টেলিভিশন নাটকের অঙ্গনে যাহের আলভী আজ এক পরিচিত নাম। মিষ্টি হাসি, স্থির দৃষ্টি আর চরিত্রে প্রাণ ঢেলে দেওয়ার ক্ষমতা তাকে দিয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষ আসন। তবে এ আসন অর্জনের পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। মধ্যবিত্ত পরিবারের সীমাবদ্ধতা, লড়াই, প্রত্যাখ্যান—সব মিলিয়ে তিনি তৈরি করেছেন নিজের সাফল্যের গল্প। লিখেছেন রাজু আহমেদ
আপনার বেড়ে ওঠা কোথায়?
আমি মূলত জিওগ্রাফিক্যালি ঢাকাইয়া। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকাতে। আমার হোমটাউন নরসিংদী।
অভিনেতা যাহের আলভী। ছবি : সংগৃহীত
অনেকে আপনাকে রাগী মনে করেন। সত্যি কি?
আমি রাগী নই। বছরে এক দিন রাগী। কথা কম বলি, শুনতে বেশি পছন্দ করি। হয়তো এজন্যই কেউ মনে করতে পারেন আমি রাগী। আমার কাছে ভালো বক্তা হওয়ার চেয়ে ভালো শ্রোতা হওয়াটাই জরুরি।
আপনার ছেলে জুনিয়র আলভী কি নায়ক হবে বলে আশা করছেন?
আমি চাই আমার ছেলেও আমার মতো নায়ক হোক, অভিনেতা হোক। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এ চর্চাটা অনেক কমে গেছে। হলিউড-বলিউডে যেটা দেখি, বাংলাদেশেও ফিরিয়ে আনার ইচ্ছে আছে। যদি সে চায়, আমি চাই সে আমার থেকেও বড় নায়ক হোক।
অভিনেতা যাহের আলভী। ছবি : সংগৃহীত
মিডিয়াতে টিকে থাকার সিক্রেট কী?
মাটি কামড়ে রাখতে পারলেই হয়। পার্সোনালিটি গুরুত্বপূর্ণ, তবে লক্ষ্য নির্ধারণই বড় বিষয়। আমার লক্ষ্য ছিল প্রথম সারির নায়ক হওয়া, আর সেটা ধরে রাখা—এটাই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। দিনশেষে লেগে থাকতে হবে। এর বিকল্প কিছুই নেই।
প্রথম সারির হিরো হওয়ার স্বপ্ন পূর্ণ হলো কি?
সেটা জানি না। তবে স্বপ্ন দেখতে ভালো লাগে। আমি যে পথ বেছে নিয়েছি, সেই পথেই হাঁটছি। এটাই আমার জন্য অনেক বড় কিছু। আলহামদুলিল্লাহ।
অভিনেতা যাহের আলভী। ছবি : সংগৃহীত
অভিনয়ের বদলে ব্যবসা করতে পারতেন?
পারতাম। তবে ছোটবেলা থেকেই মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হওয়ায় পুঁজি ছিল না। নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য টিউশনি করেছি। তারপর ধীরে ধীরে শোবিজে আসার ইচ্ছে তৈরি হলো। ভাগ্যের খেলা, আমি নায়ক হয়েছি। মূলত গায়ক হতে এসেছিলাম।
আজকাল অনেক নায়ক নিজের নাটক প্রোডিউস করছেন, আপনার কারণ কী?
প্রোডিউসার অনেক আছে; কিন্তু তারা নিজের ভাবনা চাপিয়ে দেয়। আমি প্রোডিউস করি; কারণ আমার কিছু স্বপ্ন ও গল্প আছে, যেগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই। আমার ইনভেস্টের কারণে অনেককে কর্মসংস্থানও দিতে পেরেছি। এটাই আনন্দ দেয়—মানুষের পাশে থাকতে পারা।
আপনার হিট নাটকের সংখ্যা কত?
সাম্প্রতিক সময়ে তিনশর বেশি নাটক মিলিয়ন ভিউ ছাড়িয়েছে। এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
অভিনেতা যাহের আলভী। ছবি : সংগৃহীত
ওটিটি বা সিনেমায় কেন এখনো দেখা যায় না?
ওটিটির কাজের স্টাইল আমার কাছে শুট করে না। তাদের আলাদা একটা সিন্ডিকেট আছে, আলাদা দুনিয়া। আমি মনে করি, আমি সেখানকার জন্য পারফেক্ট নই। তবে সিনেমা করব, খুব দ্রুতই। অনেকদিন ধরে কথা চলছিল, এবার হয়তো বাস্তবায়ন হবে।
অভিনেতা যাহের আলভী। ছবি : সংগৃহীত
আপনি পাকিস্তানি সিরিয়াল বাংলাদেশে মুক্তির বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে ছিলেন। এর কারণ জানতে চাই...
আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমি একাত্তর বিশ্বাস করি। সে জায়গা থেকে আমার এ অবস্থান। আমি বলেছি, যেসব টিভি চ্যানেলে পাকিস্তানের সিরিজ বা নাটক চালাবে সেসব চ্যানেলে অভিনয় করব না। তবে আমি অভিনয় না করলে যে তাদের টিভি চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাবে—বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু এটাই আমার প্রতিবাদ। পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত এমন কোনো কাজ জীবিত অবস্থায় আমি করব না।
মন্তব্য করুন