ভারতীয় সংগীত পরিচালক শান্তনু মৈত্র। তার ওপরই ছিল ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ সিনেমার সংগীত পরিচালনার ভার। এ চলচ্চিত্রের ‘অচিন মাঝি’ গানটি এরই মধ্যে শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে। গতকাল শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ছবিটি। সেই সুবাদে দৈনিক কালবেলার সঙ্গে আলাপে মশগুল হয়ে ওঠেন বলিউডের এ মিউজিশিয়ান।
এবারই প্রথম বাংলাদেশে এলেন শান্তনু। কুশলাদি বিনিময়ের পর বললেন, “হোটেল থেকে সিনেমা হলে এলাম। এ দেশের পথে পথে, দেয়ালে দেয়ালে ‘মুজিব’ সিনেমার পোস্টার। একটি সিনেমা যখন এভাবে সেলিব্রেট হয়, তখন খুব ভালো লাগে। আমি খুবই খুশি যে, এ দেশে আসতে পেরেছি।”
বঙ্গবন্ধুর প্রতি এ দেশের মানুষের ভালোবাসা দেখে বেশ মুগ্ধ হয়েছেন তিনি। জাতির পিতাকে নিয়ে নির্মিত সিনেমায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারা এবং এমন একটি চলচ্চিত্রের সুবাদে বাংলাদেশে আসতে পারাকে নিজের সৌভাগ্য হিসেবে দেখছেন শান্তনু। বললেন, “আমার অনেক দিনের শখ ছিল বাংলাদেশে আসার। আমার বাবা কিন্তু রংপুরের। দেশ ভাগের পর ভারত চলে যান তিনি। ছোটবেলা থেকে আমি শুধু গল্পই শুনেছি বাংলাদেশের। ‘মুজিব’ সিনেমা নিয়ে আমি সোনার বাংলায় ঢুকলাম; এটা আমার ভাগ্যে ছিল।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন মানুষকে নিয়ে তৈরি সিনেমায় সংগীত পরিচালনা করাকে বেশ বড় দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করেছেন শান্তনু। এজন্য বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বেশ পড়াশোনা করতে হয়েছে তাকে। জাতির পিতার রাজনৈতিক ও পারিবারিক জীবন মুগ্ধ করেছে তাকে। কাজে নামার আগে পরামর্শ করে নিয়েছেন সিনেমার পরিচালক ভারতীয় নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের সঙ্গে। শান্তনু বলেন, ‘এটা আমার ওপর অনেক বড় একটি দায়িত্ব ছিল। পরিচালক আমাকে বললেন মুজিবকে ভালোভাবে চিনতে। আমি মুজিবকে ভালোভাবে বুঝতে তার বইগুলো পড়েছি। আমি চেয়েছিলাম এ সিনেমায় একটি অথেনটিক মিউজিক থাকুক। আসলে প্রতিটি সিনেমায় কাজ করতে গেলে প্রথমে ভয় করে, আমি চেষ্টা করেছি মুজিবকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারে এমন মিউজিক করতে। আমার জন্য এটি খুব বড় একটি সম্মান। কেননা, শেখ মুজিবুর রহমান পুরো পৃথিবীর।’
স্বনামধন্য এ সংগীত পরিচালক বলেন, ‘যিনি সাধারণ মানুষকে ভালোবাসেন এবং সাধারণ মানুষকে নিয়ে কাজ করেন, ইতিহাস তাকে দাবিয়ে রাখতে পারে না। শেখ মুজিবকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা হয়নি।’
বাংলাদেশে যেন শেখ মুজিবের মতো নেতা আরও জন্ম নেয় সেই প্রত্যাশা করলেন শান্তনু। তা ছাড়া এমন একটি সিনেমায় ভারতকে সঙ্গী করায় বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানালেন তিনি। বললেন, ‘এ সিনেমাটি ভারত ও বাংলাদেশের খুব সুন্দর একটি কোলাবরেশন। আমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে, বাংলাদেশ ভারতকে সুযোগ দিয়েছে এ সিনেমাটি করার জন্য।’ পরিশেষে তিনি বলেন, ‘এ সিনেমাটা দেখার পর কোনো একটা কারণে চোখ থেকে পানি ঝরে, এটিই এ সিনেমার জয়।’
সিনেমাটির ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্বে আছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার এ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন অতুল তিওয়ারি ও শামা জাইদি। এতে অ্যাকশন ডিরেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন ম্যাম কৌশল। সিনেমার পোশাক পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন পিয়া বেনেগাল।
শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় ছবিতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ। শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা, শেখ হাসিনার চরিত্রে নুসরাত ফারিয়া, তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে রিয়াজ আহমেদ অভিনয় করেছেন। অন্য চরিত্রে আছেন দিলারা জামান, চঞ্চল চৌধুরী, সিয়াম আহমেদ, জায়েদ খান, খায়রুল আলম সবুজ, ফেরদৌস আহমেদ, দীঘি, রাইসুল ইসলাম আসাদ, গাজী রাকায়েত, তৌকীর আহমেদ, মিশা সওদাগরসহ দেশের শতাধিক শিল্পী।