দেখতে দেখতে অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় সপ্তাহ শেষ হতে চলল, তবে এ সপ্তাহ ধরেই মেলা ছিল জমজমাট। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ছিল মেলার ১৯তম দিন। এদিন মেলায় ছিল স্বাভাবিক পাঠক-দর্শনার্থীদের ভিড়। এখন প্রতিদিনই মোটামুটি ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রয়কর্মীরা। আসলে কেমন কাটছে বইমেলার দিনগুলো।
অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ এ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা নিয়মিত পাঠক-দর্শনার্থীদের ভালো মানের বই সংগ্রহ করতে সহায়তা করছে তারা বিক্রয়কর্মী, বইমেলার অধিকাংশ স্টল ও প্যাভিলিয়ন গুলোতে খণ্ডকালীন বিক্রয়কর্মী হিসেবে নিয়োজিত এর অগ্রণী ভাগ শিক্ষার্থী যাদের অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজধানীর নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে কথা হয় অনিন্দ্য প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মী দায়িত্বে থাকা ইডেন কলেজের স্নাতক শিক্ষার্থী নূরী আক্তারের সঙ্গে। তিনি কালবেলাকে বলেন, আসলে বইমেলায় বইয়ের সঙ্গে থাকতে পারাটা আমার জন্য আনন্দের নতুন-নতুন বইয়ের গন্ধ এবং এত এত নতুন মানুষের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় সত্যি আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ, জীবনের এ সময় বইমেলায় বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। আমার কাছে কখনই বইমেলায় কাজ করার জন্য অর্থের চাহিদার বিষয় ছিল না তবে এখান থেকে যে পরিমাণ পারিশ্রমিক পাই তা আমার জন্য যথেষ্ট। আসলে এবারের বইমেলাটা আমার কাছে বেশ ব্যস্ততা ও শিক্ষণীয় সময় যাচ্ছে।
মেলায় মিজান পাবলিশার্সের বিক্রয়কর্মী শাতুলমণি বলেন, আমি আসলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বইমেলায় কাজ করার অভিজ্ঞতা বেশ দারুন। নানা রকম মানুষের সঙ্গে আলাপ হচ্ছে, তাদের রুচি ও চিন্তা সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছি। বই বিক্রি করতে করতে গিয়ে কত রকম বই সম্পর্কে জানতে পারছি তা বলে শেষ করা যাবে না। পড়াশোনার পাশাপাশি এই একমাস এক ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা হচ্ছে।
অবসর প্রকাশনীর আরেক বিক্রয়কর্মী জামিল বলেন, বইমেলায় কাজ করার অভিজ্ঞতা বেশ মজার তবে মাঝে মধ্যে বেশ অস্বস্তিকর পরিবেশে পড়তে হয় যখন কিছু মানুষ বই দেখতে এসে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পরে। এ ছাড়া বইমেলায় কাজ করে বেশ ভালোই লাগছে।
বইমেলায় বিক্রয়কর্মীদের কাজে খুশি প্রকাশকেরাও তারা বলছে, বইমেলায় আসলে আমাদের একমাস কিন্তু আমরা এই একমাস নির্ভর করি আমাদের বিক্রয়কর্মীদের তাদের জানা-বোঝা, আচার-আচারণের উপর আমাদের বিক্রি নির্ভর করে। বইমেলার স্টল ও প্যাভিলিয়ন গুলোতে যারা বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করে তাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে বাউন্ডুলে প্রকাশনীর প্রকাশক অনিন্দ্য দ্বীপ বলেন, অমর একুশের বইমেলায় বেশিরভাগ প্রকাশনীগুলো স্টল প্যাভিলিয়ন গুলোতে তরুণ শিক্ষার্থীরা বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করে। এই এক মাস আমরা প্রকাশকেরা তাদের উপর নির্ভরশীল। আজ বইমেলায় মোটামুটি পাঠক-দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে আশা করছি আজ বিক্রি ভালো হবে। কথা প্রকাশের প্যাভিলিয়ন ব্যবস্থাপক মোহম্মদ ইউনূস বলেন, গত পাঁচ বছর যাবত বইমেলায় আমাদের প্যাভিলিয়নে যে সকল বিক্রয়কর্মী ছিল বা আছে তাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। তাদের মাধ্যমে আমরা সার্ভিস ভালো পাই বলেই আমরা অধিকাংশ সময় তাদের খণ্ডকালীন বিক্রয়কর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকি। এই এক মাস তারা আমাদের ক্রেতাদের নিয়মিত সেবা দিয়ে থাকে। এসব তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর কাজে ও আচরণে আমাদের প্যাভিলিয়নে অনেক পাঠক-দর্শনার্থী বই কিনে এমন রেকর্ডও আছে।
ইত্যাদি প্রকাশনীর প্রকাশক আদিত্য অন্তর বলেন, বইমেলায় আমাদের প্যাভিলিয়নে যে সকল বিক্রয়কর্মী আছে তাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। তাদের কাজে আমি বেশ খুশি।
বইমেলা ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ প্রকাশনার স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে বিক্রয়কর্মী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আধিক্য বেশি। তবে এদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ছিল চোখে পড়ার মত।
মন্তব্য করুন