অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৪৫তম সভায় এ কথা বলেন তিনি। সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের (বিডা) চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, পূর্বে ব্যয়ের মহোৎসব করার বাজেট ছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য আয়-ব্যয়ের স্থিতি ঠিক করে লক্ষ্যভিত্তিক বাজেট বাস্তবায়ন করা। বিগত আমলে ব্যবসায়ীরা সম্মুখসারিতে থেকে দুর্বৃত্তায়নে সহযোগিতা করেছে বলেও অভিযোগ করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
এ সময় বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বলেন, সরকারকে ব্যবসা থেকে সরিয়ে ব্যবসায়ীদেরকে ব্যবসার সুযোগ তৈরি করে দিতে চেষ্টা করছে বিডা।
এদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মামলার আসামি ১৪ জন কর্মকর্তা এবং নতুন করে ৮ জন রয়েছেন। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) কমিশন সভায় হঠাৎ করেই তাদের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিএসইসির একাধিক কর্মকর্তা বরখাস্তের চিঠি হাতে পাওয়ার বিষয়ে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামি ১৪ কর্মকর্তার সঙ্গে নতুন করে আরও ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এর মধ্যে ৩ জন পরিচালক, ১ জন অতিরিক্ত পরিচালক, ২ জন সহকারী পরিচালক এবং ২ জন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা। এছাড়াও ২ জন মহিলা কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ জন সহকারী পরিচালক ও ১ জন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও)।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম কালবেলাকে বলেন, এটি কমিশনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।
বরখাস্ত হওয়া বিএসইসির এক পরিচালক কালবেলাকে বলেন, আগে থেকে এজেন্ডা ঠিক না করে কমিশন সভায় হঠাৎ করেই ২২ জনকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে মামলার আসামি ১৪ জনও আছেন।
বিএসইসির আরেক কর্মকর্তা বলেন, কমিশন সভায় গতকাল এমন একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে শুনেছিলাম। আজ অফিস অর্ডার হাতে পেলাম।
গত ৪ মার্চ বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কমিশন। কমিশনের দাবি, তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব থাকাকালে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও কমিশন আরও অনেক কর্মকর্তাকে বিভিন্ন ইস্যুতে শোকজ করে। অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানা যায়।
এ ঘটনায় বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ তৈরি হয়। সাইফুর রহমানকে অবসরে পাঠানোর পরের দিন বুধবার কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে কথা বলতে চেয়ারম্যান-কমিশনারদের ফ্লোরে সমবেত হন। তবে চেয়ারম্যান-কমিশনারদের দাবি, কর্মকর্তারা তাদের অবরুদ্ধ করেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় চেয়ারম্যান-কমিশনাররা কার্যালয় ত্যাগ করেন।
পরের দিন বৃহস্পতিবারও কর্মকর্তারা কর্মবিরতি পালন করেন। তবে এদিন বিএসইসি চেয়ারম্যান তার গানম্যান আশিকুর রহমানকে দিয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় বিএসইসির ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করান। এর মধ্যে সাইফুর রহমানকে আগেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আরেক নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম পদত্যাগ করেন। বাকি ১৪ কর্মকর্তা জামিন নিয়ে কাজে ফিরেছিলেন। গত ২১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় সেই মামলায় কর্মকর্তাদের জামিনও হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে ১৪ জনসহ আরও ৮ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন রাশেদ মাকসুদের কমিশন।
বিএসইসির মামলায় আসামিরা হলেন- বিএসইসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান (৫৮), নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম (৫৭), নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম (৫৪), পরিচালক আবু রায়হান মো. মোহতাছিন বিল্লা (৫১), অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম (৫০), যুগ্ম পরিচালক রাশেদুল ইসলাম (৪৮), উপপরিচালক বনী ইয়ামিন (৪৫), উপপরিচালক আল ইসলাম (৩৮), উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম (৪২), উপপরিচালক তৌহিদুল ইসলাম (৩২), সহকারী পরিচালক জনি হোসেন (৩১), সহকারী পরিচালক রায়হান কবীর (৩০), সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন (৩০), সহকারী পরিচালক আবদুল বাতেন (৩২), লাইব্রেরিয়ান মো. সেলিম রেজা বাপ্পী (৩১) এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবু ইউসুফ (২৯)।
মন্তব্য করুন