

মডেলিং ও নাচের মঞ্চ দিয়ে যাত্রা শুরু, এরপর ছোট পর্দার গণ্ডি পেরিয়ে নিজেকে মেলে ধরেছেন বড় পর্দাতেও। শোবিজের সব মাধ্যমেই দাপিয়ে বেড়িয়েছেন আনিকা কবির শখ। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অর্জন করেছেন অগণিত দর্শকের ভালোবাসা। মাঝে কিছুটা বিরতি থাকলেও এখন পুরোদমে ব্যস্ত তিনি। তবে গ্ল্যামার আর লাইট-ক্যামেরার ব্যস্ততার মাঝেও নিজের ধর্মীয় অনুশাসন পালনে ভুল করেন না এই অভিনেত্রী। সম্প্রতি রোজা রেখেই শুটিং চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি, যা তার ভক্তদের জন্য এক নতুন বার্তা।
ধর্ম ও কর্মের মেলবন্ধন শুটিংয়ের ব্যস্ত শিডিউল, তার ওপর রোজা। বিষয়টি কতটা চ্যালেঞ্জিং? এমন প্রশ্নে শখের উত্তরটা বেশ সোজাসাপ্টা। ব্যক্তিগত ইবাদতকে তিনি প্রচারের আলোয় আনতে নারাজ। শুটিং সেটে রোজা রেখে কাজ করার বিষয়ে শখ বলেন, ‘আমি আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আসলে কথা বলতে চাই না। আমি সেটেও কাউকে বলিনি যে রোজা রেখেছি। আমরা তো আগে মানুষ! তাই আমাদের উচিত নিজেদের ধর্মের জায়গাটা ঠিক রাখা। আমি সেটাই করছি।’
ধারাবাহিকে ব্যস্ততা ও দর্শকের ভালোবাসা বর্তমানে শখের হাতে রয়েছে ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’, ‘রূপনগর’, ‘মায়া ফড়িং’সহ বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নাটক। এ ব্যস্ততা তিনি বেশ উপভোগ করছেন। দর্শকদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে উচ্ছ্বসিত শখ বলেন, ‘এত অল্প সময়ে আমাদের ধারাবাহিক নাটকগুলো এত রেসপন্স পাচ্ছে, দর্শক পছন্দ করছে—এটা সত্যিই দারুণ ব্যাপার। আমরা এখন যে পরিমাণ ব্যস্ত থাকি, টিভি খুলে ধারাবাহিক নাটক দেখার সময় আমাদের একেবারেই নেই। তারপরও আমরা দারুণ ভালোবাসা পাচ্ছি।’
নাচই প্রথম প্রেম; অভিনয় দিয়ে জনপ্রিয়তা পেলেও শখের মূল শেকড় কিন্তু নাচ। ছোটবেলা থেকে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি নাচের স্কুলেও নিয়মিত ছিলেন তিনি। শখের ভাষায়, ‘আমি যেহেতু নাচের মেয়ে, তাই নাচ নিয়ে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। ছোট ছোট নাচের ভিডিও তৈরি করছি। সামনে আরও কী করা যায়, তা নিয়ে ভাবছি। আর দেশের বাইরেও বেশ কিছু শো রয়েছে, সেগুলোতে অংশ নিতে যাব।’ শখ মনে করেন, নাচই তাকে আজকের ‘শখ’ হিসেবে গড়ে তুলেছে।
সিনেমায় ফেরা নিয়ে ভাবনা ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই মেগাস্টার শাকিব খানের বিপরীতে বড় পর্দায় দেখা গিয়েছিল শখকে। সে অভিজ্ঞতা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘যখন বড় পর্দায় কাজ করেছি, তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম। কাজের জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। মাত্রই কাজ বোঝা শুরু করেছি, ওই অবস্থাতেই ভাগ্যক্রমে শাকিব খানের সঙ্গে কাজের সুযোগ তৈরি হয়ে যায়।’
তবে এখন সময় বদলেছে। সিনেমার বর্তমান জোয়ারে গা ভাসাতে চান শখও। তবে শর্ত একটাই—ভালো গল্প ও নির্মাতা। তিনি বলেন, ‘এখন ফিল্মের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। অনেক ভালো গল্প ও ডিরেক্টর এসেছে। অবশ্যই সিনেমায় আবারও কাজ করব। তবে ভালো ডিরেক্টরকে ভালো গল্প নিয়ে আসতে হবে।’
বউ সাজ ও নস্টালজিয়া শীতকাল এলেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারকাদের ব্রাইডাল লুকের ছবি বেশি দেখা যায়। শখও এর ব্যতিক্রম নন। তবে মেকআপ আর্টিস্টদের কাছে শখ মানেই যেন পূর্ণাঙ্গ বাঙালি বধূ। এ প্রসঙ্গে শখ বলেন, ‘আমার ব্রাইডাল লুকের কোনো আলাদা ফ্যাসিনেশন নেই। কিন্তু মেকআপ আর্টিস্টরা কেন যেন আমাকে বউ সাজাতে খুব পছন্দ করেন। অনেকে বলেন, আমাকে যে কোনো মেকআপে সুন্দর লাগে এবং বিভিন্ন স্টাইলে বউ সাজানো যায়।’
কথায় কথায় উঠে আসে শুরুর দিনের স্মৃতি। শখ নস্টালজিক হয়ে বলেন, ‘আমরা একই সঙ্গে অনেকেই টিভিসি দিয়ে মিডিয়াতে আসি। সেখান থেকে আজকে আমরা স্টার হয়েছি। আমাদের অনেকেই আজ কাজ নিয়ে ব্যস্ত, কেউ বিজনেস করছে, আবার কেউ পরিবার সামলাচ্ছে।’
ইন্ডাস্ট্রির আলো-আঁধার বর্তমান ইন্ডাস্ট্রির কাজের পরিধি বাড়লেও নেতিবাচকতা নিয়েও কথা বলেন শখ। ওটিটি ও ইউটিউবের কল্যাণে কাজের সুযোগ বাড়লেও ‘সিন্ডিকেট’ কালচার তাকে ভাবিয়ে তোলে। শখ বলেন, ‘আগে নাটকের চ্যানেল কম ছিল, এখন বেড়েছে। তবে একই সঙ্গে নেগেটিভিটি আর সিন্ডিকেটও বেড়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে চাই, এসব না থাকাটাই ভালো। আমরা শিল্পীরা সবার জন্য কাজ করি। আমাদের মাঝে এসব ছোটখাটো খারাপ ব্যাপারগুলো না থাকলেই ভালো।’
অবসর ও আত্মসমালোচনা ব্যস্ততার ফাঁকে অবসর পেলে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন শখ। পছন্দের তালিকায় রয়েছে ভ্রমণ ও প্রচুর সিনেমা দেখা। পাশাপাশি তিনি একজন ভোজনরসিকও। তবে নিজের কাজের সবচেয়ে বড় সমালোচক তিনি নিজেই। শখ বলেন, ‘আমি আমার ভালো-খারাপ সব কাজই বারবার দেখি। এতে নিজেকে জাজ করা যায়, ভুলগুলো ধরা যায়। অনেক আগে থেকে মা আমার ভুল ধরিয়ে দিতেন। এখন আমার ছোট ভাইও মাঝেমধ্যে বলে—এ ডায়ালগটা এভাবে না বললে ভালো হতো।’
মন্তব্য করুন