মানুষের রোবোটিক জীবনের একঘেয়েমি ও মানসিক চাপকে দূরে রেখে মনে শৈথিল্য ফিরিয়ে আনে সিনেমা। সিনেমা এই জগতের মহাসমুদ্র হলো হলিউড। গুণগত মান, আধুনিক প্রযুক্তি, নিত্যনতুন সিনেমাটিগ্রাফ হলিউডকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। হলিউডের এই মহাসমুদ্র থেকে ছেঁকে সেরা সিনেমা বের করা নিতান্তই বোকামি। তবুও আইএমডিবিসহ বিভিন্ন মুভি রেটিং ডাটাবেসের তথ্যে কিছু সিনেমা আছে, যেগুলো সত্যিকার অর্থেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী। জনপ্রিয়তা, গুণমান বা পছন্দের শীর্ষে থাকা সিনেমাগুলো দর্শকের হৃদয়ে গেঁথে আছে যুগের পর যুগ। এরকম কিছু কালোত্তীর্ণ সিনেমা নিয়েই এ আয়োজন। লিখেছেন মো. মাজেদ হোসেন
দ্য গডফাদার
আমেরিকান মাফিয়া সাম্রাজ্যের এক আখ্যান ‘দ্য গডফাদার’। ১৯৭২ সালে মুক্তি পাওয়া কালজয়ী সিনেমাটি বিখ্যাত লেখক মারিও পুজোর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। সিনেমা ভালোবাসেন আর দীর্ঘদিন আইএমডিবিতে রাজত্ব করা ‘দ্য গডফাদার’ দেখেননি, এমন মানুষ পাওয়া দুর্লভ। আমেরিকান ক্রাইম আর মাফিয়ার জীবনযাত্রার ওপর নির্মিত ‘দ্য গডফাদার’ সিনেমার নির্মাণশৈলীতে নতুন একটি প্যাটার্ন তৈরি করে। এ সিনেমার মাধ্যমেই আল পাচিনোর মতো কালজয়ী অভিনেতাকে পায় সিনেপ্রেমীরা। আইডিএমবি রেটিংয়ে ৯.২ পাওয়া সিনেমাটি ক্রিটিক ও দর্শক উভয়ের দৃষ্টিতেই সর্বকালের অন্যতম সেরা। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ভিটো করেলওনের পরিবারের নেমে আসে দুর্ভোগ। এতে কাহিনিতে নতুন মোড় নিয়ে শুরু মাফিয়াদের মধ্যে নানামুখী অন্তর্ঘাত। সৃষ্টি হয় নতুন গডফাদারের।
দ্য পিয়েনিস্ট
যুদ্ধ মানুষের জীবনে নিয়ে আসে অভিশাপের বার্তা। মানুষের করুণ আর্তনাদ ফুটে ওঠে। রক্ত দেওয়া-নেওয়ার এক বীভৎস উৎসব চলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার সেসব দিন নিয়ে রোমান পোলানস্কি বানিয়েছেন ‘দ্য পিয়েনিস্ট’। হৃদয় হিম করা সিনেমাটির মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এক পিয়ানিস্টের জীবনে ঘটে যাওয়া করুণ কাহিনি পোলানস্কি অসম্ভব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। ‘দ্য পিয়েনিস্ট’ পৃথিবীবাসীকে দেখিয়েছে, কী নৃশংস ছিল যুদ্ধের সেসব দিনরাত। যুদ্ধ আর বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা, মানবিকতার গল্প, প্রতি মুহূর্তে টানটান উত্তেজনা—পর্দায় চোখ ধাঁধানো কাজ দেখিয়ে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে সিনেমাটি।
দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন
হলিউডে নির্মিত সর্বকালের অন্যতম সেরা সিনেমার প্রথম দিকেই থাকবে ১৯৯৪ সালে পর্দায় আসা ‘দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন’। আইএমডিবি রেটিংয়ে ৯.৩ রেটিং। সবচেয়ে বেশি দর্শকপ্রিয় সিনেমাটি নির্মাণের সময় পরিচালক ফ্রাঙ্ক ডারাবন্ট এমন এক ফর্মুলা ব্যবহার করেছেন, যা দেখে শুধু অবাকই হতে হয়। যতবারই দেখুক বিরক্তি হবে না কেউ, শুধু অবাকই হবে। মাস্টার পিস এ মুভিটি জেলখানা থেকে মুক্তির কাহিনি হলেও জেল পালানোর নয়। জীবন থেকে বাঁচার চেষ্টাই এই সিনেমার মূল বক্তব্য। পরকীয়ার জন্য স্ত্রী ও তার প্রেমিককে খুন করে মধ্যবয়স্ক এক ব্যাংক কর্মকর্তার নিকৃষ্টতম এক জেলে যাওয়া নিয়েই সিনেমার আবহ। যারা জীবনসংগ্রামের প্রেরণা বা মোটিভেশন চান, তাদের জন্য এটি একটি পারফেক্ট মুভি।
ফরেস্ট গাম্প
কমেডি-ড্রামা সিনেমা ফরেস্ট গাম্প ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায়। অসাধারণ এ সিনেমাটি অস্কারে ১৪টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে ৬টি বিভাগে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পায়। টম হ্যাঙ্কস কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮১ সালের কোনো একসময় বোকাসোকা সাদাসিদে ফরেস্ট গাম্প বাসস্ট্যান্ডে বসে এক অপরিচিত মহিলাকে নিজের জীবনের গল্প শোনায়। এভাবেই কাহিনি এগিয়ে চলে সর্বকালের অন্যতম সেরা এই হৃদয়নিংড়ানো সিনেমার। পুরো গল্পের উপস্থাপনা আর মূল বক্তব্যের ব্যতিক্রম আবহ সিনেমাটিকে করেছে উপভোগ্য। বছরের পর বছর হৃদয়ে গেঁথে থাকে এর কাহিনি। মরুভূমির জলদস্যু হিসেবে দুর্দান্ত করে টম হ্যাঙ্কস শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেন।
দ্য গুড দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি
১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ইতালিয়ান সিনেমা ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ তর্কসাপেক্ষে অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র। সিনেমাটিকে চূড়ান্ত ‘স্প্যাগেটি ওয়েস্টার্ন’, তাই ওয়েস্টার্ন সিনেমাপ্রেমীদের কাছে এটি সর্বকালের সেরা। ব্লন্ডি, এনজেল আইস আর টুসো—গুপ্তধন সন্ধানের লোমহর্ষক আর উপভোগ্য ঘটনা নিয়ে সিনেমাটি নির্মিত। ভালো, মন্দ আর কুৎসিত তিন চরিত্রের সমন্বয়ে ভালো, মন্দ আর কুৎসিত তিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাওয়া পুরো সিনেমাটি অত্যন্ত উপভোগ্য। সাসপেনশন, টানটান উত্তেজনা আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক—অনন্য সিনেমাটি সবাইকে ওয়েস্টার্ন পছন্দ করতে বাধ্য করবে। ৯ রেটিং পাওয়া সিনেমাটিতে শিক্ষার পাশাপাশি আছে দর্শন আর টার্নিং মেসেজ।
মন্তব্য করুন