পরও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ গ্যাস।

সাভারের এসএন সিএনজি ফিলিং স্টেশনে চুপচাপ বসেছিলেন রেন্ট এ কার চালক নুর আলী। তিনি কালবেলাকে বলেন, সকাল ১১টা থেকে বসে আছি। লাইনে গ্যাস নেই। কখন আসবে, তাও কেউ জানে না। গ্যাস না নিয়ে যাওয়ার তো কোনো উপায় নেই।

সাভারের বলিয়ারপুর এসএন সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক কাজি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এমনিতেই পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছি না আমরা। গ্যাসের মূল লাইনে চাপ স্বাভাবিকভাবে ১৮ থেকে ২০ পিএসআইজি পাই। কিন্তু এখন আমরা সেখানে ৩ থেকে ৫ পিএসআইজি পাচ্ছি। তবে রাতের বেলায় কিছুটা বেশি পেলেও চাহিদা ও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সব মিলিয়ে খুব বাজে সময় যাচ্ছে।’

এ ব্যাপারে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু সালেহ মো. খাদেম উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, এই সময় গ্যাসের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। চাহিদা অনুপাতে জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় এই সংকট দেখা দিয়েছে। তবে দ্রুতই এ সংকট নিরসনে আমরা কাজ করছি। কবে নাগাদ এই সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান হবে, সেটি বলা কঠিন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুঃসময় যেন পিছুই ছাড়ছে না পাক তারকা ক্রিকেটারের, এবার যেন হারাবেন পদটাই

হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ে যা জানা জরুরি

বিপাকে স্বরা ভাস্কর

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মাঝ আকাশে নগ্ন অবস্থায় ধরা বিমানবালা

মরদেহ দাফনের পর জীবিত ফিরে এলো রবিউল!

সারাক্ষণ চার্জার প্লাগে রাখেন? জেনে নিন কী হতে পারে

এশিয়া কাপে ভারতের একাদশ কেমন হবে, জানালেন তারকা ক্রিকেটার

বায়ুদূষণের শীর্ষে দুবাই, ঢাকার অবস্থান কত

মৌদিকে আদর্শগত শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করলেন বিজয়

১০

কেবিন ক্রুদের আসল কাজ কী

১১

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

১২

বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের বড় সুখবর দিল সরকার

১৩

জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে এবার আইপিএলে কাজ করা অ্যানালিস্ট

১৪

আমরা লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে : নেতানিয়াহু

১৫

৩ প্যাকেট কাঁচা নুডলস খেয়ে ১৩ বছরের কিশোরের করুণ পরিণতি

১৬

তিস্তার বন্যায় কৃষকের স্বপ্ন ভাসছে অনিশ্চয়তার অথৈ জলে

১৭

ব্যাংকিং টিপস / ব্যাংকের সুদের হার ও চার্জ সম্পর্কে সচেতন থাকুন

১৮

শতভাগ লুটপাটমুক্ত দল জামায়াতে ইসলামী : ড. মোবারক

১৯

মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে এসে মারা গেলেন ছেলেও

২০
X