ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, বর্তমানে বৈশ্বিক খেলা শিল্পের বাজার ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হলেও বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ৭৭ মিলিয়ন। প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার অভাব, কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ শুল্ক হার, বন্ডেড সুবিধার অনুপস্থিতি, অপ্রতুল অবকাঠামো, টেস্টিং সুবিধার অপর্যাপ্ততা প্রভৃতির কারণে এ শিল্পের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, উদ্ভাবনী কার্যক্রমে শিক্ষাখাতের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয় বাড়াতে হবে।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ডিসিসিআই আয়োজিত ‘রপ্তানি বহুমুখীকরণ; খেলনা উৎপাদন শিল্পে উদ্ভাবন এবং রপ্তানির সম্ভাবনা’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (কাস্টমস: নীতি ও আইটি) মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর এবং বাংলাদেশস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর মার্টিন ডওসন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি এবং জালালাবাদ পলিমারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহমেদ।
তাসকীন আহমেদ বলেন, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের বিষয়টি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিগত বছরগুলোতে আমাদের রপ্তানি গুটিকয়েক পণ্যের উপর অধিকমাত্রায় নির্ভরশীল। খেলানা সামগ্রী রপ্তানির বৈশ্বিক বাজার ১০২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেটি ২০২৩০ সালে ১৫০ বিলিয়নে পৌঁছাবে, সেখানে এখাতে আমাদের রপ্তানি মাত্র ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের অনুপস্থিতি, টেস্টিং সুবিধার অপ্রতুলতা, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকারের সীমাবদ্ধতা, ব্যবহৃত কার্চামালে আমদানি নির্ভরতা ও আমদানি পণ্যের উপর উচ্চ শুল্কারোপ, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং সহায়ক নীতিমালার অভাবে এখাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
এনবিআরের সদস্য মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে তৈরি পোষাকের পাশাপাশি সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতের উপর নজর দিতে হবে, এলক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সহজীকরণ ও বন্ডেড সুবিধা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালে প্রণীত ট্যারিফ নীতিমালার অনুসারে রাজস্ব বিভাগ শুল্ক আরোপ করে থাকে এবং এক্ষেত্রে বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর কিছু সুপারিশ থাকে, যা মেনে চলতে হয়। অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে কোন নীতি সহায়তা পরিবর্তনের তেমন সুযোগ নেই, তবে আগামী বছরে বাজেট প্রণয়নে এখাতের প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদানের বিষয়টি সরকারের বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর মার্টিন ডওসন বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত খেলনা পণ্য রপ্তানির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং ব্রিটিশ সরকার এ খাতে সহযোগিতা করতে বেশ আগ্রহী। বিদ্যমান নীতিমালার সংষ্কার ও প্রতিবন্ধকতা নিরসন করা সম্ভব হলে ব্রিটেনে এ খাতের পণ্যের রপ্তানি আরও বহুগুন বাড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি জানান, ব্রিটিশ সরকার সম্প্রতি রুলস অব অরিজিনের শর্তাবলী সহজীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের তার দেশে পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণে সহযোগিতা করবে। তিনি উল্লেখ করেন, এনবিআর শিল্পখাতের কাঁচামালের কাস্টম্স ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া সহজীকরণ সহ অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা নিরসন করেছে, যা বাংলাদেশের সামিগ্রক রপ্তানি সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বিপিজিএমইএ সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, প্লাস্টিক খাতে বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ২৫০টি খেলনা সামগ্রী উৎপাদনের সাথে জড়িত এবং এখাতে প্রায় ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষ কর্মরত রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এখাতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং দেশের আভ্যন্তরীণ বাজারের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খেলান সামগ্রী রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৫ দশমিক ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৮টি দেশে রপ্তানির মাধ্যমে তা ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তবে পণ্যের মান নিশ্চিতকরণ, অপ্রতুল অবকাঠমো, গবেষণা কার্যক্রমের অনুপস্থিতি এবং নতুন পণ্যের ডিজাইন উদ্ভাবনে পিছিয়ে থাকা প্রভৃতি বিষয়সমূহের কারণে এখাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানটির নির্ধারিত আলোচনায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের পরিচালক ড. অশোক কুমার রয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের জয়েন্ট চিফ (ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেট ডিভিশন) মো. মামুন-উর রশিদ আসকারী, গোল্ডেন সন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহেমদ, কাপকেক এক্সপোটার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াসির ওবায়েদ, প্রেমিয়াফ্লেক্স প্লাস্টিকস লিমিটেডের ডেপুটি এক্সিকিউটি ডিরেক্টর মো. আনিসুর রহমান, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (বর্জ্য এবং কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা) ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, আমান প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রির প্রোপাইটর আমান উল্ল্যাহ, হ্যাসি টাইগার কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মুসা বিন তারেক এবং রেডমিন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক অংশগ্রহণ করেন।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিনিধিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন