প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু বাস্তব জীবনে নয়, সিনেমার পর্দায় এক চরম উত্তেজনা ও মানবিক আবেগের চিত্র তুলে ধরে। যখন ভূমিকম্প, সুনামি বা ঘূর্ণিঝড় হয় পর্দায়, তখন শুধু ধ্বংস নয়—মানুষের সাহস, আশা ও সহানুভূতির গল্পও সামনে আসে। তেমনই কিছু সিনেমার গল্প নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন। লিখেছেন, তামজিদ হোসেন
দ্য ডে আফটার টুমরো (২০০৪)
পরিচালক: রোল্যান্ড এমেরিখ
অভিনয়: ডেনিস কুয়েড, জেক জিলেনহল, এমি রসাম, সেলা ওয়ার্ড, ইয়ান হোম
চিত্রনাট্য: রোল্যান্ড এমেরিচ, জেফ্রি ন্যাকম্যানঅফ
জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ ফলাফল নিয়ে নির্মিত এই মহাকাব্যিক সিনেমায় আমরা দেখি কীভাবে পৃথিবী আবার এক বরফ যুগের দিকে ফিরে যায়। উত্তরের ঝড়, বরফাচ্ছন্ন শহর এবং এক বাবার তার ছেলেকে বাঁচাতে জীবন বাজি রাখা—সব মিলিয়ে এটি এক রুদ্ধশ্বাস অভিজ্ঞতা। এ ছাড়া এ সিনেমায় দেখানো হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর কেবল বিজ্ঞানের আলোচনা নয়—এটি মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি। পরিচালক রোল্যান্ড এমেরিখ এ গল্পে উঠে এসেছে শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়—মানবিক সম্পর্ক, রাজনৈতিক উদাসীনতা ও আত্মত্যাগের চিত্রও।
টুইস্টার ১৯৯৬
পরিচালক: ইয়ান ডে বন্ট
চিত্রনাট্য: মাইকেল ক্রিকটন, অ্যান-মেরি মার্টিন
অভিনয়: হেলেন হান্ট, বিল প্যাক্সটন, ক্যারি এলওয়েস, জ্যামি গার্টজ, ফিলিপ সেমুর হফম্যান
‘টুইস্টার’ এমন একটি সিনেমা, যা নব্বই দশকের মাঝামাঝি এসে দুর্যোগভিত্তিক ছবির ঘরানায় বিপ্লব ঘটায়। এটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ ও তা মোকাবিলায় নিয়োজিত বিজ্ঞানীদের জীবনঘনিষ্ঠ, ঝুঁকিপূর্ণ কাজকে কেন্দ্র করে নির্মিত। সিনেমার মূল চরিত্র ড. জো হার্ডিং (হেলেন হান্ট) এবং তার স্বামী বিল হার্ডিং (বিল প্যাক্সটন)। তারা উভয়েই ঘূর্ণিঝড় গবেষক—তথাকথিত ‘স্টর্ম চেজার’—যারা সরাসরি টর্নেডোর কাছে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন, যেন ভবিষ্যতে পূর্বাভাস আরও নিখুঁতভাবে দেওয়া যায়। এমনই একটি গল্প নিয়ে নির্মিত এ সিনেমায় দেখানো হয়েছে দুর্দান্ত ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট।
দ্য ইম্পসিবল (২০১২)
পরিচালক: জে এ বায়োনা
চিত্রনাট্য: সের্জিও জি সানচেজ
অভিনয়: নাওমি ওয়াটস, ইউয়ান ম্যাকগ্রেগর, টম হল্যান্ড, স্যামুয়েল জসলিন, ওকলে পেন্ডারগাস্ট
২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর, পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয়—ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট এক বিশাল ভূমিকম্প ও এর ফলে সৃষ্ট সুনামি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ দুর্যোগে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়। ‘দ্য ইম্পসিবল’ সিনেমাটি সেই ঘটনার ওপর নির্মিত এবং এটি একটি স্প্যানিশ পরিবারের বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
সান আন্দ্রেয়াস (২০১৫)
পরিচালক: ব্র্যাড পেইটন
চিত্রনাট্য: কার্লটন কিউস
অভিনয়: ডোয়েইন জনসন, কারলা গুগিনো, আলেক্সান্দ্রা ড্যাডারিও, পল জিয়ামাটি
সিনেমাটির নাম যেমন, গল্পের মূল কেন্দ্রবিন্দুও তাই ‘সান আন্দ্রেয়াস ফল্ট’, যা আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত একটি বিশাল ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। এ অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন যে, এখানে একদিন ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটবে—আর সেই আশঙ্কাকেই রূপ দিয়েছে সিনেমাটি। এর গল্পে দেখা যায় রে গেইন্স চরিত্রে (ডোয়েইন জনসন) একজন অভিজ্ঞ হেলিকপ্টার রেসকিউ পাইলট। ভূমিকম্প যখন ক্যালিফোর্নিয়াকে চিরে ফেলে, তখন গোটা শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এভাবেই এগিয়েছে সিনেমার গল্প।
দ্য ওয়েভ (২০১৫)
পরিচালক: রোর উথাগ
চিত্রনাট্য: কারে রাকে, হ্যারাল্ড রোসেনলো-এইগ
অভিনয়: ক্রিস্টোফার জনার, আন দাল থর্প, জোনাস হফ অফতেব্রো, ইডিথ হ্যাগেনরুদ-সান্দে
নরওয়ের একটি ছোট শহর যখন পাহাড় ধসে তৈরি হওয়া এক বিশাল সুনামির মুখে পড়ে, তখন একজন ভূতাত্ত্বিকের ভবিষ্যদ্বাণী আর তার পরিবারের বাঁচার চেষ্টার গল্প এ সিনেমাকে বাস্তবতাসম্পন্ন ও শ্বাসরুদ্ধকর করেছে। গল্পে দেখা যায় নরওয়ের ভূতাত্ত্বিকভাবে বিপজ্জনক শহর গেইরানজারে বসবাস করে এক ভূবিদ ও তার পরিবার। শহরটি ঘিরে আছে বিশাল পর্বত, যার গায়ে হঠাৎ করে ভূমিধস নামার সম্ভাবনা থাকে। এরপর হঠাৎ একদিন ভূবিদের আশঙ্কা সত্যি হয়—পর্বতের একাংশ ধসে পড়ে তারপর শুরু হয় পরিবারকে বাঁচানোর জন্য এক পিতার রুদ্ধশ্বাস লড়াই।
মন্তব্য করুন