তিব্বতের মালভূমিতে একটি বিশাল বাঁধ (সুপার ড্যাম) তৈরি করছে চীন। বাঁধটি নির্মিত হচ্ছে ইয়ারলুং সাংপো নদীর ওপর। নির্মিত হলে এটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ হতে পারে। আশা করা হচ্ছে, চীনের বর্তমান সবচেয়ে বড় বাঁধ থ্রি গর্জেস ড্যামের তুলনায় এ বাঁধ তিনগুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।
তবে এ প্রকল্প নিয়ে ভারত চিন্তিত। কারণ নদীটি তিব্বত থেকে ভারতের অরুণাচল ও আসাম হয়ে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়। ভারতের আশঙ্কা, বর্ষাকালে বাঁধ থেকে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিলে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে, আবার শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে রাখলে পানি সংকট দেখা দিতে পারে। এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও।
কিন্তু চীনের হোহাই বিশ্ববিদ্যালয় ও পানি মন্ত্রণালয়ের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, বাস্তবে এমনটা নাও হতে পারে। তারা বলছে, এ ধরনের ড্যাম পানি সংরক্ষণ করে শুষ্ক মৌসুমে বেশি পানি দেয় এবং বর্ষায় বন্যা কিছুটা কমিয়ে দেয়। ২০১৪ সাল থেকে দুটি বাঁধ (জ্যাংমু ও জিয়াচা) নিয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শুকনো সময়ের পানির প্রবাহ ৫০ শতাংশ বেড়েছে, আর বর্ষাকালে পানির চাপ কিছুটা কমেছে।
তবে গবেষকরা আরও বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর তাপমাত্রা ও পানির আচরণ বদলাচ্ছে। হিমবাহ বেশি গলে যাচ্ছে, পানি শীতকালে ঠান্ডা ও গরমকালে বেশি গরম হয়ে উঠছে। এতে মাছ ও জলজ প্রাণীর জীবনচক্রে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
এই গবেষণায় বলা হয়, ইয়ারলুং সাংপো নদী পরিবেশ ও জলবায়ু গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই নদী ও আশপাশের এলাকায় পরিবেশ-সমন্বিত পরিকল্পনা ও গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য এই বাঁধ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি দুই দেশের পানির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। তাই দুই দেশকেই এ বিষয়ে সতর্ক ও কৌশলী থাকতে হবে।
ইয়ারলুং সাংপো চীনের কুইংহাই-তিব্বত মালভূমি থেকে উৎপত্তি হয়ে ভারতের অরুণাচল হয়েছে সিয়াং। এরপর আসামে ব্রহ্মপুত্র নামে বাংলাদেশে এসে বঙ্গোপসাগরে মিশে গেছে। ফলে এ নদীর ওপর চীনের যে কোনো কার্যক্রম ভারত ও বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
গবেষকরা আশা প্রকাশ করেন, এ ধরনের গবেষণা নদী ব্যবস্থাপনার টেকসই কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি, ইয়ারলুং সাংপো নদী অববাহিকায় পানিসম্পদের যথাযথ ব্যবহারে সহায়ক হবে।
তথ্যসূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
মন্তব্য করুন