বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ডিম, আলু ও পেঁয়াজ আমদানির প্রভাবে অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যগুলোর দাম কমেছে। আর এটি প্রমাণ করে অসাধুচক্র কারসাজির মাধ্যমে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) সকালে টিসিবির নভেম্বর মাসের কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন। এ সময় নিত্যপণ্যের বাজার সিন্ডিকেটের মাথায় বাড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলতে বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২ ওয়ার্ডের আবুজর গিফারী কলেজসংলগ্ন পিডব্লিউডি কোয়ার্টার অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, ওযার্ড কাউন্সিলর মামুন রশিদ শুভ্র। এ সময় ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মাঝে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ করা হয়। চলতি বছরের মধ্যে পর্যাক্রমে দেশব্যাপী এক কোটি কার্ডধারীদের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছানো হবে বলে জানিয়েছেন টিসিবির চেয়ারম্যান। এর জন্য কাউকে কোনো টাকা দিতে হবে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, স্মার্টকার্ড ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলে কোথাও কোনো অবস্থাপনা থাকবে না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের সাড়ে তিন কোটি মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে। কিন্তু আমাদের টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি গরিব মানুষকে সহায়তা করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে পাঁচ কোটি মানুষ উপকার ভোগ করছেন।
বর্তমান সময়েকে ভীষণ খারাপ সময় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি ও জিনিসপত্রের দামে বিশ্ব অর্থনীতি খারপ যাচ্ছে। এতে আমাদেরও সমস্যা হচ্ছে।
পেঁয়াজের উচ্চ মূল্যের প্রসঙ্গে বলেন, পেঁয়াজের যে চাহিদা তার ৮০ ভাগ দেশে উৎপাদন হয়। ২০ ভাগ আমদানি করতে হয়। এর ৯০ ভাগ ভারত থেকে আসে। কয়েক মাস আগে তারা অভ্যন্তরীণ বাজার সুরক্ষায় পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। পরবর্তীতে কয়েক দিন আগে তারা রপ্তানির মূল্য নির্ধারণ (প্রতি টন ৮০০ ডলার) করে। এতে আমাদানিতেই দাম বেড়ে গেছে। তবে আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। তখন পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
আলুর প্রসঙ্গে বলেন, উৎপদনের হিসাবে ২৭ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থাকার কথা। কিন্তু আমরা সেটির সঠিক চিত্র দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের হিমাগার এবং মাঠ তথ্যের মধ্যে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। এটি হতে পারে ভোগের চাহিদা ও বাজার ব্যবস্থাপনার তথ্যের পার্থক্য। যাই হোক, মাত্র ৬৮ হাজার টন আমদানি আলু বাজারে আসার পরেই দাম কমতে শুরু করেছে। এর মানে সত্যিই অসাধু ব্যবসায়ীরা বারবার সুযোগ নিয়েছে।
এ ছাড়া দেড় মাস চেষ্টা করার পর গত সপ্তাহে আমরা ডিম আমদানি করতে পারলাম। সেক্ষেত্রেও দেকা গেলে ডিমের দামে ভীষণভাবে প্রভাব পড়েছে। আমরা যে ১২ টাকা দামের ডিম বিক্রির কথা বলেছিলাম এখন তা সম্ভব হচ্ছে।
মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির এ সময়ে বিশ্ব যখন নাকালা অবস্থা, তখন বাংলাদেশের জনগণের জন্য প্রধানমন্ত্রী করোনা-পরবর্তী সময়ে থেকে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির কার্যক্রম চালু করেন। শুধু ফ্যামিলি কার্ড নয়, বয়স্ক ও বিধবাভাতসহ আরও অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম তিনি করে যাচ্ছেন।
নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে পণ্য সরবরাহ করা হলেও বাজার সিন্ডিকেটের কানে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়ানো হচ্ছে। কখনো কাঁচা মরিচ, ডিম, পেঁয়াজ, আলু। আলু উৎপাদনে যেখানে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সেখানে কীভাবে আলুর দাম এত চড়া হতে পারে! এটি গ্রহণযোগ্য না। সিন্ডিকেটের মাথায় বাড়ি দিয়ে ভেঙে দিতে হবে। কারণ এসব গোষ্ঠী প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের উদ্যোগকে ব্যর্থ করার জন্য এবং দেশের মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশে কোনো সিন্ডিকেটের জায়গা হবে না।
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর প্রধানমন্ত্রী মার্চ মাস থেকে সারা দেশের ১ কোটি পরিবারকে খাদ্য সরবরাহ নির্দেশ দিয়েছেন। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। এতদিন সাধারণ পদ্ধতিতে কার্যক্রম চললেও এখন ডিজিটাল কার্ডের মাধ্যমে করা হবে। টিসিবির ডিলার মেসার্স জে কে ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. মনির হোসেন জামদ্দারের সহযোগিতায় কার্যক্রমে স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, নিত্যপণ্যের বাজার দর নিয়ন্ত্রণে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতায় সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। বেশি দামে কিনতে হচ্ছে আলু, পেঁয়াজ, ডিম, চিনিসহ অন্যান্য নিত্য পণ্য। বর্তমান বাজারে ভোক্তারা প্রতি কেজি আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকা, আমদানি পেঁয়াজ মানভেদে ১০০ থেকে ১১০ টাকা, ডিমের হালি (বাদামি) ৪৮ থেকে ৫০ টাকা এবং খোলা চিনির কেজি কিনতে হচ্ছে ১৪০ টাকায়।
এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় প্রতি মাসে এক কোটি উপকারভোগী কার্ডধারী পরিবারের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবি ১০০ টাকা দরে ২ লিটার সয়াবিন বা রাইসব্রান অয়েল, ৬০ টাকা দরে ২ কেজি মসুর ডাল, ৩০ টাকা দরে ৫ কেজি চাল এবং প্রাপ্যতা সাপেক্ষে ৭০ টাকা দরে ১ কেজি চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন